
নিউজ ডেস্ক :: বরগুনার পাথরঘাটায় কাবিখা, কাবিটা ও টিআর প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় প্রায় ৪ কোটি ২১ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন হলেও বাস্তবে অনেক জায়গায় কোনো কাজের চিহ্নই নেই। স্থানীয়রা বলছেন—কাজ না করেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের কাগজে-কলমে কাজের অস্তিত্ব থাকলেও বাস্তবে তার কোনো ছাপ নেই।
এমনকি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি প্রকল্পে সাইনবোর্ড স্থাপন বাধ্যতামূলক হলেও কোথাও তা দেখা যায়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ১৫০টি প্রকল্পের জন্য ৪ কোটি ২১ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কিন্তু অনুমান করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে মাত্র ৪০-৫০ লাখ টাকার কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো স্থানে কাজের পরিমাণ ১০ লাখ টাকাতেও পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের বরইতলা গ্রামে খাইরুল ইসলামের বাড়ি থেকে ছগির মিনার বাড়ি পর্যন্ত সড়কে মাটি ভরাটের জন্য ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি।
আশরাফ আলীর বাড়ি থেকে কবির দফাদার বাড়ি পর্যন্ত সড়কে দুইটি প্রকল্পে প্রায় ১১ লাখ টাকার চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেখানেও কোনো কার্যকর উন্নয়ন চোখে পড়ে না। একইভাবে মাছরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে ২ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও, প্রধান শিক্ষক শিখা রানী অধিকারী জানান, বিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন সময়ে স্থানীয় সদস্য এক জাহাজ বালু ফেলে গেছেন, যার বাজারমূল্য মাত্র ১৫ হাজার টাকা।
প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ম অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি একাধিক প্রকল্পের সভাপতি হতে পারেন না। কিন্তু সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান সগীর আলমের নামই ৯টি প্রকল্পে সভাপতি হিসেবে দেখা গেছে। অভিযোগ উঠেছে, তিনিই এসব প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছেন।
বরইতলা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম হাজী, সগীর, সাহিন পঞ্চায়েত ও আবুল কালাম বলেন, “গত দুই বছরে কোনো কাজ হয়নি। চোর পালানোর পর আমরা ভেবেছিলাম অবস্থা বদলাবে, কিন্তু এখন তো আরও বড় চোর এসে বসেছে।” প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কার্যসহকারী মোঃ স্বপন বলেন, “সব কাজ পিআইও করেছেন। তিনি নিজে সব বিল পাস করেছেন। আমি কিছুই জানি না।”
পিআইও রুনু বেগম অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে অফিস ত্যাগ করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, “যে প্রকল্পের কাজ হয়নি, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাজ না হলে আইন অনুযায়ী টাকা ফেরতের বিধান রয়েছে।” পাথরঘাটা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী মো. ফারুক বলেন, “এ ধরনের দুর্নীতির নজির আর কোথাও আছে কিনা জানা নেই। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও আইনি ব্যবস্থার দাবি জানাই।” কথিত উন্নয়নের নামে কাগজে-কলমে কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও মাঠপর্যায়ে সেগুলোর বাস্তবতা চরম হতাশাজনক।
স্থানীয়দের দাবি, এসব প্রকল্পের কার্যকর তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, না হলে জনগণের ট্যাক্সের অর্থ এভাবেই লুট হতে থাকবে।