নিজস্ব প্রতিবেদক :: উজিরপুর উপজেলার কলেজছাত্র শহিদুল ইসলাম সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের আবেদন জমা দেওয়ার লাইনে। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেনের হাতে জমা দেওয়ার পর তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিতে টিক দিয়ে জানালেন, পরিচয়পত্রের ভেরিফিকেশন আনতে হবে।
শহিদুল তার সঙ্গে থাকা পরিচয়পত্রের মূলকপি বের করে দেখালেও কর্মকর্তা নাছোড়বান্দা। সেখান থেকে বেরিয়ে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে ২১০ টাকায় সত্যায়িত জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি নিয়ে যখন ফিরে এলেন ততক্ষণে দেড়টা বেজে গেছে, পাসপোর্টের আবেদন নেওয়া বন্ধ। শহিদুল কর্মকর্তা মোশারেফের সঙ্গে দেখা করে ফাইলের বিষয়ে আলাপ করলে তিনি জানান, বরিশাল জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভেরিফিকেশন করলে হবে না। এটি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে করে আনতে হবে। নির্বাচন অফিস জেলা আর উপজেলার মধ্যে পার্থক্য কী জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা রাগ করে শহিদুলকে রুম থেকে বের করে দেন।
শহিদুল ইসলাম বলেন সাংবাদিকদের বলেন , তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। পাসপোর্ট অফিস থেকে বেরিয়ে আসার সময় দুইজন লোক আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এলেন। তারা সম্ভবত দালাল।
এমন অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন মেহেন্দীগঞ্জের বাসিন্দা আতিকুর রহমানও। তিনি বলেন, আমি সবকিছু ঠিক করে ফাইল জমা দেওয়ার পর কাউন্টার থেকে ফাইল ফেরত দেওয়া হলো। শেষে যখন বের হচ্ছিলাম তখন কয়েকজন লোক বলছিল, ভাই ফাইল ফেরত দিয়েছে? আপনি তো লাইনে বা সিস্টেমে নাই। লাইনে এলে লাইনেও দাঁড়াতে হবে না। বুঝলাম টাকা দিলে এখানে সব হয়। ঠিক তাই, দালালকে দেড় হাজার টাকা বেশি দিলাম। আধা ঘণ্টার মধ্যে আমার কাজ ক্লিয়ার।
বরিশাল বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে এমন নীরব ফাঁদ পাতা রয়েছে সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য। অফিসের কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাতে ফাইল ফেরত দিয়ে দালালদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করেন। শুধু দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারী নন পাসপোর্ট অফিসের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ, আনসার সদস্যদেরও প্রকাশ্যে টাকা নিতে দেখা গেছে। এদেরকে ‘পার্টি’ ধরিয়ে দেয় পাসপোর্ট অফিসের সামনে ও আশপাশের কম্পিউটারের দোকানগুলো। এরা মিলেই শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তোলেছেন। সহজে ও ভোগান্তি ছাড়া কাজ করতে এই সিন্ডিকেটের দ্বারস্থ হতেই হয়। এটাকেই ‘লাইন’ বলা হয়। সকল কার্যক্রম ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করলেও অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়ে না কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেনের চোখে। অভিযোগ রয়েছে, প্রধান এই কর্মকর্তার মৌন সমর্থনেই অনিয়ম, হয়রানি চরম আকার ধারণ করেছে পাসপোর্ট অফিসে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েও অনিয়মের চিত্র পাল্টাতে পারেনি।
লাইনে আসতেই হবে
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা, সরকারি ব্রজমোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফজলুল হক নিজের পাসপোর্টের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং স্ত্রী-সন্তানের পাসপোর্ট করাতে এসেছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে ফাইল জমা দেওয়ার পর প্রায় তিন ঘণ্টা চলে গেলেও তার নাম ডাকা হচ্ছিল না। দুপুর ১টার দিকে তার নাম ডাকলেও তার স্ত্রী এবং সন্তানের নাম ডাকছে না দেখে পুনরায় কাউন্টারে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরেন তিনি। তারপর লাইনে দাঁড়ানো সকলের নাম ডাকলেও তাদের বাকি দুজনের নাম ডাকছে না।
ফজলুল হক বলেন, পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীরা আমাকে বলেছিল তিনটি পাসপোর্টে সরকার নির্ধারিত টাকার বাইরে প্রতিটিতে দুই হাজার টাকা করে অর্থাৎ তিনটিতে ৬ হাজার টাকা দিতে। এতে আমার কোনো ভোগান্তি হবে না। সব কাজ তারা করে দেবে। কিন্তু আমি রাজি হইনি। শেষে ঘুষ কিছুটা ছাড় দেয়, আমাকে প্রস্তাব দেয় পাঁচ হাজার টাকা দিতে। আমি তাতেও রাজি হইনি। এজন্য আমাকে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ওরা হয়ত চাইছে, বিভিন্ন ছুতোয় ওদের লাইনে নিতে।
ঠিক তার বিপরীত চিত্র জানালেন ঢাকার বাসিন্দা জাহিদ হোসেন। ঢাকায় থাকলেও তার মূল বাড়ি মেহেন্দীগঞ্জে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাড়াহুড়ো করে আসায় আমি ইউনিয়ন সার্টিফিকেট আনতে পারিনি। বিষয়টি নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের এক স্যারের সঙ্গে কথা বললাম। তিনি একটি কম্পিউটারের দোকান দেখিয়ে দিলেন। সব সমস্যার সমাধান। ওই দোকান থেকে আমার ফাইল রেডি করে দিয়েছে। দেখলাম আরেক ইউনিয়নের প্রত্যয়ন আমার ফাইলে দিয়ে দিয়েছে। তাতেই কাজ হয়ে গেছে। শুধু নির্ধারিত টাকার চেয়ে চার হাজার টাকা বেশি লেগেছে। সমস্যা নেই, নেই কোনো ভোগান্তি।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক অফিসের একটা পালস আছে। সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। এই অফিসে লাইনে আসতেই হবে।
বড় চেয়ারও ভাগ পায়
পাসপোর্ট অফিসের মুখেই ফিশারি রোড। সেখানে ইট, খোয়া, বালুর দোকান রফিকুল ইসলামের। তিনি এখন পুরোপুরি পাসপোর্ট করান। দোকানে বড় বড় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে অপেক্ষায় থাকেন ‘পার্টি’র। পরিচয় গোপন রেখে কথা হয় রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র, চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলরের সনদ আর টাকা নিয়ে আসবেন। সব কাজ গুছিয়ে দেব। পুলিশ ভেরিফিকেশনের টাকা যদি পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তি দেয় তাহলে সাড়ে সাত হাজার টাকা দিলেই চলবে। আর ভেরিফিকেশনের দায়িত্ব আমার ওপর দিলে ৮/৯ হাজার টাকা লাগবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিসে আমার যাওয়াও লাগবে না। ফাইলের ওপর একটা চিহ্ন দিয়া দিমু। দেখবেন সবার আগে আপনার কাজ হয়ে গেছে। কাজ হবে না কেন, ভাগ তো সবাই পায়।’
পাশের দোকান আবিদা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি, ওয়েস্টার্ন কম্পিউটার, আইডিয়াল ফটোকপি, ফ্রেন্ডস কর্নারসহ মুকুন্দ দাসের কালীবাড়ি লাগোয়া কয়েকটি ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের আশপাশে মিলিয়ে পঞ্চাশটির মতো কম্পিউটারের দোকানে পাসপোর্টের কাজ করানো হয়। আরও কয়েকটি দোকানে যোগাযোগ করা হলে তারাও একইভাবে আশ্বস্ত করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনজন দোকানি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সমঝোতা আছে। আমরা যতগুলো ফাইল ধরি তার ভাগ তাদেরও দিই। যে ফাইলে দুই হাজার টাকা আয় সেখানে তাদের পাঁচ শ দিতে হয়। শুধু যে ছোট কর্মকর্তারা টাকা নেয় তা নয়, বড় চেয়ারেও ভাগ যায়।
টাকা দিলে খুশি হন আনসার-পুলিশ
কাউন্টার থেকে একের পর এক ফাইল ফেরত দিচ্ছিলেন মোশারেফ হোসেন। ফেরত ফাইলগুলোর সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন দায়িত্ব পালনকারী আনসার সদস্য আল মামুন, সৌরভ ও রফিক। খুবই ব্যস্ততার মধ্যে তারা চার-পাঁচজন করে সেবাপ্রত্যাশীদের নিয়ে যান পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য বানানো ব্যারাকে। পশ্চিমের গেটের পাশেই সেই ঘর। সেখানে নিয়ে ফাইলের সমস্যা শোনেন আর সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে দেন। প্রয়োজনে নিজে গিয়ে ফাইল জমা দেন তারা। বিনিময়ে খুশি করতে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দিতে হয়।
