নিজস্ব প্রতিবেদক :: ধাক্কা দিয়ে চালু করতে হয় ববির বিআরটিসি বাস
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিআরটিসি বাসগুলো নাজেহাল অবস্থা। কখনো কখনো বাস নিজে থেকে চালু হয় না। বিআরটিসি বাস চালু করতে দিতে হয় ধাক্কা। কাগজে-কলমে ফিটনেস থাকলেও বাস্তবে ভিন্ন অবস্থা বাসগুলোর। তবে কয়েকটি বাসে ফিটনেস রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বরিশাল ক্লাবের এক নম্বর রুটের চার, পাঁচ ও ছয় নম্বর বাস।
গত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বরিশাল ক্লাব এক নম্বর রুটের পাঁচ নম্বর বাস ধাক্কা দিয়ে চালু করতে হয়। ধাক্কা দেওয়ার একটি ভিডিও রয়েছে এই প্রতিবেদকের কাছে। সেখানে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষার্থীরা মিলে বাসটি চালু করতে দিচ্ছেন ধাক্কা। এমন দৃশ্য প্রায় দেখা যায় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বরিশাল ক্লাব থেকে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে ছেড়ে আসার কথা বিআরটিসি ৫ নম্বর বাসটি। বিপত্তি বাধে ইঞ্জিন চালু নিয়ে। পরে শিক্ষার্থীরা বাসটি ধাক্কা দিয়ে চালু করে। এর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালে বিআরটিসির একতল ও দ্বিতল বাসের ফিটনেস নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
পরে বাসের চেহারা পরিবর্তন হলেও ভিতরগত সমস্যার পরিবর্তন হয়নি। ফলে, বিপাকে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কারণ অনেকের ক্লাস ও পরীক্ষার সময় নিয়ে থাকতে হয় সংশয়। বরিশালের নতুল্লাবাদের তিন নম্বর রুটে সাত, আট, নয়, দশ ও এগারো নম্বর দ্বিতলা বাস চলে।এ রুটে বাসের কিছুটা সমস্যা থাকলেও তা কাটিয়ে উঠেছে। তবে বর্ষার সময়ে দ্বিতল বাসে বৃষ্টির পানি ফুটো দিয়ে ভীতরে প্রবেশ করতে দেখা যেত। নতুন করে পরিবহন পুলে তিনটি বাস যুক্ত হলেও রয়েছে পরিবহন সংকট। এদিকে চালকের স্বল্পতা ও পরিবহন সংকটের কথাও জানায় শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের সহকারী প্রকৌশলী (ট্রান্সপোর্ট) মো. জাহিদ হাসান জানান, বিআরটিসি বাসগুলো ভাড়া নেওয়া। চালক ও মেরামত সবকিছু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন দেখে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব বাস আছে মোট ২২টি। তার মধ্যে ৫২ সিটের বড় বাস ৬টি। আর বিআরটিসি দ্বিতল বাস ৭৫ আসনের ৭টি ও ৫২ আসনের তিনটি বাস রয়েছে। যেগুলো বিআরটিসিদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস থাকার কথা ৩৫টি, সেখানে রয়েছে ২২টি। করোনাকালীন সময়ে ব্যয় সংকোচ নীতির কারণে বাসগুলো ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। তবে পরবর্তীতে কয়েকটি বাস পরিবহন পুলে যুক্ত হয়েছে। এ ছাড়া পরিবহনের ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) থেকে চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতল বাস ও বড় বাস প্রয়োজনমতো নিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ।পরিবহন পুলের তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থী অনুপাতে বাস সংখ্যা পর্যাপ্ত হলেও শিক্ষার্থী ও চালকরা বলছেন ভিন্ন কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চালক জানান, দিনের শেষের দিকের ট্রিপগুলোতে গাড়ি ওভারলোড হয়ে যায়। ফলে গাড়ি চালাতেও বেশ ভোগ পোহাতে হয় আমাগো। ২৮ সিটের মিনিবাসে যখন ৫৬ থেকে ৫৮ জন উঠে তখন অনেক সতর্ক হয়ে ড্রাইভিং করতে হয়। নতুন বাজার রুটের তো আরো করুণ দশা। অনেকে বাসের মধ্যে জায়গা না পেয়ে উঠতেই পারে না। ঝুলে ঝুলে যায় শিক্ষার্থীরাবরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান শোভন জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। আমরা না হয় বাসটা একটু ঠেলেই দিলাম। ফিটনেসবিহীন এই বাস বন্ধের দিনে পার্টটাইম কাজ করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে চলার সময় ঠেলা বা ধাক্কা দেওয়া লাগে! আবার ঠেলে কারা? যারা এই বাসে ওঠার জন্য মুদ্রা বিনিময় করে। যাইহোক, এই বিআরটিসি বাসগুলো মেরামত বা পরিবর্তন করা জরুরি। না হলে ব্রিজের ঢালে যে কোনো সময় ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ২২টি বাসের বিপরীতে ১০ হাজার শিক্ষার্থী কোনোভাবেই পর্যাপ্ত না। আবার শিক্ষক-কর্মকর্তারাও সেবা পাচ্ছে এই ২২টি বাসের অন্তর্ভুক্ত বাস দিয়েই। যদিও কিছুটা সংকট কাটিয়ে উঠেছে। নতুন বাস যুক্ত হয়েছে। তবে বিআরটিসি বাসগুলোর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।কারণ এটা এক-একটা লক্কড়ঝক্কড় বাস। শুধু আমতলা থেকে যেতে ২০ মিনিট লাগে। শিক্ষার্থীদের সময়ের তো কোনো মূল্য নেই। দুর্ঘটনা ঘটার আগেই বাসগুলো মেরামত বা পরিবর্তন করা জরুরি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিবহনের কাজে নিয়োজিত বড় বাস ‘ধানসিঁড়ি’ দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। সেটি মেরামতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বিআরটিসি বাসের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজস্ব বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করার কথাও জানায় তারা।
ধানসিঁড়ি বাস ও মেরামতের ব্যাপারে পরিবহন পুলের একটি সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে আমাদের প্রতিবছর গাড়ি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক লক্ষ টাকা বাজেট দেওয়া হয়। আর ‘ধানসিঁড়ি’ বাসের অবস্থা একটু বেশি খারাপ। এটি মেরামত করতে যে অর্থের প্রয়োজন তা নতুন একটি বাস ক্রয় করা সম্ভব।গাড়িটির ইঞ্জিন ভালো আছে। তবে ইউজিসিকে দুবার চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ধানসিঁড়ি বাসের অর্থের বরাদ্দ আসলে সেটি দ্রুত মেরামত করা সম্ভব। নবনিযুক্ত উপাচার্য মহোদয় রুটিন দায়িত্বের সময় ‘জয়ন্তী’ বাস পরিবহন পুলে যুক্ত করেন। তারপরেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাস বৃদ্ধি করার স্বার্থে ইউজিসিকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।
বিআরটিসি বাসের ব্যাপারে পরিবহন পুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার মো. মেহেদী হাসান বলেন, বিআরটিসি বাসগুলো ভাড়ায় নিয়ে চালায় আমরা। প্রতিমাসে তাদেরকে টাকা দিতে হয়। ধাক্কা দিয়ে বাস চালু করতে হয় এমন বিষয় সম্প্রতি আমার জানা নেই। কেউ জানাইনি আমাকে। তবে এক মাস আগে আমাকে অবগত করেছিল। আমি তখন বিআরটিসিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি যাতে এটি সমাধান করা যায়। আর এখন আপনার থেকে জানলাম। আমি বিষয়টি তাদেরকে অবহিত করে সমাধান করার জন্য বলব।