ঢাকাবুধবার , ১৩ আগস্ট ২০২৫

প্রাইভেটকারে জোড়া ম*র*দে*হ এখনো রহস্যে ভরা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ১৩, ২০২৫ ২:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: রাজধানীর মৌচাকের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বেসমেন্টের পার্কিংয়ে থাকা প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনাস্থল ও প্রাইভেটকারে প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে মামলা করার কথা জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে গতকাল রাজধানীর শাহবাগ থানায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা সিসি ফুটেজের পুরোটা দেখার চেষ্টা করেছি। ভিডিওতে এখন পর্যন্ত ওইভাবে আমরা কাউকে পাইনি। তবে হাসপাতালের দুজন কর্মচারীকে পেয়েছি, হাসপাতালে কোনো স্মোকিং এরিয়া না থাকায় তারা নিচে গিয়ে স্মোকিং করে এসেছেন। তাদের দুজনের সঙ্গেই আমরা কথা বলেছি। সেখানে তাদের সঙ্গে জড়িত কোনো কিছু মনে হয়নি। অস্বাভাবিক কোনো কিছু এখন পর্যন্ত মনে হয়নি।’

পুলিশ বলছে, মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন, কেমিক্যাল এক্সামিনেশন, সিআইডির তদন্তসহ অন্যান্য বিষয় দেখে মৃত্যুর কারণ খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত সোমবার দুপুরে হাসপাতালটির পার্কিংয়ের একটি প্রাইভেটকার থেকে জাকির হোসেন ও মিজানুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনে রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন উল্লেখ করেন, ‘তাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফোলা ও ফোসকা পড়া। এ ছাড়া মুখ লালচে, ফোলা ও রক্তমাখা। প্রাথমিকভাবে তাদের মৃত্যুর কোনো কারণ উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে।’ গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলে তাদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিহত গাড়িচালক জাকির হোসেনের বাবা মো. আবু তাহের মঙ্গলবার মর্গের সামনে বলেন, ‘আমার ছেলের কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়াঝাঁটি নাই। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। কারা তাকে মেরেছে, তাও জানি না। তবে, দুই বছর আগে আমেরিকা যাওয়ার জন্য এলাকার এক দালালকে টাকা দিয়েছিলাম। সেই দালাল তাদের নিয়ে এসেছিল ঢাকায় পল্টনে এক ট্র্যাভেল এজেন্সির ফজলু নামে এক ব্যক্তির কাছে। সব মিলিয়ে তখন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর জাকিরকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অবৈধ পথে আমেরিকা পাঠানোর কথা ছিল। তবে পারেনি। এরপর আরও কিছু টাকা দিয়ে তাকে আমরাই দেশে ফেরত আনি।’ নিহত মিজানুরের ভাগিনা মো. রিয়াদ বলেন, ‘আমার মামা মাছের খামার করছিলেন। জাকির আর মিজানুর দুই বন্ধু। জাকির প্রাইভেটকার চালাতেন, আর প্রায়ই মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন, তাকেও গাড়ি চালানো শেখাতেন। শনিবার রাতেই তারা দুজন, গাড়ির মালিক ও মালিকের স্ত্রীর বড় ভাই গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। গাড়ির মালিকের স্ত্রীর বড় ভাই ওইদিন রাতেই বিদেশের ফ্লাইট ছিল। বিমানবন্দর থেকে মেডিকেলে যান জাকির ও মিজান। একজন রোগী নিয়ে পরদিন গ্রামে ফেরার কথা ছিল। এরপর কী হয়েছে আমরা জানি না। তবে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে এটা বুঝতে পারছি।’

হাসপাতাল মর্গে এসেছিলেন প্রাইভেটকারের মালিক জোবায়েদ আল মাহমুদ সৌরভ। সেদিনের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিন মাস ধরে তার প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালান জাকির হোসেন। গত শনিবার রাতে তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের ইতালির ফ্লাইট ছিল। এ কারণে তারা দুজনসহ গাড়িচালক জাকির হোসেন ও মিজানুর রহমান গাড়িতে করে ঢাকায় আসেন। তার স্ত্রীর বড় ভাইকে বিমানবন্দরে নামিয়ে তিনজন তাদের গ্রামের এক ভর্তি রোগীকে নিতে মৌচাকের হাসপাতালে যান। ওই রোগীকে রোববার বেলা ১১টায় ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ছিল। ভোরে হাসপাতালে পৌঁছায় সৌরভ বাসে করে বাড়ি চলে যান। আর জাকির ও মিজানুর সকালে রোগীসহ গ্রামে ফিরবেন। বিকেলে জাকিরকে ফোন দিলে কেউ রিসিভ করেনি। এরপর অনেকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। সোমবারও যোগাযোগ করতে না পেরে মিজানের নম্বর সংগ্রহ করে ফোন দিয়েও পাননি। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে রমনা থানা পুলিশ তাকে ফোন করে জানায়, হাসপাতালের পার্কিংয়ে তার গাড়ির ভেতর থেকে দুজনের লাশ পাওয়া গেছে। পরে তাদের পরিবারকে জানায় এবং সোমবার রাতে সবাই ঢাকায় আসি।’

মৃত্যুর কারণ ও নিহতদের স্বজনদের অভিযোগের বিষয়ে ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে কেমিক্যাল এক্সামিনেশনও হবে, সিআইডির তদন্ত একসঙ্গে করলে আমরা ঘটনাটা বুঝতে পারব। এর বাইরে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন বিষয় থাকতে পারে। আমরা তাদের বিষয়গুলোও নেব এবং তদন্ত করব। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নেবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও অন্যান্য বিষয় আরও পর্যবেক্ষণ করে হত্যার কোনো আলামত পাওয়া গেলে, সেটা হত্যা মামলা হিসেবে নেওয়া হবে।’