
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে গ্রাম্য ডাক্তারের অপচিকিৎসায় দুই চোখই হারালেন নারী।
বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীর বাউফলে এক গ্রাম্য ডাক্তারের অপচিকিৎসায় ফাতেমা বেগম (৬০) নামের এক নারীর দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। অভিযুক্ত ওই গ্রাম ডাক্তারের নাম কাজি মাসুদ রানা (৩৬)।
×
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ফাতেমা বেগম নাকের ভিতর একটি ছোট টিউমার নিয়ে গ্রাম্য ডাক্তার মাসুদের কাছে গেলে তিনি পলিপাস বলে রোগীকে জানান। চিকিৎসার জন্য প্রথমে ১২ হাজার টাকা দাবি করলেও পরে ৭ হাজার টাকায় পরিবারটি চুক্তিবদ্ধ হয় ওই ডাক্তারের সাথে।
৩১ জুলাই রোগীর পলিপাসের চিকিৎসা দেন ডাক্তার কাজি মাসুদ রানা। একদিন পর রোগী অসুস্থ বোধ করলে ২ আগষ্ট রোগীকে নিয়ে আবার ওই ডাক্তারের কাছে যায় তাঁর পরিবার। ওই দিন তাঁর পলিপাসটি অপারেশনের মাধ্যমে কেটে ফেলেন ওই ডাক্তার। এসময় তার নাকের ভিতর ব্যাপক রক্তক্ষরণ হতে থাকে এবং অপারেশনের পর ওই নারীর চোখে সমস্যা দেখা দেয়।
পরের দিন আবার মাসুদের কাছে গেলে তিনি চোখের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন। এরপর তাঁরা চক্ষু ডাক্তারের কাছে গেলে চিকিৎসক রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন।
রোগীর স্বামী আবদুস সালাম বলেন, ঢাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ক্ষতস্থান ও উভয় চোখে ক্যান্সার দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তার স্ত্রী মৃত্যুশয্যায়।
অভিযুক্ত গ্রাম্য ডাক্তার মাসুদ নিজেকে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) দাবি করলেও তাঁর সাইনবোর্ডে গ্রাম্য ডাক্তার লেখা রয়েছে। যার রেজিষ্ট্রেশন নং ঢ ০২৪৫৪ উল্লেখ করা হয়েছে।
ডাক্তার কাজি মাসুদ রানা ওই নারীকে চিকিৎসার কথা স্বীকার করে বলেন, তিনি হোমিও চিকিৎসার মাধ্যমে ওই নারীর নাকের পলিপাস অপসারণ করেছেন। ‘গ্রাম্য ডাক্তার হয়েও হোমিও চিকিৎসা কীভাবে দিচ্ছেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখতে দেখতে শিখেছেন। হোমিও চিকিৎসার কোনো সনদ আছে কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ‘নেই’।
তবে জানা যায়, অভিযুক্ত ডাক্তার হোমিও চিকিৎসা দিয়েছেন বললেও তিনি অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা দিয়েছেন এবং রোগীকে এন্টিবায়োটিকসহ অনন্য ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিয়েছেন।
গ্রাম্য ডাক্তার মাসুদ অপারেশন চিকিৎসায় ব্যবহার করেছেন ‘এসিড নাইট ম্যথার (Acidum nitricum)’ নামক একটি মেডিসিন। ব্যবহৃত মেডিসিনের বিষয়ে হোমিও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘এই মেডিসিন আমি ব্যবহার করি না। কেন ব্যবহার করা হয় তা আমি জানি না।’
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন মো খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, সে (অভিযুক্ত ডাক্তার মাসুদ) কোনোভাবে ওই চিকিৎসা দিতে পারে না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।