আনসার সদস্য সৌরভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফাইলে সমস্যা হলে লোকেরা আমাদের সাহায্য নেন। আমরা পারলে সাহায্য করি। এতে কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে আমরা নিই।
সরেজমিনে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাতজনের কাছ থেকে টাকা নিতে দেখা গেছে। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন আনসার সদস্যরা। ঢাকা পোস্টকে তারা বলেন, খুবই ছোট পদে আমরা চাকরি করি। মাসিক বেতন যা পাই তাতে সংসার চলে না। এজন্য বাধ্য হয়েই দু-একটা ফাইল ধরি। তাতে যা পাই আমরা তা ভাগ করে নিই।
নামেই নির্ধারিত ফি
পাসপোর্ট অফিস কম্পাউন্ডে সিটিজেন চার্টারে বিস্তারিত লেখা রয়েছে। উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেনের নাম ও মোবাইল নম্বরসহ এই চার্টারে উল্লেখ আছে পাসপোর্টের নিয়মাবলি। টাকার অঙ্কে উল্লেখ করা হয়েছে, অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ৪৮ পৃষ্ঠার এবং পাঁচ বছর মেয়াদসহ নিয়মিত পাসপোর্ট করতে ৪ হাজার ২৫ টাকা (বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে ১৫% ভ্যাটসহ) ফি জমা দিতে হবে। এই পাসপোর্ট পেতে ১৫ থেকে ২১ দিন অপেক্ষা করতে হবে। আর জরুরি পাসপোর্ট করতে লাগবে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৭ থেকে ১০ দিন। অন্যদিকে ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে অতীব জরুরি পাসপোর্ট পেতে চাইলে দিতে হবে ৮ হাজার ৫০ টাকা। এ ছাড়া ৪৮ পৃষ্ঠার এবং দশ বছর মেয়াদসহ নিয়মিত পাসপোর্ট করতে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা লাগবে। এই পাসপোর্ট পেতে অপেক্ষা করতে হবে ১৫ থেকে ২১ দিন। আর ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে জরুরি পাসপোর্ট পেতে চাইলে ফি দিতে হবে ৮ হাজার ৫০ টাকা। এর বাইরে অতীব জরুরি পাসপোর্ট ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে নিতে চাইলে শুধু ফি গুনতে হবে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা।
সরকারি চাকরিজীবী যাদের এনওসি, অবসর সনদ (পিআরএল) রয়েছে তারা নিয়মিত ফি জমা দেওয়া সাপেক্ষে জরুরি সুবিধা/জরুরি ফি জমা দেওয়া সাপেক্ষে অতীব জরুরি সুবিধা পাবেন। পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ ব্যাংক চালান প্রযোজ্য।
এদিকে নির্ধারিত ফি ছাড়াও অনলাইন ফি বাবদ ৩০০ টাকা এবং পাসপোর্টের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে দোকানগুলো অতিরিক্ত আরও এক হাজার টাকা নিয়ে থাকে। আর নতুন ও অসচেতন ব্যক্তিরা মারাত্মক হয়রানির শিকার হন।
বরিশাল সদরের বাসিন্দা জিয়াদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বোনের বাড়ি মেট্রোপলিটন বন্দর থানায়। ফরম পূরণের সময়ে ভুলে বাবার বাড়ির ঠিকানা কোতোয়ালি থানা উল্লেখ করেছে। সেটি পরিবর্তন করতে এসেছিলেন তিনি। তাকে পাসপোর্ট অফিস থেকে কেউ একজন বলেছেন ১০ হাজার টাকা লাগবে। এজন্য আমি এলাম। এখন বলছে নতুন করে ভেরিফিকেশন লাগবে। আবার আবেদন করতে বলেছে।
এই ভুক্তভোগী বলেন, আমরা ঠিক জানতাম না কত টাকা লাগবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে আবেদন আর সার্বিক কাজ করিয়েছি। তাতে ১০ হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছে।
পুলিশ ভেরিফিকেশনে বকশিশ
পাসপোর্ট নিতে এসেছেন ইমরান ব্যাপারী নামের হিজলার এক বাসিন্দা। সঙ্গে তার বন্ধু রিপন। দুজনই জানালেন, ভেরিফিকেশনে এক হাজার করে টাকা দিয়েছেন। ঢাকা পোস্টকে ইমরান ব্যাপারী বলেন, টাকা না দিলে ভেরিফিকেশনে ভুলভাল করে রাখে। তাছাড়া যে পুলিশ সদস্য গেছেন আমার কাছে তিনি নিজেই মোটরসাইকেলের তেল খরচ বাবদ দুই হাজার টাকা চেয়েছেন। আমি এক হাজার দিয়ে বিদায় করেছি।
রিপন নামে এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, আমার কাছে পুলিশ সদস্যকে আসতে হয়নি। মোবাইলে কল করেছে। আমি তার বিকাশ নম্বর এনে এক হাজার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। ভেরিফিকেশন রিপোর্ট দিয়ে দিয়েছেন। আজ এলাম পাসপোর্ট নিতে।
লাইনে দাঁড়ায় দালাল
নারী ও প্রতিবন্ধীদের ছবি সংগ্রহ, আঙুলের ছাপ নেওয়ার নির্ধারিত কক্ষে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন পুরুষ। অন্য দুটি কক্ষে পুরুষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত হলেও সেখানেও উপচে পড়া ভিড়। ঠিক কোন লাইনে দাঁড়াবেন তা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না মোরশেদা বেগম। তিনি বলেন, এই অফিসে কোনো শৃঙ্খলা নেই। নারীদের কক্ষে পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। তার ওপর পাসপোর্ট অফিসের স্টাফরা কিছুক্ষণ পরপর এসে তাদের লোক হাত ধরিয়ে ক্যামেরার সামনে বসিয়ে দিয়ে যান। আমি এক ঘণ্টা ধরে ঘুরছি। কোথাও চান্স পাচ্ছি না।
সেই লাইনেই একটি ফাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহাদাৎ নামের এক যুবক। ফাইলের ছবি আর তার চেহারা মিলছিল না। বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, নিজের পাসপোর্ট করতে আসেননি। একটা লিংকে তিনি কাজ করেন। আজকে ফাইল দিয়ে যাবে। যার ফাইল তিনি এসে তার সুবিধামতো ছবি, আঙুলের ছাপ দিয়ে যাবেন।
শাহাদাৎ সাংবাদিকদের বলেন , দিনে ৩/৪টি কাজ পাই এভাবে। আর পাসপোর্ট অফিসের সকলেই আমাদের চেনে। আমরাই তো তাদের ‘পার্টি’ এনে দিই।
সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
পাসপোর্ট অফিসে সাংবাদিক প্রবেশে নীরব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছেন কার্যালয়টির প্রধান কর্মকর্তা। তার অনুমতি ছাড়া কোনো সাংবাদিক প্রবেশ করলে তাকে ডেকে নিয়ে জেরা করেন। এ ছাড়া পুলিশ ও আনসার সদস্য দিয়ে বের করে দেন কম্পাউন্ড থেকে। এমন অভিযোগেরও সত্যতা পাওয়া গেছে রোববার। সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহকালে খবর চলে যায় উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেনের কাছে। তিনি কার্যালয়ে না থাকলেও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় দেখেছেন বলে স্বীকার করেন। প্রথমে আনসার সদস্য আল মামুনকে পাঠিয়ে নিশ্চিত হন। এরপর আরেক কর্মকর্তা বাসুদেব ঘোষকে পাঠিয়ে প্রতিবেদককে বের হয়ে যেতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পর শামীম ওরফে হাসান নামের এক কর্মচারীকে পাঠিয়ে সহকারী পরিচালক আবুল বাসারের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।
উত্তেজিত হয়ে আবুল বাশার বলেন, পাসপোর্ট অফিসে আপনার কী কাজ? এখানে ঘোরাঘুরি করছেন কেন? আপনার জন্য স্যার আমাকে মোবাইল করেছেন। আপনাকে বের হয়ে যেতে বলেছেন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে উপ-পরিচালক আবু নোমান মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, আমি তো বুঝি না আপনি কেন পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন। আর আপনি এসেছেন তা আমার সঙ্গে আগে কথা বলবেন না? পজিটিভ-নেগেটিভ নয় এটি পাবলিক সেক্টর তো; বরিশালের এমন কোনো সরকারি অফিস নেই যেখানে ‘ই’ নেই। নোয়াখালীসহ অন্যান্য এলাকায় পাসপোর্ট যেভাবে করে, বরিশালে সেই সংখ্যক মানুষ পাসপোর্ট করে না।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন। তখন আবু নোমান মো. জাকির হোসেন আশ্বস্ত করেছিলেন, অনিয়ম রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন তিনি। কিন্তু পূর্বের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি সরকারি এই অফিসটিতে।