ঢাকাবুধবার , ২২ জানুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চরমোনাই পীরের দরবারে জামায়াত আমীর : শফিকুর রহমান

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জানুয়ারি ২২, ২০২৫ ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: চরমোনাই পীরের দরবারে জামায়াত আমীর : শফিকুর রহমান।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটি ইসলামী দল হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শুরু থেকেই দুই দলের মধ্যে মৌলিক কিছু বিষয় নিয়ে মত পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। এসব কিছু ছাপিয়ে গতকাল মঙ্গলবার চরমোনাইর ময়দানে ছুটে যান জামায়াতের আমীর ডা: শফিকুর রহমান। তার এ আগমনকে দলীয় নেতাকর্মীরা যেভাবেই দেখুক না কেন সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক নেতাদের এই মিল চোখের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে যেনো মণের মনিকোঠায় স্থান পায় এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সবাই।
জামায়াতের আমীরের চরমোনাই যাওয়ার সময় নির্ধারণ ছিলো মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারী) বেলা ১১টায়। তবে এর প্রায় ৫০ মিনিট পর গাড়ীবহর নিয়ে সেখানে হাজির হন তিনি। তাকে স্বাগত জানান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন। প্রথমে জামায়াত আমীর শফিকুর রহমানকে নিয়ে যাওয়া হয় চরমোনাই মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার বৈঠকখানায়। সেখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দের সাথে কুশল বিনিময় করেন আমীর। এরপর মাদ্রাসার বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। চরমোনাই পীরের সাক্ষাত পান আগমনের প্রায় একঘন্টা পর।

দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে বৈঠকখানায় আসেন চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এ সময় মাদরাসার বারান্দায় অপেক্ষমান ছিলেন জামায়াত আমীর ডা: শফিকুর রহমান। প্রথমে দুই দলের আমীর একে অপরের সাথে কোলাকুলি করেন। এরপর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তারা।

চরমোনাই আগমনের বিষয়টি প্রথমে স্পষ্ট করেন জামায়াত আমীর। তিনি বলেন, শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এখানে আসা এবং একত্রিত হওয়া। সবাইকে সামনে রেখেই আমরা বলতে চাই যে আমরা শুধু আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালবাসি। আমাদের এ ভালবাসা যেন আল্লাহ কবুল করেন।
এভাবে একসাথে রাজনীতির মাঠে থাকবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আমীর বলেন, আল্লাহর জন্য ভালবাসা সব জায়গায় থাকবে। আমরা এক আছি তো। এক আল্লা, এক কালিমা, এক রাসুল (সা:) এ আমরা সবাই বিশ্বাস করি। এ জায়গায় আমাদের কোনো বিভক্তি নেই।

নির্বাচন প্রশ্নে সবকেন্দ্রে যেনো একটাই ইসলামের বাক্স থাকে এমন প্রত্যাশা করে জামায়াত আমীর বলেন, সংষ্কার করে তারপর নির্বাচন এটা আমাদের সবার কথা। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চাইছেন কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে বাজার থেকে মাছ, মাংস, তরিতরকারি কিনে আনি, কাটাকাটি হোক, প্রসেসিং হোক তারপর কড়াইতে চড়াবো।
ভারতে বসে শেখ হাসিনা এখনো ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাতো দৃশ্যমান। আমাদের পরস্পরের জন্য পরস্পরের দুয়ার খোলা। আমরা ভারতের কাছেও সেটা প্রত্যাশা করি। কাটাতারের বেড়া এখন দেয়নি বহু আগে থেকেই শুরু করেছে, এখনও অব্যাহত আছে। এটা আমাদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ফসল। আমরা এটা আর দেখতে চাইনা।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ধারণা করি দেশে ১৮ কোটি মানুষ হবে। এই ১৮ কোটি বনি আদমের শতকরা ১০০ জনের মধ্যে ৯১জন নিজেদেরকে মুসলমান পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু বাকী যারা আছেন তারাও এদেশের মানুষ। ভিন্ন ধর্মের তারা অনুসারী। আবার কিছু নাস্তিকও থাকতে পারে। কিন্তু সব মিলিয়ে আমাদের বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৩ বছর হয়ে গেলেও আমরা সঠিক মর্যাদা পাইনি। এর মূল কারণ হলো দুর্নীতি এবং দু:শাসন। যেখানে আল্লাহতায়ালার বিধান থাকবেনা দুর্নীতি সেখানে অবশ্যম্ভাবী। দু:শাসনও সেখানে দুর্নীতির হাত ধরে আসবে। এই দুই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে আল্লাহর বিধান।

ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ধারণা করি দেশে ১৮ কোটি মানুষ হবে। এই ১৮ কোটি বনি আদমের শতকরা ১০০ জনের মধ্যে ৯১জন নিজেদেরকে মুসলমান পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু বাকী যারা আছেন তারাও এদেশের মানুষ। ভিন্ন ধর্মের তারা অনুসারী। আবার কিছু নাস্তিকও থাকতে পারে। কিন্তু সব মিলিয়ে আমাদের বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৩ বছর হয়ে গেলেও আমরা সঠিক মর্যাদা পাইনি। এর মূল কারণ হলো দুর্নীতি এবং দু:শাসন। যেখানে আল্লাহতায়ালার বিধান থাকবেনা দুর্নীতি সেখানে অবশ্যম্ভাবী। দু:শাসনও সেখানে দুর্নীতির হাত ধরে আসবে। এই দুই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে আল্লাহর বিধান।

চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ইসলামের পক্ষে যেন আমরা একটা বাক্স পাঠাতে পারি। এ প্রচেষ্টা আমাদের আগে পরে চলছে, এখনো অব্যাহত আছে। ৫৩ বছর আমরা যারা ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল মাঠে আছি বিভিন্ন কৌশলে আমাদের দূরে রেখেছে একটি গোষ্ঠি। ৫ আগস্টের পর আমরা যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি এর মাধ্যমে আশা করি ইসলামের পক্ষে ভাল ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। এটা যদি সময়োপযোগী করতে না পারি সেটা আমাদের জন্য অকল্যানকর হবে। আমরা সবাই যেন একত্রিত হয়ে দেশ গড়ার ব্যাপারে কাজ করতে পারি সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আর পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আমাদের সবার দাবী।

 

ইসলামপন্থি এ দুই দলের মধ্যে বিরোধ ছিলো, এখনো আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চরমোনাই পীর বলেন, রাজনীতির মাঠে যারা কাজ করে সেখানে চিন্তার ব্যবধান থাকতেই পারে। আমরা মনে করি এদেশে ৯২ শতাংশ মুসলমান বসবাস করে। ইসলামী আদর্শ এক সময় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাস্তবায়িত হবে। অন্যান্য স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থে অনেকাংশে আমাদের ব্যবহার করেছে। আমাদের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতার মসনদে বসেছে। কিন্তু তাদের দ্বারা ইসলামের পক্ষে কোন ভাল কাজ আমরা লক্ষ্য করিনি। জাতির জন্য পাইনি, দেশের জন্য পাইনি। আমরা আর কারো সিঁড়ি হবোনা, পরগাছা হবোনা। আমরা নিজেরাই ইসলামের পক্ষে একটা শক্তি অর্জন করবো। বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদে ইসলামই থাকবে এটাই আমাদের চিন্তা ছিলো। আমরা আর ব্যবহৃত হতে চাইনা। দুই আমীরের মতবিনিময়কালে সেখানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এ্যাড. মুয়াযযম হোসাইন হেলালসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।