নিউজ ডেস্ক :: এক তরুণীকে চাকরি বাঁচানোর জন্য বিয়ে করে রাস্তায় ফেলে চলে যান, ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম।
গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ওসি সৈয়দ মিজানুর ইসলাম এক সময় মানিকগঞ্জে বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ওই সময়ে পরিচয় হয় অত্র এলাকার এক তরুণীর সঙ্গে। এরপর তার সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। তা রূপ নেয় প্রেমের সম্পর্কে। ওসির স্ত্রী তাতে বাদ সাধেন, তরুণীকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। এতে ওই তরুণী পরিবারের পছন্দে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন গত সপ্তাহে; কিন্তু ‘প্রেমিক’ ওসি মিজান তাকে বিয়ের আসর থেকেই তুলে নিয়ে গাজীপুরে একটি রিসোর্টে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে গতকাল ওই তরুণীকে পুলিশ উদ্ধার করেছে।
ওই তরুণী সাংবাদিকদের জানান , তার বাড়ি মানিকগঞ্জ। সৈয়দ মিজানুর ইসলাম যখন মানিকগঞ্জের সদর থানার ওসি ছিলেন, তখন তার সঙ্গে পরিচয়। তিনি প্রথমে বিয়ের কথা লুকিয়ে রেখে আমার সঙ্গে দীর্ঘ ৪ বছর সম্পর্ক রেখেছেন। যখন সবকিছু জানতে পারি, তখন সরে আসতে চাই; কিন্তু তিনি আমাকে বিরক্ত করতে থাকেন। মিজানের প্রথম স্ত্রী আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেন। আমাকে মারার জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করেন বলেও শুনেছি। এসব জানার পর আমি কোনোভাবেই মিজানের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চাইনি।
তিনি বলেন, ৭ দিন আগে আমার আরেক জায়গায় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলছিল। সেখান থেকে আমাকে তুলে নিয়ে এসে গাজীপুরে একটি রিসোর্টে আটকে রাখেন। এরপর আমি বিষয়টি আমার পরিচিতজনের মাধ্যমে পুলিশের বড় কর্মকর্তাদের জানাই। এরপর তিনি চাকরি বাঁচানোর জন্য বৃহস্পতিবার আমাকে বিয়ে করেন। বিয়ে করে আমাকে রাস্তায় ফেলে চলে যান। বৃহস্পতিবার সারা রাত থানায় ছিলাম, আমার কোনো খোঁজ নেয়নি। আমার মা আমাকে গাজীপুর থেকে নিতে এসে এসব শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন আমাকে আর আমার মাকে জোর করে আটকে রেখেছেন, যেন এসপিকে গিয়ে বলি এসব মিথ্যা। তিনি মোবাইলে প্রতিনিয়ত আমাকে হুমকি দিচ্ছেন।
গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরেনের একটি ঘটনা লোকমুখে শুনেছেন। কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ওসির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, ওসি মিজান ওই তরুণীকে তুলে শালবন গ্রিনভিউ রিসোর্টে রেখেছিলেন। তরুণী বারবার তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাসায় যেতে চাপ দেন মিজানকে। নইলে বিষয়টি পুলিশের বড় কর্তাদের জানানো হবে বলেও হুমকি দেন। এরপর বৃহস্পতিবার তাকে রিসোর্টেই বিয়ে করেন মিজান। তবে শুক্রবার মিজানের প্রথম স্ত্রী ঘটনা জেনে যান। এরপর রিসোর্টে এসে তরুণীকে মারধর করেন। এরপর মিজান অন্য পুলিশ দিয়ে তাকে হাসপাতালে পাঠান।
বিষয়টি জানতে ওসি মিজানুর ইসলামকে ফোন দিলেও তিনি তা ধরেননি। তবে জয়দেবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম বলেন, ওসিকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে থানায় প্রত্যাহারের কাগজ এসেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন থানার ওসিদের একযোগে বদলির আদেশ দেন নির্বাচন কমিশন। ওই সময় সৈয়দ মিজানুর ইসলাম মানিকগঞ্জ সদর থানা থেকে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানায় বদলি হয়ে আসেন। জয়দেবপুর থানায় আসার পরও ওই তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন।