নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীর প্রধান ৭টি খাল খনন ও উদ্ধারের কাজ শুরু
দখল-দূষণের কবলে হারিয়ে যাওয়া বরিশাল নগরীর ২৪টি খালের মধ্যে প্রধান ৭টি খালের প্রাণ ফেরাতে খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর ফলে নগরীর কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া আমানতগঞ্জ, জেলখাল, রূপাতলী খাল, পলাশপুর খাল, সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল এবং ভাটারখাল দীর্ঘদিন পরে হলেও অস্তিত্ব ফিরে পেতে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বরিশাল-৫ (সিটি-সদর) আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ও সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর প্রচেষ্টায় খালগুলো পুনরায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। একইসঙ্গে ম্যাপ অনুযায়ী উদ্ধার হচ্ছে দখলকৃত খালের পাড়। খনন কাজ শেষ হলে নগরীর প্রায় সাড়ে ৫ লাখ বাসিন্দা জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি পাবে। পর্যায়ক্রমে নগরীর মধ্যে থাকা ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ছোটবড় ৪৬ খালও আসবে সংস্কারের আওতায়।
জানা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে বরিশালে ৪৬টি খালের অস্তিত্ব ছিল। তবে স্বাধীনতা পরবর্তীতে তা কমে দাঁড়ায় ২৪টিতে। বর্তমানে বড়-ছোট মিলিয়ে টিকে থাকা ২৪টি খালও পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। দখল-দূষণ আর অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে টিকে থাকা খালগুলো মরাখালে পতিত হচ্ছে। আর হারিয়ে গেছে ২২টি খাল। এরমধ্যে এখন প্রাথমিকভাবে ৭টি প্রধান খালের খনন শুরু হওয়ায় আনন্দে ভাসছে ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বরিশাল নগরীর ৭টি খাল খননে ৬ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় পলাশপুর খাল (১ কিলোমিটার ৭০০ মিটার), ১ কোটি ৯ লাখ টাকায়, আমানতগঞ্জ খাল (২ কিলোমিটার ৫০ মিটার) ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকায়, সাগরদী খাল (৯ কিলোমিটার) ২৮ লাখ টাকায়, রুপাতলী খাল (১ কিলোমিটার) ৩২ লাখ টাকায়, চাঁদমারি খাল (১ কিলোমিটার ৪২১ মিটার) ৪ লাখ টাকায়, ভাটার খাল (১৬০ মিটার) ও ২৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকায় জেল খালের (২ কিলোমিটার) সর্বমোট ১৯ কিলোমিটারে পানি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা মাহিমুল হাসান এমদাদ বলেন, বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিক জোয়ারে খাল উপচে সড়কে হাঁটুপানি জমে থাকে। ফলে তখন আমাদের যাতায়াতসহ স্বাভাবিক কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এখন খাল খনন হলে হয়তো ওই দুর্ভোগ থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলবে।
তিনি আরও বলেন, খাল খননের পাশাপাশি এই এলাকার সড়কগুলো উঁচু করে নির্মাণ না করলে সমস্যা থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই খাল খননের পাশাপাশি সড়কও উঁচু করে নির্মাণের দাবি জানান তিনিসহ ওই এলাকার বাসিন্দারা।বরিশাল নগরীর বয়স্ক বাসিন্দা এম এস জামান মনোজ বলেন, এক সময় খালের পানি দিয়ে চা বানানো হতো, এখন তা শুধুই স্মৃতি। এখন খাল খনন করা হলে কীর্তনখোলা নদীর জোয়ার-ভাটার পানি প্রবাহিত হয়ে সেই পানি ফিরে আসবে। আর জলাব্দতা থেকে আমরা মুক্তি পাবো। এটাই আনন্দের খবর।
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওলিদ বলেন, ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর কাজ শুরু হয়েছে। যা নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হবে। কাজ শেষ হলে আগামী বৃষ্টি মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী।
এই ৭টি খাল খনন ও উদ্ধারের জন্য ২০২২ সালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম উদ্যোগ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করতে গেলে বাধ সাধেন তৎকালীন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। অবশেষে সেই বাধা বিপত্তি কাটিয়ে নবনির্বচিত মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সহায়তায় খাল খনন কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।