
নিজস্ব প্রতিবেদক :: জুলাই আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা দাবিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষকদের একটি অনলাইন মিটিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দেশব্যাপী বইছে তুমুল সমালোচনার ঝড়। নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝেও।
গত বছরের ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের ঐ ভিডিওতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড.বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ভাইরাল অনলাইন সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে যেকোনো উপায়ে সরকার পতন ঠেকাতে বদ্ধপরিকর হন শিক্ষকরা।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম উপস্থাপনা বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আজকে জরুরি ভিত্তিতে কেন জুম মিটিং আয়োজন করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের শিক্ষক সমিতির সম্মানিত সভাপতি ড. বাতেন চৌধুরী পুরো বিষয়টা নিয়ে কথা বলবেন। এরপরে স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা একেকজন আলাদা করে কথা বলব।’
এরপর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবদুল বাতেন চৌধুরী উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়াসহ (সাবেক) অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, দেশ এই মুহূর্তে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই ক্রান্তিকালে আমাদের সকলের অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে।’
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করেছেন উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঘোষিত এক দফার কোনো যৌক্তিকতা নেই, আমি বিশ্বাস করি না। আমি এই আন্দোলনে যারা নেমেছে তাদের ঘৃণা করি, এই আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করি। অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, আমরা সকলেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগকৃত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি তারা যার যার অবস্থান থেকে আজ আমরা শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়াতে চায়। আজকে আমাদের সময় এসেছে শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়ানোর।
এ সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবদুল বাতেনের বক্তব্যের পর একে একে অন্যান্য শিক্ষকরাও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেন এবং ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন বাদে বাকি সবাই অধ্যাপক বাতেনের সঙ্গে একমত পোষণ করে শেখ হাসিনার পক্ষে তাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করতে থাকেন।
বক্তব্য প্রদান কালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিল আফরোজ খানম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘গত দুদিন ধরে স্যার আমার গলা ধরে আসছে কথা বের হচ্ছে না। আমার সোজা কথা স্যার এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেয়। আমি এটাতে বিশ্বাসী।’
এ সময় ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন তাদের সঙ্গে একমত পোষণ না করে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিলে তোপের মুখে পড়েন। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একটা জায়গায় আমরা সবার একমত ছিলাম যে আমাদের শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই আহত হবে না, হয়রানি হবে না, গুলিবিদ্ধ হবে না আমরা তাদের আগলে রাখবো। আমরা এখনও সেই দাবিতেই থাকতে চাই।
মুহসিন উদ্দীনের এই বক্তব্য প্রদানের কারণে ড. মো. খোরশেদ আলম, ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম ও ড. মো. আবিরসহ বেশ কিছু শিক্ষক তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
- ভাইরাল ওই গোপন সভার ভিডিওতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নিয়েছিলেন।