নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ভাইকে বঞ্চিত করার অভিযোগ খান স্বপন ও ডোস্ট পাম্পের মালিক শাওন খানের বিরুদ্ধে।
বরিশালের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী মৃত আব্দুস সত্তার খানের পুত্র ইমন খানকে পৈত্তিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ও যথাযথ অংশ না দেয়ার অভিযোগ ভাইদের বিরুদ্ধে।
লিখিত অভিযোগে ইমন খান উল্লেখ করেন,আমার পিতা আব্দুস সাত্তার খান মৃত্যুর সময় আমার বয়স ৮ বছর। পিতার মৃত্যুর বিশ দিন পরে আমার আপন ভাই দিল মোহাম্মদ খান স্বপন ও সৎ ভাই ওয়ালি মোহাম্মাদ খান শাওন যোগ সাজসে একটি বে আইনি আপোষ বন্টন নামা করে আমি নাবালক হওয়া সত্ত্বেও আদালত থেকে কোন অনুমতি ছাড়াই বন্টনকৃত সম্পদ থেকে আমার প্রাপ্য অংশ রাখেনি।
dost pamp 7
তিনি উল্লেখ করেন , আমার পিতা আব্দুস সাত্তার খান লাইন রোডে ১০ শতাংশ জমির ওপর ভবন ,সাগরদী গাউসিয়া সড়কে ৯ শতাংশ জমির ওপর ২তলা ভবন,সাগরদীতে ডোস্ট ট্রেডার্স ফিলিং স্টেশন নামে একটি পেট্রোল পাম্প, এম ভি সুপার সনিক ,এম ভি গোলাম রসুল নামে দুটি লঞ্চ,ফকিরবাড়ি সড়কে একটি দোকান,লাইন রোডে একটি দোকান,পোর্ট রোডে মৎস্য বাজারে তিনটি দোকান,৪ টি ট্যাংক লরি,বাংলাদেশ বানিজ্য ভান্ডার নামে একটি চালের আড়ৎ,৪ টি তেলের লাইসেন্স,২টি গ্যাসের লাইসেন্স রেখে গেছেন।
dost pamp 2
ইমন খান অভিযোগে উল্লেখ করেন,আমার পিতা তিন স্ত্রী , ৮ পুত্র ও দুই কন্যা রেখে ২০০৩ সালের ১৩ মার্চ ইন্তেকাল করেন। আমার পিতার মৃত্যুর বিশ দিনের মধ্য সম্পত্তি ভাগ ভাটোয়ারা করা হয়।আমার অংশ না রেখেই।বন্টনে অনেক সম্পত্তির উল্লেখ না করে আমার পিতার সম্পত্তি গোপন রাখা হয়। আমার পিতার সম্পত্তি দিয়ে আমার ভাই দিল মোহাম্মাদ খান স্বপন ৪টি লঞ্চ করেছে।গাড়ি রয়েছে।
আমার সৎ ভাই ওয়ালি মোহাম্মাদ খান শাওন ৭টি পেট্রোল পাম্প করেছে। বিসিক শিল্প নগরী,গড়িয়ার পাড়,কাশিপুর,সাগরদী,কাটপট্টি,ওয়াহেদ স্কুল সংলগ্ন, রুপাতলীতে জমি ক্রয় করেছে।আব্দুল্লাহ পরিবহন নামে ১৮টি বাস ক্রয় করেছে।ঢাকার বসুন্ধরায় ও রাজা বাহাদুর সড়কে জমি ক্রয় ও ভবন নির্মান ও তিনটি প্রাইভেটকার ও একটি মাইক্রোবাস ক্রয় করেছে।
dost pamp 3
অথচ আমার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির কোথাও আমার অংশ না রেখে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে পৈত্তিক সম্পত্তি থেকে। ইমন খান ইতিমধ্যে স্বাক্ষর জালিয়াতি করা,আপোষ বন্টন নামা ও হেবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এ ব্যাপারে ইমন খান তিনি ন্যায় বিচার পেতে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে ওয়ালি মোহাম্মাদ খান শাওন অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন,ইমন ছোট। তাকে লেখাপড়া করানো হয়েছে।বড় ভাইর কাছে ক্ষমা চাইলে সব সমস্যার সমাধান হবে বলে জানান। এ ব্যাপারে দিল মোহাম্মাদ খান স্বপনের সাথে যোগাযোগ করেও তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
dost 5
উত্তরাধিকার বিষয়ে ইসলাম:
কোন মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যুর পর যদি তার সম্পত্তি থেকে থাকে, অর্থাৎ যদি তিনি কোন সম্পত্তি রেখে মারা যান, তবে ঐ সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারদের মধ্যে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বা ফারায়েজ অনুসারে বণ্টন করা হয়ে থাকে।
ওয়ারিশদের সম্পত্তি বন্টনের বিষয়ে মুফতী মাওলানা মাহফুযুল হক বলেন, মহান আল্লাহ সূরা নিসা অবতীর্ণ করে মৃতের সম্পদের সুনির্দিষ্ট বিধিমালা শেষ নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের দান করেন।
এ সূরার দ্বারা তিনি সুনির্দিষ্ট করে দেন, কেউ মারা গেলে তার কোন কোন আত্মীয় তার সম্পদের কতটুকু অংশ পাবে। বিষয়টি মহান আল্লাহর কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এ সংক্রান্ত বিধানগুলো সরাসরি তিনি নিজেই বলে দিয়েছেন।নবীকে পর্যন্ত এখানে বলার কোনো সুযোগ দেননি। ওয়ারিশদের অংশ বর্ণনা করার পর মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘এটা আল্লাহর সীমানা।
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলকে মান্য করবে তিনি তাকে চিরকালের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশে পানির অসংখ্যা ঝর্ণা ও নদী প্রবাহিত। আর এটাই মহা সফলতা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করবে, তার সীমানা লংঘন করবে; তিনি তাকে চিরকালের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। ’ -সূরা নিসা: ১৩-১৪
এমন স্পষ্ট ও শক্ত কথা অন্য কোনো আমলের ব্যাপারে বলা হয়নি। এ আয়াতে সম্পদ বণ্টনের কোরআনি বিধানকে বলা হয়েছে- আল্লাহর সীমানা। আর সীমানা লংঘনকারীর জন্য স্থায়ী জাহান্নামের সতর্কবার্তা শোনানো হয়েছে। তাই এ আয়াতের ভাষ্যমতে, সম্পদ বণ্টনের কোরআনি বিধান অমান্যকারীরা চিরজাহান্নামি। মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি যথানিয়মে বণ্টন করে নেওয়া এবং প্রত্যেকের প্রাপ্য তাকে বুঝিয়ে দেওয়া ওয়াজিব।বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো, অনেক মুসলমানই এসব ব্যাপারে উদাসীন। তাদের জানা উচিৎ সবচেয়ে নির্মম ও নির্লজ্জ জুলুম হলো, আমাদের অধিকাংশ পরিবারে মা-বোন ও যেকোনো নারীর উত্তরাধিকার সম্পত্তি প্রদানে কার্পণ্য ও টালবাহানা করার মানসিকতা।
একজনের মালিকানাধীন সম্পদ অন্য জনের জন্য কখন বৈধ হবে, ইসলাম সে বিষয়ে মূলনীতি বাতলে দিয়েছে। ইসলামসম্মত ব্যবসায় বা অন্যের সন্তুষ্টি ব্যতিরেকে কারো সম্পদ অন্যের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবল তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয়, তা বৈধ।’ (সুরা নিসা; আয়াত : ২৯) কারো ন্যূনতম অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করলে কিয়ামতের দিবসে তারও হিসাব হবে। এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই তোমরা কিয়ামত দিবসে হকদারদের নিকট তাদের প্রাপ্য আদায় করবে। এমনকি শিংবিশিষ্ট ছাগল হতে শিংহীন ছাগলের বদলা নেওয়া হবে।’ (মুসলিম, হা: ২৫৮২) অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামত দিবসে সাত স্তবক জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম, হা: ১৬১০, বোখারি, হা: ৩০২৬) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ওপর কোনো জুলুম করেছে, তার জন্য আজকেই তা ক্ষমা করিয়ে নেওয়া উচিত। যদি ক্ষমা করে না নেওয়া হয়, তাহলে তার নেক আমল থাকলে অন্যায় পরিমাণ কর্তন করে নেওয়া হবে। আর নেক আমল না থাকলে অন্যায় বরাবর পাপের বোঝা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বোখারি, হা: ২৩১৭)।
মুসলিম আইনে উত্তরাধিকারের বিধান:
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে পারিবারিক বিধান ইসলামী আইন দ্বারাই পরিচালিত হয়ে আসছে। মুসলিম পারিবারিক আইনে যেসব বিধান রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মুসলিম উত্তরাধিকার ব্যবস্থা। মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ আইন ১৯৬১ সালে উত্তরাধিকার আইনে মৌলিক কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তবে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সূরা নিসায় বণ্টনের যে নীতি আছে, তার দ্বারাই মূলত উত্তরাধিকার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।