নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীতে তানিয়ার তান্ডবে অসহায় ফরাজী পরিবার।
পক্ষ-বিপক্ষের মামলা চলমান। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে দেয়াল নির্মাণে বাঁধা দেয়ায় প্রতিপক্ষ ৪ জনকে বেদম মারধর করেছে। আহত ২ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ৩১ মার্চ বরিশাল সদর কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ১ এপ্রিল (সোমবার) বরিশাল পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে গিয়ে ভুক্তভোগী নির্যাতিত পরিবারের প্রায় ১৫ সদস্য ঘটনাগুলোর বর্ণনা ব্যক্ত করে সুষ্ঠুতদন্তের দাবী জানিয়েছেন। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ ফজলুল করিম তাদের সকল কথা শুনে আইনানুযায়ী সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন।
নগরীর দক্ষিণ রুপাতলী গ্যাষ্টারবাইন এলাকার মৃত ইউনুছ খানের মেয়ে তানিয়া আক্তারের সাথে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছে পার্শ্ববর্তী ফরাজী বংশের লোকজনদের। এ বিরোধ মিমাংসার জন্য সালিশ-মিমাংসায় বসেছিলেন ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদ ও ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। কিন্ত সালিশগণ দু’পক্ষের সার্ভেয়ার (আমিন) কর্তৃক জমি মেপে মিমাংসা করার জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও জমি মাপাই শেষ হয় না। জমি একাধিকবার মাপা হলেও সুষ্ঠু সমাধান আসেনি। অমীমাংসিত জমির উপর তানিয়া প্রথমে টিনের বেড়া দিয়ে পরে দেয়াল নির্মাণ করতেছেন।
এই জমি নিয়ে মৃত. মোকছেদ ফরাজীর ছেলে মোঃ সহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে তানিয়াসহ ৮ জনকে বিবাদী করে গত ২০ ফেব্রুয়ারী বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (নং-২৬২/২৪) দায়ের করেন। বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষকে তফসিল ভুক্ত বিরোধীয় সম্পত্তিতে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে আদালতের আদেশ অমান্য করে তফসিলভুক্ত সম্পত্তিতে শান্তি শৃংখলার অবনতি ঘটলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশ প্রদান করা হয়। যা অমান্য করছে তানিয়া। অন্যদিকে সংঘর্ষে দু’পক্ষের লোকজন আহত হয়েছিল। সেই ঘটনায় তানিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতয়ালী থানার মাজেদ জানিয়েছেন, হামলার ঘটনার মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। আসামীরা সকলে জামিনে আছে। এম.সি রিপোর্ট পেলে চার্জশীট প্রদান করা হবে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে ৩০ মার্চ বিকেলে আইন- সালিশ অমান্য করে দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে তানিয়া। আইনের নিয়ম নিয়ে দোহাই দিলে তানিয়া, রাহাত, মারুফ, রাসেল, মুনিয়া, রুবেল, মান্নান, জলিল ও রুলিয়াসহ অজ্ঞাত আরো ৭/৮ জন মিলে হামলা চালিয়ে ৪ জনকে আহত করেছে। মারাক্তক অবস্থায় আহত মামুন ও রাকিব কে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা। কবির ও সৈকত প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এ ঘটনায় আবারো সহিদুল বাদী হয়ে ৩১ মার্চ বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা (নং-৮৩) দায়ের করেন।
মরিয়ম বেগম জানান, এতিম ২ মেয়ে নিয়ে ছোট একটি বসতঘরে বসবাস করে আসছেন তিনি। সরকার থেকে পাওয়া টিউবয়েল ও বাথরুমসহ সব ভাংচুর করে দিয়েছে তানিয়া ও তার লোকজন।
২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফিরোজ আলম বলেন, তানিয়ার দাগের মূল জমি ১ একর ৫৬ শতাংশ যেখান থেকে ১ একর ১০ সরকার নিয়ে গেছে একোয়ার (ভূমি অধিগ্রহণ) করে, তানিয়ার বাকী থাকে ৪৬ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে তানিয়ার ভোগ দখলে জমির পরিমান আরো ৬ শতাংশ বেশি আছে, তারপরও জোরপুর্বক ফরাজীদের জমি দখলে রেখেছে।
২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ জানান, ওই এলাকায় সকলের জমিতেই কমতি আছে। তানিয়ারও মূল জমি কম থাকায় আমিন নিয়ে মাপতে গেলে ফরজীদের জমির অংশ চলে আসে। তবে মিমাংসার জন্য উভয়কেই ছাড় দিতে হবে। যাতে তারা কেউই রাজি নয়।
সহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হলে বেড়িয়ে আসবে মূলরহস্য। কিন্ত তানিয়ার অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে চান তিনি ও তার পরিবারসহ পুরো বংশ।
অভিযুক্ত তানিয়ার মুঠোফোন রিং দিয়ে উপরোক্ত বিষয় জানতে চাইলে, মোবাইল ফোনে নয় সামনা-সামনি কথা বলবেন। আজকে হবে না আগামীকাল জানান দিয়ে বলেন, এখন বরিশাল শহরের বাহিরে আছেন তিনি।