ঢাকামঙ্গলবার , ১০ জুন ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চায় বরিশালবাসী

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুন ১০, ২০২৫ ১:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

মো: আম্মার হোসেন আম্মান :: বরিশালে নেই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বিদেশগামীদের ৩০০ কিলোমিটার দুর্ভোগ, ঢাকাগামী পথে হয়রানি, ছিনতাই ও অনিরাপত্তার মুখে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।

 

বরিশালবাসীর বহুদিনের দাবি একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হওয়া সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত বরিশাল বিমানবন্দর শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ রুটেই সীমাবদ্ধ।

বর্তমানে বরিশাল থেকে কেবল ঢাকা-বরিশাল রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি মাত্র ফ্লাইট চলাচল করে। একসময় এই বিমানবন্দর থেকে US Bangla, Novo Air এর মতো বিমান সংস্থা নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করলেও বর্তমানে তা বন্ধ।

 

পরিসংখ্যান ও সমস্যা।

২০১৮ সালে বরিশাল বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন মাত্র ৪৬,৭৬৭ জন যাত্রী। রানওয়ের সীমাবদ্ধতা, আধুনিক অবকাঠামোর অভাব, ফ্লাইটের স্বল্পতা—সব মিলিয়ে বরিশাল এখনও দেশের অন্য বিমানবন্দরগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে।

 

কেন আন্তর্জাতিক দরকার?

বরিশাল বিভাগে পর্যটন, কৃষি, শিক্ষা ও শিল্প খাতে বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় সেই সম্ভাবনার সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে বিদেশি বিনিয়োগ, রপ্তানি ও পর্যটনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

 

দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র বরিশাল, যেখানে লাখো মানুষ দেশ-বিদেশে যাতায়াত করে নানা প্রয়োজনে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বৃহৎ জনপদের মানুষ আজও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ফলে যারা বিদেশে যান—বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিক, শিক্ষার্থী বা চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা—তাদের বাধ্য হয়ে ৩০০ কিলোমিটার দূরের ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করতে হয়।

দীর্ঘ পথ, গলাকাটা ভাড়া, নিরাপত্তাহীনতা

বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ভোর রাতে রওনা দিয়ে দুপুরে গিয়ে পৌঁছানো, আবার বিমানের সময় অনুযায়ী সারারাত বাস টার্মিনাল বা এয়ারপোর্টে কাটানো – এসব যেন এখন নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা বরিশালের যাত্রীদের জন্য।
তাদের কেউ কেউ বলেন, “টিকিটের দামে এত খরচ হয় না, যতটা খরচ হয় ঢাকা পৌঁছাতে। তার ওপর বাসে উঠে টার্মিনালে নামার আগেই মানিব্যাগ, মোবাইল, লাগেজ হারিয়ে ফেলি।”

ছিনতাই-প্রতারনার ভয় তাড়ায়

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে মাঝেমধ্যেই যাত্রীদের টার্গেট করে সক্রিয় থাকে ছিনতাইকারী চক্র। বিশেষ করে রাতের বেলায় চলাচল করা যাত্রীদের জন্য ঝুঁকি আরও বেশি। একাধিক যাত্রী জানান, ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ বা বিমানবন্দর এলাকায় ট্যাক্সি কিংবা অটোরিকশায় উঠেই তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

এক প্রবাসী যাত্রী বলেন, “রাত ২টায় গাবতলীতে বাস থেকে নেমে সিএনজিতে উঠি। কিছুদূর যাওয়ার পরই দেখি চালক আর দুইজন মিলে চোখে কিছু মেখে আমার সবকিছু নিয়ে যায়। পুলিশে গিয়েও বিচার পাইনি।”

প্রবাসী ও শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবির নাম—বরিশাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

বরিশালের প্রবাসী সংগঠন, ছাত্র সংগঠন এমনকি সাধারণ নাগরিকরাও বারবার সরকারের কাছে একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দাবি জানিয়ে আসছেন। বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে, বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুরে অবস্থিত বিমানবন্দরটির রানওয়ে দৈর্ঘ্য মাত্র ৫,৯৯৫ ফুট। এতে করে বড় আকারের বিমান ওঠানামা করতে পারে না।

যাত্রীদের জন্য রয়েছে সীমিত সুবিধা—ওয়াই-ফাই, ভিআইপি লাউঞ্জ, হুইলচেয়ার সাপোর্ট—তবে তা একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উপযোগী নয় বলেই মনে করেন অনেক যাত্রী।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরিশালকে আন্তর্জাতিক বিমান নেটওয়ার্কে যুক্ত করা গেলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। তৈরি হবে পর্যটন, ব্যবসা, রপ্তানি ও কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ।

জনগণের প্রশ্ন—আর কতকাল এই বঞ্চনা?

বরিশালের একজন তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, “আমাদেরকে উন্নয়নের কথা বলা হয়, অথচ দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ চাহিদাটাই আজও উপেক্ষিত! আমরা কি সত্যিই রাষ্ট্রের সমান নাগরিক?”

 

 

বরিশালবাসীর স্বপ্ন আজ একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যেটি শুধু তাদের কষ্ট কমাবে না, বরং গোটা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের সংযোগ স্থাপন করে দেবে। এখন সময় এসেছে এই দাবিকে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকারে নেওয়ার।