নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে ১৫টি রুটে বাস চলাচল শুরু।
বাস শ্রমিকদের নিরাপত্তা, শিক্ষার্থীদের বাস ভাড়া নির্ধারন এবং কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় আইন হাতে তুলে না নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অভিযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহনের মধ্য দিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এতে করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অভ্যন্তরীন ১৬টি রুটে চলাচলকারী সাধারন যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গতকাল বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসকের কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি তুলে নেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন। এছাড়া সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত বরিশাল সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সহ-সভাপতি মোশারেফ হোসেন সান্টু বলেন, শ্রমিকদের প্রথম দাবি ছিল তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে ছোটখাটো বিষয়ে বাসের শ্রমিকদের উপর হামলা চালানো হয়। একই সাথে বাস এবং বাস সংশ্লিষ্ট কক্ষ ভাংচুরের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এ থেকে পরিত্রানের জোর দাবি জানানো হয়। এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় শুধু শিক্ষার্থী নয়, বাসের যাত্রীর সাথে কোন ধরনের খারাপ ব্যবহার করলে সে ক্ষেত্রে বাস মালিক অথবা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের কাছে অভিযোগ জানাবে। ওই অভিযোগের কোন সমাধান না হলে সে ক্ষেত্রে জেলা অথবা পুলিশ প্রশাসনে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। কোন ক্ষেত্রেই কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারবে না। এ সময় সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলও প্রস্তাব মেনে নেয়। একইভাবে শ্রমিকরাও এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলবে বলে আশ্বাস দেন। মুলত এটিই ছিল শ্রমিকদের প্রধান দাবি।
এ সময় শ্রমিকদেরও যাত্রীদের সাথে ব্যবহার শোভনীয় করার জন্য বলা হয়। যাত্রীদের সাথে এমন কোন আচরন করবে না যা যাত্রীকে কষ্ট দেয়। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। এ বিষয় মালিক থেকে শুরু করে শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে ফলোআপের মধ্যে রাখতে বলেন।
এরপর শিক্ষার্থীদের বাস ভাড়া হাফের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় প্রতি সপ্তাহের ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার কোন হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না। এমনকি সরকারি ছুটির দিনও নির্ধারিত ভাড়ায় চলাচল করতে হবে শিক্ষার্থীদের। জেলা টু জেলায় হাফ ভাড়া কার্যকর থাকবে। কিন্তু জেলা থেকে অন্য কোন উপজেলায় গেলে সে ক্ষেত্রে ৩০ ভাগ কম ভাড়ায় চলাচল করতে হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থী এবং শ্রমিক উভয়কেই আইন হাতে না নেয়ার আহবান জানিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে কোন ধরনের সহযোগীতা না পেলে তার দপ্তরে অভিযোগ দিতে বলেন। এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তা অনেকাংশে কমে আসবে। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা সহ তাদের দাবী বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়া হলে তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন।
প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া বাস কাউন্টারে বিএম কলেজের এক ছাত্রীর ভাড়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সাথে বাগবিতন্ডা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরিশাল নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালে বাস ভাংচুর এবং শ্রমিক ইউনিয়নের অফিস ভাংচুর করা হয়। এ সময় শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের সাথে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্মবিরতি শুরু করে শ্রমিক ইউনিয়ন। যা ৫ জেলার মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দুর্ভোগে পড়েন সাধারন যাত্রীরা। সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশালের মহানগর আহ্বায়ক মো: শাহেদ উপস্থিত ছিলেন।