নিউজ ডেস্ক :: নির্বাচনে না আসা দলগুলোর জন্য ইসির নতুন বার্তা
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দল এখনও নির্বাচনে আসতে চাইলে তাদের জন্য আইন মেনে নির্বাচনে আসার পথ তৈরি করা হবে।
সোমবার (২০ নভেম্বর) গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান।তিনি বলেন, নির্বাচনে এখনো যেসব রাজনৈতিক দল আসেনি তারা যদি আসতে চায় তাহলে আইন মেনে তাদের নির্বাচনে আসার পথ তৈরি করা হবে।
বিএনপির বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো ধরনের সহায়তা চাইলে তাতে ইতিবাচক সাড়া দেবে ইসি। যদি তারা নির্বাচনে আসতে চায় তাদের আমরা স্বাগত জানাব।এর আগে, ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী নির্বাচনের সবরকম প্রস্তুতি সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে ভোটের তারিখ পেছাতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে এসে সহায়তা চাইলে অবশ্যই তা করা হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়। যেসব দল নির্বাচনে অংশ নেবে, তাদের জন্য যত রকম ইতিবাচক চেষ্টা করা সম্ভব, তা করা হবে। যারা নির্বাচনে আসবে না, তাদের ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কোনো অভিযোগ এলে এবং তা প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অভিযোগ সুনির্দিষ্ট এবং তথ্যবহুল হতে হবে।’
নির্বাচনের পরিবেশ নেই—কয়েকটি রাজনৈতিক দলের এমন অভিযোগ সম্পর্কে এই কমিশনার বলেন, ‘চিরকাল সরকারি দল এবং বিরোধী দল পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। এটা ১৯৭০ সাল থেকে দেখে আসছি।’
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির এ তপশিলকে স্বাগত জানিয়ে এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার শরিকরা। অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা তপশিল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে হরতাল-অবরোধসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে তারা। এ ছাড়া সিপিবিসহ বেশ কয়েকটি বাম দলও নির্দলীয় তদারকি সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থায় তপশিল ঘোষণা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। আর ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া যাবে। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই করা হবে। বাছাইয়ে কারও মনোনয়ন ফরম বাতিল হলে তিনি আপিল করার সুযোগ পাবেন। আপিল ও তা নিষ্পত্তির জন্য ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় রাখা হয়েছে। কোনো প্রার্থী ইচ্ছা করলে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম প্রত্যাহার করতে পারবেন। আর চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ১৮ ডিসেম্বর।
নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনে জোটবদ্ধ নির্বাচনের তথ্য জানিয়েছে ১০টি রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি দল এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। আর জোটবদ্ধ নাকি একক নির্বাচন সেই ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে আছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এটা প্রায় নিশ্চিত। দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের তপশিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে প্রার্থীদের আয়কর রিটার্ন জমার সুবিধার জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় সাত দিন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রওশন। এ সময় রাষ্ট্রপতি বিষয়টি দেখবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন।অন্যদিকে, বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো এখন পর্যন্ত নির্বাচন বর্জনের পথে রয়েছে। একদফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে তারা। চলমান সংকট নিরসনে শর্তহীন সংলাপের পরামর্শ দিয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে তপশিল ঘোষণার ঠিক আগে চিঠি দেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। বিএনপির শর্তের কারণেই সংলাপ সম্ভব নয় বলে তার চিঠির জবাবে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বিএনপি বলছে, আবারও একতরফা নির্বাচন করার জন্যই ক্ষমতাসীনরা আলোচনায় রাজি নয়। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে সমাধানের পক্ষে। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা ও ডামাডোল শুরু হয়ে গেলেও সংলাপের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করছেন নির্বাচন ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। সে জন্য দলগুলোর সদিচ্ছা ও আন্তরিকতাই যথেষ্ট বলে মত তাদের।
ইসির একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হয়ে গেলেও রাজনৈতিক সমঝোতা হলে যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভোটের তারিখ পেছাতেও সমস্যা নেই কমিশনের। সেটি বিবেচনায় রেখে ১৫ নভেম্বর তপশিল ঘোষণার সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতভেদ সমাধান অসাধ্য নয়—মন্তব্য করে সংঘাত পরিহার করে দলগুলোকে সদয় সমাধান খুঁজতে বলেন তিনি। এর আগেও রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবেই সমাধানের পরামর্শ দেন সিইসি। ‘বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে অপূর্ণতা থেকে যাবে’ ‘বিএনপি না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না’ এবং ‘বিএনপি না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না’—বিভিন্ন সময় এমন বক্তব্যও দেন তিনি। অর্থাৎ বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে কমিশনের আন্তরিকতার মোটেও অভাব নেই। সে জন্য বিএনপি প্রত্যাখ্যান করলেও একাধিকবার তাদের সংলাপের আমন্ত্রণ জানায় ইসি।
সূত্র আরও জানায়, ২৯ জানুয়ারির মধ্যেই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ভোটের পরের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে সপ্তাহখানেক সময়ই যথেষ্ট, যদিও ৭ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে যাতে ভোটের তারিখ পেছানো যায়, সেটি বিবেচনায় রেখেই এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরও রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য ভোটের তারিখ পিছিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এবারও সেই সুযোগ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থেই শেষ পর্যন্ত এ তারিখ একদফা পেছানো হতে পারে।