
নিউজ ডেস্ক :: কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের একান্ত সহচর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ৫নং শাঁখারীকাঠী ইউপি চেয়ারম্যান মো. খালিদ হোসেন (সজল) ও ২ নং মালিখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রুহুর আমিন বাবলু দাড়িয়ার ‘রাজত্ব’ বহাল রয়েছে। এখনো তারা এলাকায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাব দেখাচ্ছেন।
বিগত ১৬ বছরের মতো এখনো এসব ইউপি চেয়ারম্যান এলাকার সব সালিশ-দরবার এবং অবৈধ ইটের ভাটা বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে এলাকার জনসাধারণের মাঝে ফ্যাসিবাদের আতঙ্ক কাটেনি।
আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে সব ধরনের অপকর্ম করে এই ইউপি চেয়ারম্যানরা এখনো কীভাবে বহাল তবিয়তে থাকেন, এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে তারা রামরাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।
রুহুল আমিন বাবলু দাড়িয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যের জমি দখল করে চালিয়ে যাচ্ছে ইটভাটা। অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে প্রশাসনের নেই কোনো কার্যকরী ভূমিকা। তবে প্রশাসন বলছে, একবার জরিমানা করেছি একটি ভাটায়। মৌখিকভাবে বন্ধের নির্দেশও দিয়েছি, জমি দখলের অভিযোগ মৌখিকভাবে পেয়েছি, আমরা দ্রুতই ইটভাটায় আবারও অভিযান চালাবো।
এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ২০২৩ সালেই হয়েছে মেয়াদ উত্তীর্ণ। জেলা প্রশাসক কর্তৃক লাইসেন্সের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৩ সালে। অবৈধ ইটভাটর এসব অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এবং টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশ হলেও টনক নড়ছে না উপজেলা প্রশাসনের।
মালীখালী গ্রামের বিধুর চৌধুরী বলেন, সরকারি কবুলিয়ত প্রাপ্ত জমি পেয়েও ভোগ করতে পারছি না, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে দখল করে নিয়েছে আমার জমি। আপনাদের কাছে বললে হবে কী, আপনারা কিছুই করতে পারেন নাই। ৫ আগস্টের পরেও আমরা আমাদের জমি ফেরত পাই না।
এই ইটভাটা অসহায় দরিদ্র মানুষের কবুলিয়ত প্রাপ্ত জায়গা দখল করে বীরদর্পে চলছে। দেশে সরকার বদল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বদলায়নি ফ্যাসিবাদি কর্মকাণ্ড। কারণ তাদের শেল্টার দিচ্ছে অদৃশ্য শক্তি।
এদিকে নানা অপরাধে জড়িত ৫নং শাঁখারীকাঠী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন সজল এখনো বীরবেশে পরিষদ চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ থাকাকালীন স্থানীয় এক হিন্দু ব্যক্তিকে (হরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী) মৃত ও বেওয়ারিশ দেখিয়ে তারই বোন বিল্লু বাসিনীর দুই পুত্রসন্তানকে (সতীন্দ্রনাথ রায় ও জীতেন্দ্রনাথ রায়) ওয়ারিশ দেখিয়ে ওই এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেনের স্ত্রী হেনা বেগমসহ সাতজন গ্রহীতাকে (সতীন্দ্রনাথ রায় ও জীতেন্দ্রনাথ রায়) দাতা বানিয়ে মোট ১৪২ শতাংশ জমির একটি দলিল করিয়ে দেন।
জানা গেছে, হরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী জীবিত রয়েছেন এবং তার দুই পুত্র রাম চন্দ্র মিস্ত্রী ও রমেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী রয়েছেন। বর্তমানে তারা ভারতে বসবাস করছেন।
এদিকে হরেন্দ্রনাথ মিস্ত্রী ২০০৪ সালের ৫ ডিসেম্বর জোহরা বেগমের নিকট ২৯৪৬ নং সাব কবলা দলিল মূলে ৫৯ শতাংশ জমি কবলা দেন এবং একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর ৩১৯৩ নং সাব কবলা দলিল মূলে তোফাজ্জল হোসেনের কাছে ৫৯ শতাংশ জমি কবলা দিয়া দখল বুঝিয়ে দেন এবং একই লোকের কাছে ৬১ শতাংশ জমি সব কবলা চুক্তিনামা দিয়ে যায়। একই জমি উক্ত ইউপি সদস্য জাকির হোসেন ও চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন সজল জাল ওয়ারিশ তৈরি করে জাকিরের স্ত্রীসহ সাতজনের নামে একটি জাল দলিল করে, যার নং-২৭২৫।
ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান খালিদ হোসেন সজল ও সদস্য মো. জাকির হোসের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাদের ফোনে পাওয়া যায়নি।
গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর শ.ম রেজাউল করিম আত্মগোপনে থাকলেও তার অনুসারী চেয়ারম্যানরা এলাকায় বহাল তবিয়তে আছেন। এমনকি অবৈধ সব ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ধরে রেখেছেন এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সব অবৈধ সম্পত্তি পাহারা দিচ্ছেন।
এ তালিকায় হাফ ডজন ইউপি চেয়ারম্যান ও অর্ধশত ইউপি সদস্য রয়েছেন। তবে তারা সবাই যে সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের অনুসারী, এমনটি নয়। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম আউয়ালের অনুসারীরাও।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা জানান, এসব ইউপি চেয়ারম্যান বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি জমি দখল, সাধারণ মানুষের জমি দখল, চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ।
এদিকে গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন হলে কয়েক দিনের জন্য থমকে যান এই চেয়ারম্যানরা। এক সপ্তাহের মধ্যেই রহস্যজনক কারণে আবারও তারা অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন। দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন কার্যক্রম।
এলাকার লোকজন বলছেন, দেশে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও নাজিরপুরে এখনো আ.লীগের সংসদ সদস্য শ.ম রেজাউলের পরিবারের আধিপত্য এবং আওয়ামী লীগের শাসন চলছে। ফ্যাসিস্ট পতনের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রশাসনিক ভূমিকা দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির ডজন খানেক নেতা জানান, আ.লীগের এসব চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদেরসহ অনেক নেতাদের আমাদের দলের লোকজনের সঙ্গে আঁতাত রয়েছে। যার ফলে প্রশাসনেরও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন তারা।
উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. আবু হাসান খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হঠাৎ আওয়ামী লীগের ব্যাপক আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। নিরব ভূমিকায় প্রশাসন। কোন অদৃশ্য শক্তির বলে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা আমার জানা নাই। এরা মাদক ব্যবসাসহ সকল প্রকার অবৈধ ব্যবসা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। এ বিষয়ে প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। এদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।’
নাজিরপুর থানার ওসি মো. মাহামুদ আল-ফরিদ ভূঁইয়া বলেন, ‘তাদের দুজনের নামেই মামলা রয়েছে এবং দুজনেই জামিনে রয়েছেন।’