
নিজস্ব প্রতিবেদক :: তথ্য গোপন করে চাকরি নেয়া ইমরান এখনো বহাল তবিয়তে।
এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে বিয়ের তথ্য গোপন করে ফায়ার সার্ভিস ডিফেন্স সিভিলে স্টেশন অফিসার পদে বিধি বহির্ভূতভাবে চাকুরী নেয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর ইমরান হোসেন। অথচ তথ্য গোপন করে চাকরি নেয়া ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম, প্রতারণা, এবং পরকীয়ার অভিযোগ। অভিযোগের প্রায় চার বছর পার হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে ইমরান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সরজমিন সূত্রে জানা যায়,
২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট ভাবে বলা আছে প্রার্থীর দেয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হলে যে কোনভাবে নিয়োগ বাতিল হবে। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছর অতিক্রম হলে ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার পদে চাকুরীরত কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বিয়ের তথ্য গোপন রেখে চাকুরী করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে স্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্ত কমিটি হয়। তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন মহাপরিচালকের অধিদপ্তর জমা দিয়েছে। কিন্তু এখনো সে বহাল তবিয়তে রয়েছে। বর্তমানে তিনি সহকারী পরিচালকের দপ্তর, কর্ণফুলী ইপিজেড ফায়ার স্টেশন, চট্টগ্রামে কর্মরত আছেন।
ইমরান হোসেন বরিশাল ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের মৃত এনায়েত হোসেনের পুত্র। ২০১৬ সালে ইমরান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকার মিরপুরে ট্রেনিং শেষে ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তিনি অফিসার পদে মিরপুর অফিসে যোগদান করেন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ১৫ অক্টোবর ২০১৫ খ্রি. এফএসওসিডি/৩৪/২০১৫ (প্রঃ)/১০২৮৭ নং স্বারকের মাধ্যমে দুটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।
ধুরান্দার ইমরান সকল ধরনের কর্মকাণ্ডে নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে বিয়ের তথ্য গোপন রাখেন।
ইমরানের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী একই উপজেলার ইন্দ্রপাশা গ্রামের মানিক হাওলাদারের মেয়ে মিয়াদ আক্তার জানান, আমাদের ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল বিয়ে হয়। এবং ১৬ সালে ইমরান ফায়ার সার্ভিসে যোগদান করেন। তারপর থেকে ইমরান আমার সাথে নিয়মিত অপরাধ ও প্রতারণামূলক আচরণ করে। আমি নিরুপায় হয়ে ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর মহাপরিচালকের বরাবরের লিখিত অভিযোগ করি, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হয়। এবং সেখানে আমি পরকীয়া ও বিভিন্ন অপরাধের প্রমাণ তাদেরকে দেই। ইমরান দোষী সাব্যস্ত হয়, কিন্তু মহাপরিচালক তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। গত ১৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আমি পুনরায় মহাপরিচালকের অধিদপ্তরে যাই। শেষ সময় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক না থাকলে আমি ডাইরেক্টর প্রশাসন স্যার এর সাথে দেখা করি। তখন স্যার বলেন তোমার অভিযোগের থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইমরান অনিয়মের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসে যোগদান করেছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রস্তুত রয়েছে। শুধু মহা পরিচালকের স্বাক্ষর বাকি আছে। দুঃখজনক হলো অভিযোগের চার বছর পার হয়ে গেল এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ইমরান শুধু আমার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এমনটা নয় সে বাংলাদেশ সরকারের সাথে প্রতারণা করেছে।
সূত্র জানায়,ইমরান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। চাকুরী সময় আওয়ামী লীগের দোসরদের তদবিরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার চাকরির সুযোগ মিলে।১৯৯৯ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী স্টেশন অফিসার পদে চাকরি পাওয়ার অন্যতম শর্ত হলো তাকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। কিন্তু ইমরান নিয়োগ বিধির শর্ত ভঙ্গ করে স্টেশন অফিসার হিসেবে চাকরিতে প্রবেশ করেছে।
এর পূর্বেও এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন স্হানীয় জাতীয় পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছে এই সূত্র থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং ঝালকাঠি জজ কোর্টের এ্যাডভোকেট শামীম আকন, মহাপরিচালক বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠান এবং সেখানে মহাপরিচালককে ফায়ার সার্ভিসের বিধি মোতাবেক ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্ট আইন অনুযায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন কিনা?তাহা আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিলো।
এ বিষয় বরিশাল ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সহকারী উপ-পরিচালক বেলাল হোসেন জানান,….. ইমরান হোসেনের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি আমি তদন্ত করেছি। বিয়ের পর ইমরানের চাকুরী হয়েছে, সে মর্মে আমি কাবিন নামাও দেখেছি। তদন্ত রিপোর্ট আমি মহা পরিচালকের অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি।আমার হাতে কিছু নেই। দোষী সাব্যস্ত হলে অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেবে।
ইমরান হোসেন জানান, আমার স্ত্রীর সাথে আমার পারিবারিক বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। একটা মামলা খারিজ হয়ে গেছে। সে আরেকটা মামলা দিয়েছে। অভিযোগের পর আমি অনেকদিন সাময়িক বরখাস্ত ছিলাম। চাকুরীর আগে বিবাহ বিষয়টি নিয়ে বলতে তিনি নারাজ।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ জাহিদ কামাল মুঠোফোনে জানান, তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনীকার্য চলমান রয়েছে।