
নিজস্ব প্রতিবেদক :: পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ইউপি সদস্য ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম হাওলাদার ( ৫০) এবং তার ভাই মোর্তুজা হাওলাদারের স্ত্রী মুকুল বেগমকে (৪৫) বাড়ির উঠানে ফেলে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় সহিদুল ইসলামের স্ত্রী রেহেনা বেগমকেও (৪২) কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করা হয়েছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে উপজেলার পশ্চিম চর বলেশ্বর গ্রামের মোস্তফা হাওলাদারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সহিদুল ইসলাম চন্ডিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম চরবলেশ্বর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য এবং ঐ গ্রামের মৃত মোসলেম আলী হাওলাদারের ছেলে। তার আপন বড় ভাই মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান হাওলাদার চন্ডিপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সাবেক সভাপতি এবং মেজ ভাই মনিরুজ্জামান সেলিম উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে মোবাইলে কথা বলার সময় ঘরে নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখা দেওয়ায় বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ে মোবাইলে কথা বলতে ছিলেন ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম। এ সময় তিনি পুকুরঘাটে দাঁড়িয়ে মাছেরে খাবার দেন। তখন ঘরের আশপাশে ওৎপেতে থাকা চার পাচ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার উপর হঠাৎ করে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে শুরু করে। ঘটনার সময় তার ছোট মেয়ে তহা সাথে ছিলেন।
পিতাকে রক্ষা করতে সামনে এলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় খুনিরা। এ অবস্থায় স্বামী ও মেয়ের ডাক চিৎকার শুনে তার স্ত্রী রেহেনা বেগম ঘর থেকে বেরিয়ে তাকে রক্ষা করতে এলে দুজনকেই নৃশংসভাবে ভাবে কুপিয়ে বাড়ির উঠানে ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। এরপর শহিদুলের ভাবি মুকুল বেগম বাইরে এলে তাকেও বাড়ির উঠানের সামনে রাস্তায় ফেলে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে দুর্বৃত্তরা।
পরে আশপাশের লোকজন এসে তিনজনকেই বাড়ির উঠানে কাদা পানির মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থানে পড়ে থাকতে দেখে। এ সময় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ও তার ভাবি মুকুল বেগম ঘটনাস্থলে নিহত হন এবং শহিদুলের স্ত্রী রেহেনা বেগমকে মুমূর্ষু অবস্থান উদ্ধার করে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাঝরাতে খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সকাল পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি বলে জানা যায়।
এদিকে এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে পিরোজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ইন্দুরকানি থানার ওসি মোঃ মারুফ হোসেন সহ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাতেই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের শ্যালক মিজান মাঝী মোবাইলে জানান, আমার দুলাভাই সরকার পরিবর্তনের পর তিনটি রাজনৈতিক মামলায় পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাবাসের পর কয়েক মাস আগে কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে ছিলেন।
কিন্তু কেন এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটলো তা বুঝে উঠতে পারছিনা। তিনি আরো জানান, রাতে হঠাৎ করে ৪-৫ জন তাদের বাড়িতে এসে অতর্কিত হামলা করে তার স্বামীকে এবং ভাবিকে কুপিয়ে মেরে ফেলে। এরপর আমার বোনকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। এ ব্যাপারে ইন্দুরকানী থানার ওসি মো: মারুফ হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে নিজ বাড়ির উঠানে ইউপি সদস্য ও তার ভাবিকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় ইউপি সদস্যের স্ত্রী রেহেনা বেগম গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে পুলিশের ধারণা এটি পারিবারিক বিরোধ কিংবা পরকীয়া প্রেমের জের হতে পারে। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।