রবিউল ইসলাম রবি :: জোট সরকারের শাসনামলে দেশজুড়ে আলোচিত বরিশালে নির্যাতিত এক হিন্দু পরিবার আ.লীগ সরকার শাসনামলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সহযোগিতা না পেয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর সাহায্যেসহ ন্যায় বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। বুধবার (২০ মার্চ) বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম এবং সোমবার (১৮ মার্চ) বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুব উল্লাহ মজুমদার আবেদন করেছেন পবিত্র কুমার মিস্ত্রী ও তার স্ত্রী পারুল বালা। তারা বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের রাজারচর গ্রামের বাসিন্দা। তাদের বসবাস করা জমি থাকলে পুরানো জরাজীর্ণ বসতঘরের স্থানে নতুন ঘর নিমার্ণ ও মালিকানা জমির সীমানা চিহ্নিত করার জন্য সকল তথ্য দিয়ে আবেদন করেছেন।
উপরোক্ত আবেদনের পূর্বে নির্যাতিত এ পরিবারটি গত ২৭ ফেব্রুয়ারী বেলা বেলা সাড়ে ১২ টায় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি (বিআরইউ) বীর মুক্তিযোদ্ধা-শহীদ জননী সাহান আরা বেগম স্মৃতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন। ক'দিন পর সরেজমিন পরিদর্শনকালে অসহায় হিন্দু পরিবারের তথ্য-উপাথ্য পর্যালেচনায় জানা গেছে নানা তথ্য। নব্বই দশকে নগরীর আলেকান্দা পশ্চিম বগুড়া রোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মৃত. রজনীকান্ত মিস্ত্রীর পুত্র পবিত্র কুমার মিস্ত্রী শহর ছেড়ে চরমোনাই রাজারচর গ্রামে ৫২ শতাংশ জমি ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন। সেই নব্বই দশকে নিমার্ণ করা বসতঘরটির টিনগুলোর সিংহ ভাগ স্থানেই ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টি আসলে ঘরের উপরে থাকা টিনের চালার সব স্থান থেকে পানি পড়ে। গত ৪/৫ বছর ধরে টিনের উপর পলিথিন দিয়ে বসবাস করে আসছেন। বর্তমানে টিনের উপর উঠে পলিথিন দেয়া মুসকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যে কোন সময় টিনের চালা ভেঙ্গে যেতে পারে। বসতঘর উত্তোলনের জন্য নিজেদের জমি থাকলেও অর্থের অভাবে নতুন ঘর উঠাতে পারছেন না। সংসারে ২ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ে মারা গেছে। ২ ছেলেই দিনমজুর। অসুস্থ ১ ছেলে ঢাকা থাকে,তার স্ত্রীর চাকুরীতে সংসার চলে।
পবিত্র কুমার মিস্ত্রী বলেন, জোট সরকারের শাসনামলে গত ২০০১ সালে ১৩ অক্টোবর রাতে তার ১৩ বছরের নাবালিকা মেয়ে, স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী বোন গণধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনাটি দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মামলা দিলেও সুবিচার পাইনি। কারণ, সেই সময়ে ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি সমর্থিত থাকায় এবং তার এক আত্মীয় এ মামলায় আসামী হওয়ায় সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। ঘটনার পরবর্তী সরকার শাসনামলে সাবেক প্রয়াত মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বরিশাল সিটির সাবেক প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ কে নির্যাতিত পরিবারকে আইনগত ও রাজনৈতিক সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তখনকার সময় এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে আ.লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ২০১০ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে বরিশাল সার্কিট হাউজে বসে ‘ধর্ষণের শিকার পরিবারটিকে গাভী, সেলাই মেশিন ও চাকুরীর আশ্বাস দিয়েছিলেন দিয়েছিলেন’। যা ছবিসহ একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। সেই থেকে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র আ.লীগ নেতা অ্যাড. বলরাম পোদ্দার ঘটনার কয়েক মাস পর ১০ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। তাছাড়া আমি বা আমার পরিবার আর কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি। বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করতেছি।
তিনি আরো বলেন, অভাব অনটনে থাকার মধ্যে প্রতিপক্ষরা আমার জমি জোরপূর্বক দখলে নিতে চায়। ইতোমধ্যে প্রতিপক্ষ আমার জমির গাছ কেটে নিয়ে গেছে। তাছাড়া তার জমিতে টয়লেট ও নাড়ার পালা নির্মাণ করেছে।এ ঘটনার অনুকূলে তিনি গত ০৫/০৩/২০২৪ইং তারিখে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। যার তদন্তে রয়েছে এসআই মুস্তাফিজ। সরেজমিন পরিদর্শন করে তদন্তকারী কর্মকর্তাও ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেন, বিবাদীদের থানায় ডাকা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ থানায় আসেনি।
পারুল বালা বলেন, ধর্ষণ মামলার আইনজীবী মারা যাবার পর তারা আদারতে যান না। কারণ, বিএনপি শাসনামলে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে অনেক মানুষ বাড়ি এসে গুজব ছড়িয়ে দেয় ঘটনার মিমাংসা হয়ে গেছে। তারপর মেডিকেল থেকে শুরু করে সব খানে গিয়ে র্দুব্যবহার পেয়েছি। তাই কোন খানে আর যাইনি। আমার সাথে যা হয়েছে তা মিথ্যা নয়। ওই দিন রাতে নাবালিকা মেয়েটি হাঁটতে পারেনি। অজ্ঞান রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেছি। সেই মেয়েকে সাহায্যসহ চাকুরী দেবার কথা ছিল। পরে ধার দেনা করে অনেক অর্থ ব্যয় করে মেয়েকে বিয়েও দিয়েছিলাম। কিন্ত বিয়ের ৩/৪ বছর পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে মেয়েটি। সেই মেয়েসহ আরো এক মেয়েকে হারিয়েছি। এখন চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। প্রায় সবই হারিয়েছি। শুধু বসতঘরসহ কাগজপত্রানুযায়ী জমি বুঝে পেলেই শান্তিতে মরতে পারবো।
বিষয়গুলো নিয়ে এলাকার একাধিক ব্যক্তির সাথে আলোচনা করলেও প্রকােেশ্য কেউ কিছু বলতে রাজি নন।