ঢাকামঙ্গলবার , ২২ এপ্রিল ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল সদরে সাব রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
এপ্রিল ২২, ২০২৫ ৪:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল সদর সাব রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল অবৈধ ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন শতকোটি টাকার সম্পদ।

 

বরিশাল সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল ঘুষ দুর্নীতি আর দলিল বাণিজ্যের মাস্টার মাইন্ড। সর্বশেষ সরকারি বেতন স্কেলে নবম গ্রেডের কর্মকর্তা তিনি। ৩৪ বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। শুরুতে তার বেতন ছিলো ২২ হাজার আর বর্তমানে তার বেতন মাসে সর্বসাকূল্যে ৫৩ হাজার টাকা। নবম গ্রেডের সর্বোচ্চ বেতনের হিসাব ধরলে ৩৪ বছর চাকরি জীবনে তার আয় দাঁড়ায় ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অথচ এই দীর্ঘ চাকরী জীবনে তিনি সংসার খরচ, হাত খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েও অসীম কল্লোল বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে গড়েছেন শতকোটি টাকার বেশি সম্পদ। এমনকি তার স্ত্রী সন্তানদের নামেও রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি। সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করাকালীন সময়ে তার এই অবৈধ সম্পদ অর্জনের ক্যারিশমা হার মানিয়েছে আলাদ্বীনের আশ্চর্য প্রদীপকেও।

বরিশালে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর থেকে অসীম কল্লোলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং ঘুষ গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ অভিযোগ আসছে ধারাবাহিকভাবে। এ নিয়ে অসংখ্যবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থে তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে বরিশাল সদর উপজেলায় ১ একর ২৫ শতাংশ জমির ওপর সোনার বাংলা মৎস্য খামার ও অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সদর উপজেলার কাগাসুরা মুকুন্দপট্টি রাস্তার দুই পাশে ৮০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ নামে মাছের ঘের। কাগাসুরা বাজারসংলগ্ন এক একর জমির ওপরে মালটা বাগান, নগরীর ৪নং ওয়ার্ডে ১২ শতাংশের একটি প্লট। লাকুটিয়া এলাকায় ২০ শতাংশ জমির ওপরে সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, নগরীর পোর্ট রোডে ৫ তলা আলিসান ভবন। নগরীর হাসপাতাল রোডে অগ্রণী হাউজিং লিমিটেডের ‘ড্রিম প্যালেসে’ কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, যার নাম্বার ফ্ল্যাট নং-৩/এ।

এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের চলাচলের জন্য রয়েছে ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৬৪৮১ নম্বরের টয়োটা ব্র্যান্ডের গাড়ি। স্ত্রীর নামে সদর উপজেলার তালতলী বাজারে ইট, বালু ও রড-সিমেন্টের ব্যবসা। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন অসীম কল্লোল যেসব এলাকায় চাকরি করেছেন সেসব এলাকায় কিনেছেন জমি ও ফ্ল্যাট। তার এসব সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার ওপরে।তার লিগ্যাল বেতন দিয়ে সংসার পরিচালনা, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনাসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিটিয়ে লাখ দশেক টাকার বেশি সম্পদ গড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল এবং তার পরিবারের যে সম্পদের কথা শোনা যায় তার মূল্য রয়েছে শতকোটি টাকার বেশি, যা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একজন সাব-রেজিস্ট্রারের এত সম্পত্তির উৎস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খতিয়ে না দেখলে এমন হাজারো অসীম কল্লোল জন্ম নিবে প্রতিবছর সরকারি দপ্তরে।কাগাসুরা এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাগাসুরার মুকুন্দপট্টি সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ, বাজারসংলগ্ন মালটা বাগান, লাকুটিয়া এলাকায় সুগন্ধা পোলট্রি খামার নামে মুরগির ফার্ম, সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অসীম সাহেবের বলে আমরা জানি। ওই বাগান দেখাশোনার জন্য সার্বক্ষণিক একজন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।সুগন্ধা অ্যাগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজ ও মালটা বাগান দেখভালের দায়িত্বে থাকা আসমত আলী খান বলেন, ‘আমি যতদূর জানি মালটা বাগান ও মাছের ঘের ও তার জমির মালিক সাব-রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল স্যার। তিনি মাঝেমধ্যে এখানে এসে ঘুরে যান। এ ছাড়া এই এলাকায় তার আরও কয়েকটি জমি রয়েছে।

