রবিউল ইসলাম রবি :: নির্দলীয় ও জনকল্যাণমুখী সংগঠন ‘বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন’ হলেও বর্তমানে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। যার নেপথ্যে রয়েছে বহিস্কৃত ও গুটি কয়েক সদস্য। তারা আ.লীগ শাসনামলে ‘বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক লীগ’ সংগঠন করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তারাই আবার সম্প্রতি বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করে ‘বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক দল’ এর ব্যানার ঝুলিয়ে রেখেছেন বরিশালে অবস্থিত- ‘যুমনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড’ ও ‘পদ্মা অয়েলকোম্পানী লিমিটেড’ নামক প্রতিষ্ঠানে। বিষয়টিতে হতবাক হয়ে পড়েছেন নগরীর ১০ ও ১১ নং ওয়ার্ডের কেডিসি এবং চরের বাড়ি এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাসহ ওই দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারা শ্রমিকলীগ না শ্রমিকদল তা বোঝাই মুশকিল।
জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ ফয়েজ খান বলেন, ওই দুই স্থানে এখন পর্যন্ত কোন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়নি। তবে ভবিষ্যতে দেয়া হবে। আর কর্মীরা দল পরিবর্তন করতেই পারে। আগে এক দলে ছিল পরে এক দলে যায় এটা স্বাভাবিক বিষয়। বড় বড় নেতাদের বেলাও এমন ঘটনা ঘটে।
বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ মাছুম খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মোঃ কামাল হোসেন বলেন, যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে তখন সেই সরকারের হয়ে জনসেবামূলক কাজ করতে হয় এ সংগঠনটির। বরিশালের ৬ জেলাসহ শরিয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় জ্বালানী তেল সরবরাহ করা হয়। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী হলেন জাহিদ ফারুক এমপির সময় যারা ‘বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিকলীগ’ সংগঠন করার জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করে ব্যর্থ হয়েছিল। এখন তারাই আবার বিএনপির ব্যানারে ‘বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিকদল’ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সকল কার্যক্রমের সাথে যারা জড়িত রয়েছে তারা মূলত শান্তিপূর্ণ ‘বরিশাল বিভাগীয় ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন’ এ অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযুক্তরা গত ৫ আগস্টের পর দল পরিবর্তন করে ডিগবাজি দিয়েছে। যার ছবি সহ উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ তুলে ধরেন।
অভিযুক্তরা হলেন- নগরীর ১০ নং ওয়ার্ড কেডিসি এলাকার বাসিন্দা মোঃ রিপন সিকদার, ইমরান হাওলাদার ও টিটু এবং ১১ নং ওয়ার্ড চরের বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মোঃ হোসেন আলী ফকির, নূর আরাফাত আকন, আনোয়ার হোসেন খান, ওসমান ফকির ও সাঈদ। এছাড়াও রয়েছেন বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামচরী গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মোজাম্মেল হক সহ বহিরাগত ৪/৫ জন।
অভিযুক্ত ইমরান হাওলাদার বলেন, ব্যানারটি আমি আর টিটু দুই জনে লাগিয়ে ছিলাম। তবে বিষয়টি সম্পর্কে ভালো বলতে পারবে রিপন সিকদার। মুঠোফোনে রিপন বলেন, আমি ১০ ওয়ার্ড শ্রমিক দলে আছি তা সবাই জানে। কিন্তু আ.লীগ শাসনামলে চাপের মুখে খোকন সেরনিয়াবাতের ছবি যুক্ত গেঞ্জি পড়তে বাধ্য হই। আর বরিশাল মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ ফয়েজ খান এর নির্দেশেই ব্যানার লাগানো হয়েছে।
কেডিসি এলাকার বাসিন্দা মোঃ সালাম ফরাজী ও আলামিন বলেন, অভিযুক্তরদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক মামলা। তাছাড়া তারা এলাকায় মাদক সেবন ও বিক্রিতে জড়িত। সুযোগ বুঝে দল পরিবর্তন করে।
১০ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ শাহাদাৎ ইসলাম তোতা বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানি না। আর আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।
১১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ আমিনুর রহমান মামুন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। যারা ব্যানার টানিয়েছে তারা তো এলাকায় আ.লীগের চিহ্নিত কর্মী হিসেবে পরিচিত। এমনকি তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে আ.লীগের বড় বড় নেতাদের সাথে নানা প্রোগ্রামের ছবি রয়েছে। এখন বিএনপির নামে সরাসরি এমন কার্যক্রমে অংশ নেয়ার পেছনে কারো হাত রয়েছে। নয়তো এত সাহস পায় কিভাবে।
পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড, বরিশাল ডিপো ইনচার্জ মোঃ মাজাহারুল ইসলাম বলেন, ৮ অক্টোবর দুপুরে হঠাৎ দেখতে পাই অফিসের সামনে ব্যানার ঝুলানো। পরে সিসি ক্যামেরায় দেখতে পাই কারা ব্যানার লাগিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবেন তিনি।
যুমনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড, বরিশাল ডিপো ইনচার্জ প্রিয়তোষ নন্দী ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে ধরেননি। অফিস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বদলি হয়েছেন তিনি এবং বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন। তবে তার পরবর্তীতে এখন পর্যন্ত কেউ যোগদান করেনি। অন্য কর্মকর্তা ও স্টাফরা বিষয়টি সম্পর্কে এড়িয়ে যান।