নিউজ ডেস্ক :: টেস্টটিউব পদ্ধতিতে সন্তান ধারণ কি ইসলামে জায়েজ?
স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তান ধারণে সমস্যা হলে দেহের বাইরে গবেষণাগারে কাচের পাত্রে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে নিষিক্ত ডিম্বাণুকে জরায়ুতে স্থাপন করে গর্ভধারণ করানোর ব্যবস্থা করা হয়। একে ইন ভিট্রো নিষেক (In Vitro Fertilization, সংক্ষেপে IVF) প্রক্রিয়া বলা হয়। যা টেস্টটিউব পদ্ধতি নামে অধিক পরিচিত।
যদি স্বামী স্ত্রীর বীর্য নিয়ে টেস্ট টিউবে রেখে মিলন ঘটিয়ে যথাসময়ে তা নিজ স্ত্রীর গর্ভাশয়ে স্থাপন করা হয় অথবা স্বামীর বীর্য সিরিঞ্জের সাহায্যে নিজ স্ত্রীর গর্ভাশয়ে বা ডিম্ববাহী নালীতে বিশেষ পদ্ধতিতে রাখা হয়, যাকে মেডিকেলের পরিভাষায় আইইউআই (ইন্ট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন) বা আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) বলা হয়–তাহলে শরিয়ত একে অবৈধ মনে করে না। তবে এক্ষেত্রে দারুল উলুম করাচির (১/৬/১৪৩১ হি. ১৭/১২৩৪,৬৫/৬৭৯) ফতোয়া মতে নিন্মোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
টেস্ট টিউব পদ্ধতি বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার একটি পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ আছে। তবে এটি প্রথম বা একমাত্র পদ্ধতি নয়। বরং প্রথমে সন্তান জন্ম দেওয়ার সকল স্বাভাবিক চেষ্টা সম্পন্ন করতে হবে। এরপর যদি বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার অন্য সব পদ্ধতি ব্যর্থ হয় এবং আর কোনো উপায়ান্তর না থাকে তাহলে সর্ব শেষ চিকিৎসা হিসেবে এ পদ্ধতি গ্রহণ করার সুযোগ নিতে পারবে।
এ পদ্ধতি গ্রহণ করার প্রতিটি ধাপে সতর ও হিজাবের প্রতি সর্বোচ্চ সচেষ্ট থাকতে হবে। যেমন, স্ত্রীর কাছ থেকে ডিম্বানু সংগ্রহ করা এবং স্ত্রীর জরায়ুতে ভ্রূণ সংস্থাপন করা; এ কাজগুলো মহিলা ডাক্তারকে দিয়ে করাতে হবে।
পুরুষ ডাক্তার সিরিঞ্জের মাধ্যমে স্বামীর কাছ থেকে বীর্য সংগ্রহ করবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে হস্তমৈথুনের পরিবর্তে নিজ স্ত্রীর সঙ্গে আজলের মাধ্যমে তা সংগ্রহ করবে। (আজল অর্থ স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার পরই বীর্য স্ত্রীর ভিতরে না দেয়া)
যাতে করে অপরের বীর্যের সঙ্গে কোনোভাবে কোনো প্রকার গড়মিল না হয়; সন্তান তার পিতৃ পরিচয় লাভের উদ্দেশ্যে অবশ্যই এর প্রতি পরিপূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে।
যেহেতু বন্ধ্যাত্বের কারণে অনেক সময় তালাকের মত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তাই জরুরতের প্রতি লক্ষ্য করে উপায়ান্তর না থাকার পরিস্থিতিতে টেস্টটিউব বেবি নেয়ার চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং কেবল বিলাসিতার উদ্দেশ্যে অর্থাৎ, ছেলে চাই-মেয়ে নয় কিংবা মেয়ে চাই- ছেলে নয়; এ জাতীয় উদ্দেশ্যে এই পদ্ধতি গ্রহণ করা জায়েজ হবে না। এ উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ যদি টেস্ট টিউব পদ্ধতি অবলম্বন করে এটা সম্পূর্ণ না জায়েজ হবে। এটার কারণে তাদের গুনাহ হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗإِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ হে নবী! আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্রতা। তারা যা করে মহান আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত। (সুরা নুর ৩০)
মিশকাতগ্রন্থে রয়েছে, রুয়াইফি’ ইবন সাবিত আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সা. হুনাইনের যুদ্ধের দিন বলেছেন, لَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَسْقِيَ مَاءَهُ زَرْعَ غَيْرِهِ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখে, তার জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে নিজের পানি সেচন করা। (আবু দাউদ ২১৫৮)