মেহেদী হাসান :: জুলাই-আগস্টে বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর হামলা মামলার আসামী আওয়ামী লীগ মিজান জানান তিনি “আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পূর্নবাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক এবং বরিশাল জেলা সৈনিক লীগের সভাপতি”
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির রজত জয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে এবার প্রকাশ্যই দেখা গেলো জুলাই-আগস্টে বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর হামলা মামলার আসামী আওয়ামী লীগ নেতা ও ফরচুন সুজ’র মালিক মিজানুর রহমান মিজানকে।
গতকাল রোববার বরিশাল জীবনানন্দ দাশ স্টেডিয়ামে ক্রিকেট দলের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। যে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল এর সাথেই দেখা যায় আ.লীগ নেতা মিজানকে।
বারবার বরিশাল প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে তাকে প্রকাশ্য দেখে, মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বরিশাল বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘ফরচুন সুজের মালিক মিজানুর রহমান- আওয়ামী লীগের বড় অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত’। ‘তিনি আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাব দেখিয়ে বিসিকের প্লটের বড় অংশ দখল, নামে-বেনামে প্লট হাতিয়ে নেওয়া, কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বঞ্চনাসহ নানা অনিয়মের আশ্রয় নেন’।
বর্তমানে মিজান বরিশাল বিএনপির দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও জুলাই-আগস্টে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার দুইটি পৃথক মামলার আসামী। গত ৫ আগস্ট আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ২০২৩ সালের বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র পদে আসীন হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠেন এই মিজান। এমনকি ওই নির্বাচন প্রচারণাকালে খোকন সেরনিয়াবাত যে গাড়িটি ব্যবহার করতেন তাও দিয়েছিলেন এই মিজান। পরবর্তীতে যার সুফলও ভোগ করেছেন তিনি। মেয়র খোকন’র আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে বরিশাল বিসিক শিল্প নগরীতে তৈরী করেন একক আধিপত্য। এমনকি বিসিকের দাপ্তরিক কোনো আদেশ-নির্দেশকে তিনি পাত্তাই দিতেন না।
বিগত ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারী অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘বরিশাল বানী’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্নকর্তা শেখ রিয়াদ মো: নূরের এক প্রশ্নের জবাবে মিজানুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমি নিজেও আওয়ামী লীগের লোক, বিগত মেয়র নির্বাচনের সময় আমি দিন-রাত বর্তমান মেয়র মহোদয়ের (সাদিক আবদুল্লাহ) পক্ষে কাজ করেছি’।
আরেকটি প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াতকে আগুন সন্ত্রাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি যদি বিএনপি-জামায়াত’র লোক হতাম তাহলে ২০১৩ সালের আন্দোলনে আমার ৪টি বাস পুড়িয়ে দেয়া হতো না, আমার ফ্যাক্টরিতে বোমা মারা হতো না’।
এছাড়াও ২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর গণমাধ্যম ‘চ্যানেল আই অনলাইনে’ বরিশাল-৩ আসনে মিজানুর রহমান মিজানকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দেখিয়ে একটি স্ব-চিত্র সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। যেখানে তিনি নিজেকে ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে হাতেখড়ি নেয়ার কথা উল্লেখ করেন, একই সাথে জানান আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পূর্নবাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক এবং বরিশাল জেলা সৈনিক লীগের সভাপতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদের ডামি নির্বাচনেও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। সেসময় অনলাইন ও অফলাইনেও চালিয়েছিলেন ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা।
এমনকি আওয়ামী লীগ পন্থী ব্যবসায়ী পরিচয়ের বদৌলতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে একাধিকবার করেছেন বিদেশ সফর। এছাড়াও বিগত সরকারের কাছ থেকে বাগিয়ে নেন খুলনার একটি পাটকলের মালিকানা।
মামলার বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র থেকে কোন মতামত পাওয়া যায়নি।
তবে এসকল বিকেল গতকাল বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তার সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বরিশাল নগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, বিএনপির দলীয় কার্যালয় পোড়ানো ও জুলাই-আগষ্টে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হত্যাচেষ্টার উদ্দ্যেশে হামলা মামলার আসামী কি করে প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ায় এবং সরকারী অনুষ্ঠানেও যোগ দেয়, এটা নিয়ে আমারও প্রশ্ন তৈরী হয়েছে।
অপরদিকে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতিশ্রদ্ধাশীল, তবে আইন যদি অপরাধীকে ছোট বা বড় করে দেখে সেক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানাবো’।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারী বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ১১তম আসরে চ্যাম্পিয়ন দল ফরচুন বরিশালের জোড়া ট্রফি উন্মোচন করা হয় বরিশাল বেল্স পার্ক ময়দানে। সেসময়ও বরিশাল প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে তাকে দেখা যায়। এমনকি সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলের আন্দোলনকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র বলে বিবৃতি দেয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যাহতি পাওয়া উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে।