ঢাকাবুধবার , ১২ নভেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল-৫ আসনে বিএনপির শক্তির প্রতীক : অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ১২, ২০২৫ ১:১২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল-৫ আসনে বিএনপির শক্তির প্রতীক : অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার।

বরিশালের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন কিছু নাম রয়েছে, যারা শুধু পদ-পদবি দিয়ে নয় প্রভাব, ত্যাগ, নেতৃত্ব, জনপ্রিয়তা ও দীর্ঘদিনের অবদানের মাধ্যমে নিজেদেরকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছেন। সেই কিংবদন্তিদের তালিকায় সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার যাকে বরিশালবাসী ভালোবেসে ডাকে ‘দাদু’ নামে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চারবারের সংসদ সদস্য এই বর্ষীয়ান নেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তিন দশকেরও বেশি সময়জুড়ে বিস্তৃত। বরিশাল -৫ আসন এবং বরিশাল নগর রাজনীতির সঙ্গে তাঁর নাম এখন এক অনস্বীকার্য অধ্যায়।

বরিশাল-৫ আসনে তাঁর নির্বাচনী যাত্রা শুরু ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরের উপনির্বাচনের মাধ্যমে।

 

তৎকালীন এমপি আব্দুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শূন্য হওয়া আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে তিনি প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৮ সালে নাসিম বিশ্বাসের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বরিশাল–৫ আসনের ভোটাররা তাঁকে পুনরায় নির্বাচিত করেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি তাঁকে মনোনয়ন দেয়, যদিও ভোটের পরিবেশ নিয়ে দলীয়ভাবে প্রশ্ন তোলা হয়।

২০০৩ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন গঠনের পর প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন অ্যাডভোকেট সরোয়ার। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তাঁর মেয়াদকালে বরিশাল নগরীর অবকাঠামো, সড়ক উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নগর সেবায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়। তাঁর সময়েই নগর ব্যবস্থাপনার মডেলটি নতুন আকার পায়।

সরোয়ার যুগের সূচনা ছিলো ভিন্ন আঙ্গিকে, ১৯৯০ এর শুরুর দিকে শ্রমিক নেতা সালাম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা নিয়ে বরিশালে প্রত্যাবর্তন করেন। সেই দিনটিই বরিশাল বিএনপিতে ‘সরোয়ার যুগ’ এর সূচনা হিসেবে বিবেচিত।

বরিশালের রাজনীতিতে তাঁর জনপ্রিয় ডাকনাম ‘দাদু’ শুধু একটি নাম নয় এটি একটি আবেগ, একটি রাজনৈতিক পরিচয়। কর্মী -সমর্থকরা তাঁকে অভিভাবক, সমস্যা সমাধানকারী এবং আশ্রয়দাতা হিসেবে মনে করেন। তাঁর সঙ্গে নেতাকর্মীদের সম্পর্ক রাজনৈতিক না হয়ে অনেকাংশে পারিবারিক রূপ ধারণ করেছে।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে বরিশাল মহানগর ও জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে বরিশাল–৫ আসন বিএনপির সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটিগুলোর একটিতে পরিণত হয়। ২০০১–২০০৬ সালে বিএনপি–জামায়াত জোট সরকারের সময় তিনি ছিলেন সংসদ সদস্য, হুইপ, জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, বরিশাল সিটির মেয়র। একযোগে এসব দায়িত্ব পালন করে বরিশালকে জাতীয় রাজনীতির মানচিত্রে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।

২০১৮ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোট অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই তিনি ভোট বর্জন করেন। ২০২১ সালে মহানগর ও জেলা বিএনপির পুনর্গঠনের পর তাঁর দীর্ঘদিনের একচ্ছত্র নেতৃত্বে ছন্দপতন ঘটে। নতুন নেতৃত্ব আসায় অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ দেখা দিলেও তিনি এখনো কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সক্রিয় এবং বরিশালের অনেক নেতাকর্মীর কাছে এখনও সর্বোচ্চ আস্থার কেন্দ্র।

চারবারের সংসদ সদস্য (১৯৯১, ১৯৯৮, ২০০১, ২০০৮) বরিশালের প্রথম নির্বাচিত সিটি মেয়র, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, দলের আন্দোলন-সংগঠনে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ মুখ।

 

বরিশালের মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার কেবল একজন নেতা নন তিনি বরিশালের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি যুগ। তাঁর উপস্থিতি, কর্মীদের প্রতি অনুরাগ, নেতৃত্বের শক্তি ও জনপ্রিয়তা তাঁকে বরিশালের রাজনীতির এক অমর চরিত্রে পরিণত করেছে।

তৃণমূলের সঙ্গে মানবিক সম্পর্কই একজন নেতাকে দীর্ঘস্থায়ী করে এ সত্যটি তাঁর রাজনৈতিক জীবনই সবচেয়ে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে।