ঢাকারবিবার , ২৩ জুন ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশালে সাংবাদিক তারিকুলকে কুপিয়ে জখম, বিএনপি নেতা মিরাজসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুন ২৩, ২০২৪ ৪:২৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সাংবাদিক তারিকুল ইসলামকে মারধর করাসহ কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় উত্তর আমানতগঞ্জ এলাকার বিএনপি নেতা মিরাজ সিকদারসহ অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ছোট ভাই ‘নিউজ এডিটরস্ কাউন্সিল’, বরিশালের সভাপতি হাসিবুল ইসলাম বাদী হয়ে ঘটনাসংশ্লিষ্ট কোতয়ালি মডেল থানায় এজাহার দেন। গভীর রাতে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিচুল হক এজাহারটি মামলায় রুপ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এবং এও জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কয়েকটি টিম মাঠে নেমে গেছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, কাজিরহাট থানার ৬ নং ওয়ার্ডের মৎস্য ব্যবসায়ী দেলোয়ার হাওলাদার সাংবাদিক হাসিবুল ইসলামের ভাই আকিব, আতিকের আড়তে মাছ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫ লাখ টাকা দাদন নেয়। কিন্তু সে এই অর্থ ফেরত না দিয়ে তালতলী বন্দরের আড়ৎদার বিএনপি নেতা মিরাজ সিকদার, সাকিন সিকদার এবং সবুজ সিকদারকে মাছ দিতে শুরু করে। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যম অবগত হয়ে দেলোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বললেও পরবর্তীতে ফোন নম্বর ব্লক করে রাখে।

শনিবার সকালে দেলোয়ার উত্তর আমানতগঞ্জ হয়ে যাওয়ার সময় আতিক টাকা ফেরত চাইলে সে কিছুক্ষণ তর্কবিতর্কের ফোন করে রেণুপোণা পাচারকারী বিএনপি নেতা মিরাজ, সেলিম, সবুজ, সাকিনসহ তাদের যুব বয়সি ছেলেদের ডেকে আনে। এবং তারা ধারালো অস্ত্র, লোহার রড, চাইনিজ কুড়াল ও বাঁশ-কাঠ নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। এই খবর পেয়ে আতিকের বড় ভাই আকিব, সাংবাদিক তারেক এবং খালাতো ভাই মিলন হামলার কারণ জানতে গিয়ে তারাও হামলার শিকার হন। মিরাজ, সাকিন, সেলিম, সবুজ, নয়ন এবং তাদের ছেলেদের এলোপাতাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্য থেকে মিরাজ চাইনিজ কুড়াল নিয়ে সাংবাদিক তারেকের মাথায় কোপ মারে, তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এই পুরো ঘটনাটি ঘটেছে কাউনিয়া থানা পুলিশের এসআই দেলোয়ারের উপস্থিতিতে। পরবর্তীতে খবর পেয়ে কোতয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়, যদিও এর আগেই এলাকাবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে মুখে পড়ে পালিয়ে যায় বিএনপি ক্যাডারেরা।

কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. আরিচুল হক বরিশালটাইমসকে জানান, ঘটনাস্থল তদন্ত করে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ করছে।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে, মিরাজ, সেলিম, সাকিন, সবুজ, নয়নসহ ১০/১২ জনের একটি গ্রুপ বিএনপি করলেও এরা সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র থাকাকালীন উত্তর আমানতগঞ্জ, তালতলী শায়েস্তাবাদ পর্যন্ত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তালতলী বন্দর থেকে চাপিলা, জাটকা, রেণুপোনা পাচারসহ ভূমিদস্যুতা, চুরি ছিনতাই করে আসছিল। তাদের এই কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করে স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক মাহাবুব সিকদারকে ব্যাপক রোষানলে পড়েন, তিনিসহ বাবা ভাইদেরও ছাড় দেয়নি এই পাচারকারীরা বিএনপি নেতারা। সাংবাদিক মাহাবুবকে অন্তত ৫ দফা বিভিন্ন সময়ে মারধর করা হয় এবং চতুর্থবার হাতুড়িপেটা করে তার পা ভেঙে দেয়া হয়। ঈদের দুদিন আগে এই সাংবাদিক পরিবারের ওপর হামলা মারধর করাসহ তাদের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়, যা কাউনিয়া থানা পুলিশের এসআই আরাফাত হাসান গিয়ে খুলে দিয়ে আসেন। কিন্তু থানা পুলিশের সাথে অপরাধী চক্রটির গভীর যোগাযোগ থাকায় সেখানে কোনো আইনি সুবিধা পাননি মাহাবুব।

তবে তিনি জানিয়েছেন, এই চক্রটির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে আদালতে একটি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন। রোববার সেই মামলাটি করা হবে, তাতেও বাহিনীপ্রধান মিরাজসহ ১০/১৫ জন আছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, মিরাজ, সেলিম, সাকিনদের অত্যাচারে মানুষ ওষ্ঠাগত। কেউ প্রতিবাদী হয়ে উঠলেই তার টুটি চেপে ধরে এই সন্ত্রাসী বাহিনী, তাতে অংশ নেয় তাদের যুব বয়সি ছেলেরা। বিশেষ করে সাদিক আব্দুল্লাহ’র সেকেন্ড ইন কমান্ড নিরব হোসেন টুটুলের এই সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে অনেকে এতদিন তটস্থ থাকলেও শনিবারে সাংবাদিক হাসিবুল ইসলামের ভাইদের মারধরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিবেকবান মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ঘটনার সাথে কারা জড়িত, তাদের ধরতে মাঠপুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে রাত ১টার দিকে মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করার কথা জানান ওসি মো. আরিচুল হক। পাশাপাশি জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার কথা।’