ঢাকাশনিবার , ১২ এপ্রিল ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
এপ্রিল ১২, ২০২৫ ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তার দাবি, এস আলম ও বেক্সিমকোসহ কয়েকটি প্রভাবশালী গ্রুপ এই বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। তবে এ ধরনের অর্থ ফিরিয়ে আনা সময়সাপেক্ষ, এবং প্রয়োজনে আপসের ভিত্তিতে তা ফেরত আনার চেষ্টা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (১০ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে ‘অর্থ পাচার প্রতিরোধ ও সমসাময়িক ব্যাংকিং’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন গভর্নর।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশেই ‘আউট অব কোর্ট সেটেলমেন্ট’-এর মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার দৃষ্টান্ত রয়েছে। সবসময় আইনি প্রক্রিয়ায় গেলে সময় বেশি লাগে। সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলে, দর কষাকষির মাধ্যমে অনেক সময় বেশি অর্থ দ্রুত ফেরত আনা সম্ভব হয়।”

এই লক্ষ্যে বাংলাদেশের কয়েকটি বেসরকারি তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এসব সংস্থা পাচার হওয়া সম্পদের অবস্থান খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি সংস্থার সঙ্গে আইনি কাঠামোর ভেতরে থেকে আলোচনা করা হবে।

চট্টগ্রামের একটি প্রভাবশালী গ্রুপের নাম উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “শুধু এস আলম গ্রুপই প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। বেক্সিমকোসহ আরও কয়েকটি গ্রুপকে ধরলে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ২.৫ থেকে ৩ লাখ কোটি টাকার মধ্যে দাঁড়ায়।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে দেশে পাঁচ লাখ কোটি টাকার মতো ‘নন-পারফর্মিং লোন’ রয়েছে, যার একটি বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতের সহায়তা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

অর্থ পাচারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে গভর্নর বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে দায়ী করা সম্ভব নয়। তবে কোনো সংস্থা আমাদের কাছে প্রমাণসহ অভিযোগ দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গভর্নর আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে, রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহও সন্তোষজনক। তিনি বলেন, “ইসলামী ব্যাংকসহ যেসব ব্যাংক একসময় দুর্বল ছিল, তারাও এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে।”

ড. আহসান মনসুর বলেন, “বাংলাদেশ মানি লন্ডারিংয়ের বড় ভিকটিম। এই দেশে কিছু পরিবার এবং গোষ্ঠী ব্যাংকিং ব্যবস্থার ফাঁকফোকর দিয়ে সম্পদ বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য সেই সম্পদ ফিরিয়ে আনা। তবে ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

 

তিনি বলেন, “এ ধরনের অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। এটি শুধু দেশের আইন দিয়ে সম্ভব নয়, আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করে এগোতে হবে। আমাদের শেখার জায়গা আছে, আর সেই শেখা এখন শুরু হয়েছে।”