ঢাকাবুধবার , ৩০ অক্টোবর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ফুটবল জাদুকর দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনার জন্মদিন আজ

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
অক্টোবর ৩০, ২০২৪ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

খেলাধুলা ডেস্ক :: ফুটবল জাদুকর দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনার জন্মদিন আজ।

একা হাতে (পায়ে) যে দেশকে দুনিয়াসেরা ট্রফি এনে দেয়া যায়, বিশ্ব তা প্রথম দেখেছিল একজন ফুটবল জাদুকরের সৌজন্যে। নাম তার দিয়াগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। যার বাম পায়ে বল থাকলে ফুটবলপ্রেমীদের চোখ আটকে যেতো। কখনও হয়ে যেতো ছানাবড়া! একজন ফুটবলার জাদুকরের মতো দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন বছরের পর বছর। আজকের আর্জেন্টিনার বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তার মূল কারিগর যিনি, তিনিই ম্যারাডোনা।

সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে ম্যারাডোনার স্থান কতটা ওপরে? ফিফার বিচারে সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে। তবে জনতার রায় ম্যারাডোনার তীরে। অনেকের মতে, সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া লিওনেল মেসির চেয়েও এগিয়ে তিনি। কেন তাকে ‘ফুটবল ঈশ্বর’ মনে করা হয়, তার খেলা না দেখলে বোঝা অসম্ভব। তিনি সাত-আটজনকে ‘মামুলি’ কাটিয়ে শতাব্দির সেরা গোল করতে জানেন, রেফারির চোখ এড়িয়ে হাত দিয়ে গোল করেও হন ব্যাপক সমালোচিত। গোলাকার বল যেন তার আশির্বাদপুষ্ট, একান্ত শিষ্য।

কারও কাছে তিনি সাক্ষাত ঈশ্বর, কারও কাছে তিনি বিদ্রোহী। কেউ আবার তাকে ডাকে ফুটবলের ‘চে’। যেভাবেই বিশেষায়িত করা হোক না কেন, তিনি ম্যারাডোনা। বল পায়ে চিতার বেগে দৌড়ানো, বডি ডজ দিয়ে ডিফেন্ডারদের বোকা বানানোসহ আরও অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্ত আর গোল বিশ্বসেরা ফুটবলারের আলোচনায় তাকে রেখেছে বেশ উঁচু স্থানে।

ফুটবলের মোহনীয় জাদু আর অপার আনন্দে সবাইকে মাতিয়ে রাখা ম্যারাডোনা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ধরাধাম ছেড়ে চলে গেছেন প্রায় চার বছর হলো। কিংবদন্তি এই ফুটবল তারকার জন্মদিন আজ। ১৯৬০ সালের এই দিনে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস প্রদেশের লানুস শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেঁচে থাকলে ফুটবল ঈশ্বরের বয়স হতো ৬৪ বছর। বয়সে কী এসে যায়, যদি কোটি ভক্তের চোখে থাকে মায়ার অঞ্জন!

নানা রঙের দিনগুলিতে দিয়োগো। ছবি: এএফএ
ছোটবেলা থেকে ফুটবলে গভীর আগ্রহ ছিল ম্যারাডোনার। সেই আগ্রহের সঙ্গে যোগ হয় বিস্ময়কর প্রতিভা। দুই মিলিয়ে খেলোয়াড় হিসেবে তিনি দ্রুত চড়ে বসেন ফুটবল জগতের একেবারে চূড়ায়।

১৯৮৬ বিশ্বকাপ জেতার পেছনে ম্যারাডোনার অবদান ভোলার নয়। আর্জেন্টাইনরা আজীবন মনে রাখবে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত সেই আসরের কথা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যারাডোনার দুটি ‘অবিশ্বাস্য’ গোল ফুটবল ভক্তদের মনে স্থায়ী আসন গেড়েছে। এর একটা ‘হ্যান্ড অব গড’ নামে বিখ্যাত বা কুখ্যাত। আর ইংল্যান্ডের অর্ধেক খেলোয়াড়দের ড্রিবল করে যে গোলটি করেছেন, তা শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে অমর হয়ে থাকবে। ওই বিশ্বকাপ ছিল দিয়েগোর জীবনে এক সোনালি অধ্যায়।

