ঢাকাসোমবার , ২০ জানুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে পানি না পেয়েও নিয়মিত বিল দিতে বা.ধ্য হচ্ছেন নগরবাসী

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জানুয়ারি ২০, ২০২৫ ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে পানি না পেয়েও নিয়মিত বিল দিতে বা.ধ্য হচ্ছেন নগরবাসী।

 

নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে না পারলেও শতভাগ পানির বিল আদায় করে নিচ্ছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এমনকি যে এলাকায় পানির লাইন পর্যন্ত এখনো স্থাপন করা হয়নি সেখান থেকেও পানির বিল আদায় করা হচ্ছে। বিসিসি বলছে এটা বিধি সম্মত, নগরবাসী তা মানতে নারাজ। সিটি কর্পোরেশনের ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে মাত্র ৩১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পানির সংযোগ আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শতভাগ এলাকা থেকেই আদায় করছে পানির বিল। কখনো তা ‘বিল’ নামে কখনো বা ‘রেট’। মোট ৩৪ হাজার পানির লাইন বাবদ বছরে আদায় করা হচ্ছে অন্তত ১০ কোটি টাকা। লাইনে একফোটা পানি না আসলেও এই বিল দিতে হবে আর পানির লাইন না থাকলেও রেট দিতে হবে। এখানটাতেই বিগড়ে আছে জনতা।

সম্প্রসারিত এলাকার এক পানি গ্রাহক বলেন, মহা সমস্যায় আছি আমরা। বাড়ির প্লান পাশ হবার পর থেকেই মাসে ২০০ টাকা পানির বিল দিতে হচ্ছে। অথচ আমরা এক ফোটাও পানি পাই না। শুধু শুধু ওরা এই বিল নিচ্ছে।

অন্যজন বলেন এই এলাকায় ৫০/৬০টি উঁচু ভবন আছে, একটি বাড়িতেও পানির লাইন নেই। আমরা কর্পোরেশনের কোন পানিও পাই না। অথচ ওরা বিল দিতে বলে। আমরা কিছু বিল দিয়েছি, আর দিতে চাই না।

পানির লাইন থাকা না থাকার বিষয়টি নিয়ে নগরবাসী যখন নাকাল তখন নিজের পানি নিজে তুলতে যারা টিউবওয়েল বসাচ্ছে তাদের উপরও চার্জ ধার্য্য করা হয়েছে। যেসব স্থানে পানির লাইন নেই সেখানে নতুন রাস্তা করা হলেও নেয়া হচ্ছেনা পানির লাইন। বহু ধর্ণা ধরেও উপায় মিলছে না নগরবাসীর।

ভুক্তভোগী একজন বলেন, এমনিতেই পানির লাইন নেই, পানিও পাই না। নিজের পানি নিজে পেতে যখন টিউবওয়েল বসাতে চাই, সে ক্ষেত্রেও বিসিসি কে ৩৫ হাজার টাকা চার্জ দিতে হচ্ছে। এর চেয়ে গ্রামে ছিলাম সেটাই ভালো ছিলো।

অন্যজন বলেন, আমার কাছে বিসিসি পানির লাইন বাবদ ১৫/১৬ হাজার টাকা পাবে, আমি বলেছি লাইন কেটে দিতে। বলে দিয়েছি টাকা পেতে হলে পানি দিতে হবে। তা না হলে জেল জরিমানা যা দিক পানি না পাওয়া পর্যন্ত আমি টাকা দেবো না।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমাদের পানির লাইন নেই, নতুন রাস্তার কাজ চলছে। বার বার ধর্ণা দিয়েছি রাস্তার কাজের সাথে পানির লাইন নিতে ওরা তা শোনেনি। অথচ মাস পেরোলেই পানির বিল হাজির।

বিসিসির দাবি হলো তারা পাইপের ব্যাস ও ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী পানির বিল ধার্য্য করে থাকে। এতো কিছুর পরেও বছরে অন্তত ৩৫ ভাগ পানির বিল আদায় করা যাচ্ছে না।

বিসিসির পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, আমরা লাইনপ্রতি সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা পানির বিল আদায় করে থাকি। মাসিক হিসেবে প্রতি তিন মাসে গ্রাহকদের বিল দিয়ে থাকি। বছরে ৩৫ ভাগ বিল বকেয়া থাকে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিদিন ৭ কোটি লিটার স্বাদু পানির দরকার। ৫টি ওভার হেড ও ৩৬ টি পাম্প ও পানির গাড়ির সাহায্যে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পানি চাহিদায় কাতর নগরবাসী ইতিমধ্যে প্রায় ২৮ হাজার নলকুপ বসিয়েছে নগরীজুড়ে। বিসিসির দরকার আরো অন্তর ১০টি উচ্চ ক্ষমতার পাম্প।

পানি বিভাগের কমী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা চাহিদার চেয়ে অর্ধেক পানি সরবরাহ করতে পারি। উৎপাদনমুখী ১০টি টিউবওয়েল পাওয়া গেলে বিসিসি এলাকায় পানির পরিপূর্ণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

 

এদিকে পানি সংকটের মুখেও পানি না দিয়ে জনগনের কাছ থেকে পানি বিল আদায় করাকে বিধি সম্মত বলে দেখছেন বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী। তার মতে বিসিসি এলাকায় যে মাধ্যম থেকে পানি নেয়া হোক না কেন তার কর বিসিসিকে দিতে হবে।

তিনি বলেন, যেখানে পানি সরবরাহ করা হয় না সেখান থেকে আমরা পানির রেট আদায় করে থাকি। অর্থাৎ বিসিসি এলাকায় ভবনের নকশা পাশ হলেই এটা ধার্য্য হয়ে যায়। একই সাথে টিউবওয়েল স্থাপনেও আমাদের ধার্য্য আছে। এছাড়া যেখানে পানি সরবরাহ করা হয় সেখান থেকে আমরা বিল আদায় করে থাকি। বিসিসির বিধি অনুযায়ি এসব কিছুই ধার্য্য হয়ে থাকে।