নিজস্ব প্রতিবেদক :: কাউখালীর চারা বিক্রির হাটে কোটি টাকার কেনাবেচা
পিরোজপুরের কাউখালিতে জমে উঠেছে মৌসুমী চারা বিক্রির হাট। বিভিন্ন এলাকার নার্সারি থেকে গাছের চারা এনে সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার হাট বসে। ব্যবসায়ীদের দাবি প্রতি হাটে কোটি টাকার ফলজ ও বনজ চারা বিক্রি হয় এ হাটে।
ব্রিটিশ আমল থেকে সন্ধ্যা ও চিরাপাড়া নদীর কল ঘেঁষে অবস্থিত কাউখালী বন্দরের হাটে নার্সারিতে উৎপাদিত চারা বিক্রি হওয়া শুরু হয়। আস্তে আস্তে বাজারজাতকরণে এলাকায় গড়ে ওঠে চারা বিক্রির বিশাল হাট।
জানা গেছে, পিরোজপুরের কাউখালীতে নেছারাবাদ, নাজিরপুর, ইন্দুরকানী, ভান্ডারিয়া, বানারীপাড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার নার্সারি থেকে চারা বাজারজাত করার জন্য নিয়ে আসা হয় কাউখালীর হাটে। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত চারা কেনাবেচার মৌসুম চলে। তবে আষাঢ় মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত এই চার মাস সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়।
এখান থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতারা পাইকারি ও খুচরা মূল্যে রোপণ কিংবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। ঝালকাঠি, বাগেরহাট, বরগুনা, পিরোজপুরসহ দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলের প্রতিটি উপজেলায় এ এলাকার নার্সারির চারা সরবরাহ করা হয়। বাজারে কেনাবেচা ছাড়াও পাইকাররা সরাসরি এলাকার নার্সারিতে গিয়ে তাদের পছন্দমত বিভিন্ন প্রজাতির চারা কিনে থাকেন। পরিবহনের ভালো সুবিধা থাকার কারণে নৌকা, লঞ্চ, টলারসহ নৌপথ ও সড়কপথে বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে সহজেই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে পারেন।
এ এলাকার নার্সারিগুলোতে উৎপাদিত চারার মধ্যে চাম্বুল, রেইনট্রি, মেহগনি, আকাশমনি, জামরুল, সেগুনসহ ২৫-৩৫ প্রজাতির বনজ চারা রয়েছে। এছাড়াও সমানতালে উৎপাদিত হয় আমড়া, আমলকী, জলপাই, ববই, আম, কাঁঠাল, নারিকেল, লেবু, সুপারি, জাম, পেয়ারা, ছবেদা, লকট, লিচু, কামরাঙ্গাসহ ২০-২৫ প্রজাতির ফলদ চারা।
পিরোজপুর থেকে চারা কিনতে আসা মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ জানান, তিনি এ মোকাম থেকে প্রতিমাসে বিভিন্ন প্রজাতির চারা কিনে নেন। তার দেখাদেখি এ অঞ্চলের অনেকেই কাউখালীর মোকাম থেকে প্রতি মৌসুমে বনজ ও ফলজ চারা কিনে নেয়। ৩-৪ ফুট থেকে শুরু করে ১০-১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা চারা নার্সারি থেকে উত্তোলন করে বিক্রয়ের জন্য হাটে নিয়ে আসা হয়।
স্থানীয় নার্সারি ব্যবসায়ী আবু হানিফ জানান, তিনি দুই বিঘা জমির নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির চারা উৎপাদন করে বছরের এক মৌসুমে সাত থেকে দশ লাখ টাকা আয় করেন। প্রতি হাটে কোটি টাকার ফলজ ও বনজ চারা বিক্রি হয় এ হাটে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে একটি নারকেল চারা ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এক কুড়ি সুপারি গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
কাউখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সোমা রানী দাস জানান, কাউখালীর নার্সারিতে উৎপাদিত চারার মান খুবই ভালো। জমজমাট এ হাটে কোটি টাকার ফলজ ও বনজ চারা বিক্রি হয়।
তিনি আরও জানান, আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন নার্সারিতে যেয়ে মালিকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।