১৯৯৭ সালে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেয়ার পর কার্যত ভেঙে পড়েন ম্যারাডোনা। পরের কয়েক বছর তিনি মাদকের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেন। যার ফলে ২০০০ সালে একবার মৃত্যুর খুব কাছ দিয়ে হেঁটে এসেছেন। পরে ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত কিউবায় চিকিৎসা শেষে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় ছিলেন। সেখানে তিনি অনেকটা সময় কাটান কিউবার কিংবদন্তি বিপ্লবী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে। তার পায়ে প্রয়াত কাস্ত্রোর একটি ট্যাটুও আঁকা ছিল। আর হাতে ছিল স্বদেশী বিপ্লবী চে গুয়েভারার ট্যাটু।

চে গুয়েভারার ট্যাটু কাকে দেখাচ্ছেন দিয়েগো?
একদা মাদক-অ্যালকোহলের আসক্তির কারণে ‘স্লো মোশন সুইসাইড’-এর দিকে ধাবিত হচ্ছিলেন দিয়েগো। কিন্তু আবার ফিরে এসেছেন। জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নিয়ে তার মধ্যে যে উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তাতে ফের বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখছিলেন আর্জেন্টাইনরা। কিন্তু একঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গড়েও কোনোমতে ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব পার হয় তার দল। পরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয় আলবিসেলেস্তেরা। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত, মেক্সিকোর ক্লাব ঘুরে এবং সর্বশেষ নিজ দেশের ক্লাব হিমনেশিয়া লা প্লাতায় থিতু হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে ফের মদে আসক্তি তার পৃথিবী ছাড়াকে আরও ত্বরান্বিত করে।

ম্যারাডোনার জীবন ছিল বিতর্কময়। ইতালিতে চিকিৎসা করাতে গেলে তার প্রিয় ট্রেডমার্ক হিরের কানের দুল নিয়ে যায় দেশটির ট্যাক্স বিভাগ। তার কাছে পাওনা ট্যাক্সের অর্থ পরিশোধের জন্য এমনটা করা হলেও চিকিৎসা নিতে আসা ম্যারাডোনা তাতে বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন। ২০১০ সালে তার নিজের পোষা কুকুর তার ঠোঁট কামড়ে দিলে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।

দিয়েগো তাকিয়ে আছেন দিকচক্রবালে?
ম্যারডোনার নামে চার্চ নির্মাণের ঘটনা বেশ পুরোনো। এসব চার্চে ১০টি বিধি পালন করা হয়। তার জার্সি নম্বরও ছিল ১০। এই ১০টি বিধির একটি হলো, নিজের নামের মাঝের অংশ ‘দিয়েগো’ রাখা এবং নিজের প্রথম সন্তানের নামও রাখতে হবে ম্যারাডোনার নামে।

কেন ম্যারাডোনার প্রতি আর্জেন্টাইনদের এতো ভালোবাসা, তা বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। চরম আর্থিক সংকটে পড়ার পাশাপাশি ১৯৮২ সালে ব্রিটিশদের কাছে ফকল্যান্ড যুদ্ধে হার মিলিয়ে একটা সময় আর্জেন্টিনার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল করুণ। হতাশায় ডুবতে বসা নিজ দেশের জনগণের জন্য ম্যারাডোনা যেন হয়ে উঠেছিলেন প্রতিষেধক রুপে। দিয়েগোকে দেখলে তারা তাদের বঞ্চনার আখ্যান ভুলে যেতেন। বসে থাকতেন আনন্দের পিঁড়িতে। ম্যারাডোনা মাঠে ছুটতেন, আর আর্জেন্টাইনরা গলা ছেড়ে গান ধরতেন! কী অনন্ত সে আবেগ! দিয়েগো এটা অর্জন করেছেন তার বাঁ পায়ের সুবাদে!

২০২০ সালের নভেম্বরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন ম্যারাডোনা। তিনি চলে গেলেও ফুটবল ইতিহাসে তার নাম লেখা থাকবে সোনালি আখরে। তিনি চলে গেলেও তার জাদুকরী নৈপুণ্যের চিত্র অঙ্কিত হবে ফুটবলামোদীর মনে, যুগ থেকে যুগে..

গ্রন্থনা: আল মাহফুজ