ঢাকারবিবার , ১৭ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জুলাই অ*ভ্যু*ত্থা*ন অ*ধ্যা*য় আ*ট*কে দেন অপসারিত সচিব সিদ্দিক জুবায়ের

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ১৭, ২০২৫ ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে ২০২৪ সালের ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস অধ্যায়’ যুক্ত করার প্রক্রিয়া আটকে দেন সদ্য অপসারিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জুবায়ের। সরকার ও ন্যাশনাল কারিকুলাম কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এনসিসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সালে ষষ্ঠ-দশম শ্রেণির ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় দুটি বইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল। সচিব জুবায়েরের অপসারণের পর এখন সেগুলো যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এনসিটিবির তথ্যমতে, ২০২৪ সালে জুলাইয়ের ঐতিহাসিক ঘটনাকে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য বইয়ের কিছু অধ্যায়ে প্রাসঙ্গিকভাবে ‘জুলাই আন্দোলন’ খণ্ডিত অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ের ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক লেখায় এবং ষষ্ঠ শ্রেণির ‘চারুপাঠ’ বইয়ে ‘কার্টুন, পতিত সরকারের ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ শিরোনামে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় জুলাইয়ের সেই সময়ের বাছাই করা কিছু গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়। সিদ্ধান্ত ছিল ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ-দশম শ্রেণির ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের বইগুলোয় এ ঘটনাবলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ একটি পৃথক ও ধারাবাহিক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে (অধ্যায়) অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসে ঘটে যাওয়া এ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে জানানো হবে।

এ ছাড়া সদ্য পাস করা মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাস শুরু করবে। এ পর্যায়ের সব বই শিক্ষার্থীদের কিনে পড়তে হয়। এর মধ্যে বাংলা ও সহপাঠ, ইংলিশ ফর টুডে ও আইসিটি—এই তিনটি বইয়ের স্বত্ব এনসিটিবির। সংস্থাটি প্রতি বছর দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রেতা বা পরিবেশক নিয়োগ করে। বেসরকারি প্রকাশকরা এসব বই বাজারজাত করে থাকে। এসব বইয়ের জুলাই অধ্যায় আটকে যায়। সচিব অপসারণের পর সেই বইগুলোয় জুলাই অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক রিয়াজ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আগে জুলাই অধ্যায়ের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত ছিল, সেটি আমার জানা নেই। তবে এখন একাদশ শ্রেণিতে জুলাই অধ্যায় যোগ হচ্ছে সেটা জানি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ জুন ২০২৬ সালের জন্য পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি সভা হয়। সেখানে বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দা সুলতানা রাজিয়া এবং আমান উল্লাহ ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবনা দেন। এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ে বেশকিছু সংশোধনীর মতামত দেন। দুই সদস্য সেই প্রস্তাবনার ভিত্তিতে এনসিটিবি জুলাইয়ের অধ্যায় যুক্ত করাসহ একটি খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। শিক্ষা উপদেষ্টার এ বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও সাবেক শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়ের সেই সিদ্ধান্ত আটকে দেন। তিনি জানান, পাঠ্যবইয়ে এ ধরনের অধ্যায় যুক্ত করতে হলে সরকারের আরও উচ্চ মহলের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। সর্বশেষ অপসারিত হওয়ার দুদিন আগে এনসিটিবি থেকে এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে সচিব জুবায়ের জানান, এখন সময় নেই। তাই এসব অধ্যায় বইয়ে যুক্ত করা সম্ভব নয়।

এনসিটিবি জানিয়েছে, তারা ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বইয়ের দরপত্র মূল্যায়ন শেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আর নবম শ্রেণির বইয়ের দরপত্র প্রক্রিয়া ১৫ আগস্ট শুরু হবে। শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দরপত্রের ক্ষেত্রেই এক মাসের বেশি সময় লাগবে। কারণ, দরপত্রগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য যাবে। এরপর মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন হবে, যেখানে ২৮ দিনের সময়সীমা নির্ধারিত থাকবে। অর্থাৎ, এনসিটিবির হাতে কার্যত আরও এক থেকে দেড় মাস সময় আছে। তবুও সময় সংকটের অজুহাত দেখিয়ে অপসারিত সচিব জুলাই অভ্যুত্থান অধ্যায়গুলো আটকে দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (কারিকুলাম) ও চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ন্যাশনাল কারিকুলাম কমিটির (এনসিসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ষষ্ঠ-দশম শ্রেণির ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সংবলিত লেখা চাওয়া হয়েছে। আমরা সেগুলো পাঠিয়েছি। অনেকদিন ধরে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো আপডেট দেয়নি। এরপর আমি কিছু জানি না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, সচিব এসব বিষয়ে আগ্রহ কম দেখানোয় আমরাও সেভাবে আগাইনি। সচিবকে পাশ কাটিয়ে এনসিটিবি থেকে অভ্যুত্থানের অধ্যায়গুলো আনা হলেও সচিব তা আটকে দেন সময় নেই বলে।

এনসিটিবির কারিকুলাম উইংয়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, গত বছর সিদ্ধান্ত ছিল কয়েকটি বইয়ে জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের ইতিহাস, গ্রাফিতি, ছবি যুক্ত করায়। কিন্তু পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক সাজ্জাদুর রহমান ওরফে রাখাল রাহার হস্তক্ষেপে তা বাধার মুখে পড়ে। পরে তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং এক সচিবের চেষ্টায় বাংলা ও ইংরেজি বই এবং প্রাথমিকভাবে স্বল্প পরিসরে কয়েকটি বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের ইতিহাস, গ্রাফিতি, ছবি যুক্ত করা হয়। রাখাল রাহা পাঠ্যবইয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী, জাতীয় পতাকাকে বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় নিয়ে যাওয়া, পাঠ্যবইয়ে আওয়ামী লীগকে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করে নতুন নতুন বিতর্ক জন্ম দেন। এতে চরম বেকায়দায় পড়ে এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাধ্য হয়ে কারিকুলাম কমিটিতে থেকে তাকে অপসারণ করা হয়। রাখাল রাহা অপসারণ হলেও তার অনুসারী হিসেবে কাজ করছেন কারিকুলাম উইংয়ের ডজনখানেক কর্মকর্তা। যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পদায়ন পাওয়া। তারা চান না কোনোভাবেই জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হোক। ২০২২ সালের বিতর্কিত কারিকুলাম যেটি বতর্মান সরকার বাতিল করেছে, তাদের হাতেই দেওয়া হয়েছে নতুন কারিকুলাম এবং জুলাই অধ্যায় যুক্ত করায় দায়িত্ব।

জানা গেছে, বিতর্কিতদের হাতে নতুন কারিকুলামের দায়িত্ব দিয়েছেন বর্তমান এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তাদের সাচিবিক সহায়তা করছেন সচিব মো. সাহতাব উদ্দিন। ২০২২ বিতর্কিত কারিকুলামের মাস্টারমাইন্ড বলা হয় ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ জেসমিন রুমিকে। জেসমিন রুমিসহ কারিকুলামের সঙ্গে যুক্ত আরও কয়েকজনের বদলির ফাইল শিক্ষা উপদেষ্টার পিএসের মাধ্যমে তদবির করে আটকে দেন এনসিটিবি সচিব—এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগপন্থি কর্মকর্তাদের বেশি প্রশ্রয় দেওয়া, কেনাকাটায় বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।