
নিজস্ব প্রতিবেদক :: আদালতে মামলার পাহাড় কমাতে সালিশি ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বরিশালের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ ফারুক হোসেন বলেছেন, আমাদের কাছে যেসব মামলা আসে তার বেশিরভাগ পারিবারিক সমস্যা। জমিজমা, নারী নির্যাতন, যৌতুক ইত্যাদি। এসব মামলার বেশিরভাগই দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি সম্ভব। এতে আত্মীয়তার সম্পর্কও ছিন্ন হওয়া থেকে রক্ষা পায়। আইন-সহায়তার ভিতরে এই মীমাংসার বিষয়টিকে আইনজীবীদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান ফারুক হোসেন।
গতকাল সোমবার জাতীয় আইন সহায়তা দিবস উপলক্ষে বরিশালে বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন শেষে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের এই মিমাংসার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রচারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, লিগ্যাল এইড শুধু আদালতেই মামলার শুনানি করে তা কিন্তু নয়, আদালতের বাইরেও মিমাংসার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি করে। যেসব মামলা এভাবে নিষ্পত্তি সম্ভব, সেগুলো সম্পর্কে আমাকে জানালে তা আর শুনানির জন্য তোলা হবেনা।
জাতীয় আইন সহায়তা দিবস সকাল সাড়ে ৯টায় বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গনে বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে র্যালির উদ্বোধন করেন জেলা লিগ্যাল এইড এর চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ ফারুক হোসেন। এরপর র্যালি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আদালত প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়।
র্যালিতে বিচারক, আইনজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। এরপর বরিশাল জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভায় সভাপতিত্ব করেন লিগ্যাল এইড এর চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ।
জানা গেছে, আর্থিকভাবে অসচ্ছল, অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি খরচে ২০০৯ সাল থেকে আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (লিগ্যাল এইড) এ সেবা প্রদান করে আসছে। শুরুতে জেলা পর্যায়ে অসচ্ছল জনগোষ্ঠীর জন্য এ আইনি সেবা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা ও চট্রগ্রামে শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল, দেশের কারাগারগুলোতে এ সেবা চালু হয়। প্রতিবছর ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশের পাশাপাশি বরিশালেও পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। সারাদেশের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, এ সংস্থাটি থেকে গত ১৬ বছরে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫ জন। আর ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ২৫২ কোটি ৫১ লাখ ৮১ টাকা। ৬৪ জেলায় লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে ২ লাখ ১২ হাজার ১৫১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
অতিরিক্ত পিপি সরোয়ার হোসেন বলেন, অসহায় দরিদ্র মানুষের আইনগত অধিকার রক্ষার জন্য এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরনে লিগ্যাল এইড খুবই চমৎকার ভূমিকা পালন করছে বরিশালে । পারিবারিক অনেক মামলাই এর মাধ্যমে আদালতের বাইরে মিমাংসা হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর সিনিয়র আইনজীবী ও হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের এর প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরশেদ বলেন, দিন দিন বিনা টাকায় সরকারি সেবায় দরিদ্র ও অসহায় বিচারার্থীদের আস্থা বাড়ছে, তবে রাষ্ট্রের এ সংস্থাকে আরও কার্যকরী হওয়া দরকার। তিনি বলেন, লিগ্যাল এইডে আরো বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ ও প্রচুর অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন। এতে মামলা নিষ্পত্তি বাড়বে, একই সঙ্গে সমাজের অসহায় ও দরিদ্র মানুষ আরো বেশি উপকৃত হবে।
দরিদ্র ও অসহায় বিচারপ্রার্থীদের সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা দেয়ার লক্ষ্যে সরকার ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এ সংস্থার অধীনে প্রত্যেক জেলায় জেলা ও দায়রা জজকে চেয়ারম্যান করে একটি করে জেলা কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটি এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সোহেল আহমেদ, বিচারক মোসতাক আহমেদ, বিচারক মোহাম্মসদ ওয়ালিউল ইসলাম, বিচারক মো:আল মামুন, সহ সমগ্র আদালতের বিচারক গন উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন জেলা লিগ্যাল এড অফিসার ও সিনিয়র জজ সাব্বির মোহাম্মদ খালিদ। লিগ্যাল এইড দিবস উপলক্ষে তিনজন আইনজীবীকে সম্মাননা কেষ্ট প্রদান করা হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তর আয়োজিত একজনকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়।