 

তালতলী এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, ‘এই বাজারে ইট, সিমেন্ট ও বালু বিক্রির প্রতিষ্ঠানের মূল মালিক সাব-রেজিস্ট্রার কল্লোল। তবে কাগজে-কলমে এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তার স্ত্রী।’এ বিষয়ে অসীম কল্লোল বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলার কাগাসুরায় আমার কোনো জমি নেই। সেখানে সম্বন্ধি (স্ত্রীর বড় ভাই) গোলাম রাব্বানীর নামে ৬০ শতক জমি আছে। তিনি ময়মনসিংহ জেলায় থাকেন। তবে সচেতন মহলের দাবি ময়মনসিংহের মানুষ কখনোই এতো দূরে বরিশালে সম্পত্তি গড়তে আসবেনা। মূলতঃ সাব রেজিস্ট্রার তার নিজের সম্পদ সম্বন্ধির ( বৌ এর বড় ভাইয়ের) বলে দুদকের চোখে পট্টি মারার অপচেষ্টা করছে।অসীম কল্লোল আরও বলে তার সম্বন্ধির অসুস্থতার কারণে ওই সম্পত্তি আমি দেখাশোনা করি। নগরীর উত্তর মল্লিক রোড এলাকায় ড্রিম প্যালেস নামে ৯১০ ফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে সত্য। তবে পোর্ট রোড এলাকায় সরকারি খাস জমিতে ৫তলা ভবন নির্মাণের অভিযোগ সত্য নয় বলে সাফাই গাইতে থাকেন। সাব রেজিস্ট্রার বলেন ওই এলাকায় আমার বাবার নামে একটি বাড়ি আছে, যেখানে আমরা ৪ ভাই একসঙ্গে থাকি।’তবে ঢাকায় দুটি ফ্ল্যাট থাকার সত্যতা স্বীকার করে অসীম কল্লোল বলেন, ‘ডিবিএইচ থেকে ৮৫ লাখ টাকার লোন নিয়ে দুটি ফ্ল্যাট কিনেছি। এ ছাড়া সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদে ১ একর ২৫ শতাংশ জমি স্ত্রীর নামে রয়েছে, যা হেবা দলিল মূলে কেনা হয়েছে। এর বাইরে আমার এবং আমার পরিবারের কোনো সম্পদ নেই।

 

আর এভাবে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে সরকারের চোখে ধুলো দিতে মনগড়াভাবে খুলেছেন নিজ নামে ইনকাম ট্যাক্স ফাইল।ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকা অসীম কল্লোল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নির্মূল করতে বরিশাল সদরের ছাত্রলীগ ও যুগলীগ ক্যাডারদের মাঝে বিপুল পরিমাণ কালো টাকা লগ্নী করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এছাড়া বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে নিজেকে শেখ হাসিনার নিকট আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলে তার কর্মস্থলগুলোকে সে লুটপাট বাণিজ্যের অভয়ারণ্যে পরিণত করে প্রতিদিন লুটেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তার সীমাহীন প্রতাপ আর কালো টাকার চাপে পড়ে জেলা রেজিস্ট্রাররাও অসহায় বোধ করতেন। মোটা অংকের গোপন টাকার চুক্তিতে জমির শ্রেণী পরবর্তন, দলিলে মূল মালিকের ছবি তুলে ফেলে ভূয়া দলিল সম্পাদন, এক জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে রেজিস্ট্রি করে দেওয়াটা তার কাছে খুব সামান্য ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন কয়েকজন দলিল লেখক।ঘুষ দুর্নীতির বরপুত্র শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের বর্তমান মালিক বরিশাল সদর সাব রেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল। তার চাকরী জীবনের শেষ সময়ে তার এসব অবৈধ সম্পদের টাকার উৎস খুঁজে দেখতে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আইজিআরসহ দুদক এনফোর্সমেন্ট টিমের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল।