
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে ভূমিদস্যুদের থাবায় ইতোমধ্যে অসংখ্য পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। বিশেষ করে গত আগস্ট মাসে ছাত্র – জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে অসংখ্য পুকুরের নাম-নিশানা পর্যন্ত হারিয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে-পুকুর এবং জলাশয় ও খালগুলো ভরাটের ফলে পরিবেশ দূষণে মানব সভ্যতা বিরোধী প্রতিযোগিতা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাশিপুরের ২৮ নং ওয়ার্ডের বারৈজ্জার হাট বাজার থেকে পূর্ব দিকে দিয়াপাড়া মাস্টার বাড়ি সংলগ্ন সড়কের পাশের জমিতে থাকা অর্ধ শত বছরের একটি পুরনো পুকুর ভরাটের জন্য গভীর দিন-রাত ট্রাকে ট্রাকে বালু ফেলা হচ্ছে।
জানা গেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের থেকে কিছুদিন আগে মাসুম ভূঁইয়া, কালাম তালুকদার সহ কয়েকজন ব্যক্তি জমিটি ক্রয় করে এবং জমি ক্রয়ের সেখানে থাকা পুকুর ভরাটের জন্য কাশিপুর হাই স্কুল এলাকার কবেল রুবেল ভূঁইয়া নামের জনৈক একজন ব্যাক্তির কাছে পুকুর ভরাটের কন্টাক্ট দিয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা, পুরনো এই পুকুরটির জমির পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশের মতো এরমধ্যে কিছু অংশ ইতিমধ্যেই বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। আর যখন ট্রাক দিয়ে বালু ফেলানো হয় তখন সেখানে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কিছু লোক সহায়তা করেছেন। এ সময় কালাম তালুকদার নিজেকে বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে বলেন ভাই আমাদের কোন নিয়ম লাগেনা।
তবে পুকুর ভরাটের কন্টাক্ট নেয়া রুবেল ভূঁইয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আপনাদের অনেক সাংবাদিক আমার ভাই-বন্ধু। নিউজ করার প্রয়োজন নেই, আপনারা কাশিপুর আসেন একসাথে চা খাবো। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে জারি করা এক আদেশে বলা হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, জনগণের আশ্রয়স্থল রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করতে কোনো অবস্থায় খাল-বিল, পুকুর-নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করা যাবে না এবং এর গতিপথ পরিবর্তন করা যাবেনা। তবে নিজস্ব পুকুর ভরাট করতে চায়, সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ে পুকুর ভরাটের একটি প্রস্তাব পাঠাতে হবে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারীর মুঠোফোন নাম্বারে কল দিয়েও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অপর একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে যাদেরকে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুকুর বা জলাশয় ভরাটের তথ্য তাদের কাছে অবগত করলেও বিশেষ কোন কারণে অনেক সময় তারাও থাকে নিরব। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। ইতিমধ্যেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কাজটি বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল জেলা কার্যালয় সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন জানান এটা আইনগতভাবে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। বিষয়টি অবগত হওয়ার পরে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক কাজ বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এতে স্থানীয় ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও পুকুরটি ভরাট করা হলে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।