নিজস্ব প্রতিবেদক :: এবার বরিশালেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর বিএনপির অফিস পোড়ানো এবং হামলার ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা হলেও কোনটিতেই শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়নি। বরিশালে তার বিরুদ্ধে এটাই প্রথম মামলা বলে জানা গেছে।
এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক মেয়র ও শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহসহ আওয়ামী লীগের ৫৫৬ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার বাদী হয়ে বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় মামলার আবেদন করেন।
জিয়াউদ্দিন সিকদার নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং একই ওয়ার্ডের রূপাতলী সিকদার টাওয়ারের মৃত মমিন উদ্দিন সিকদারের ছেলে। তবে এর রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা রুজু হয়নি।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘১ নম্বর আসামি শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছর সমগ্র বাংলাদেশকে একটি নৈরাজ্যের জনপদ ও ভয়াল উপতাক্যায় পরিণত করে। তার স্বৈরশাসন কায়েম করার লক্ষ্যে বিরোধী মতের বিরুদ্ধে অবস্থান করে সমগ্র দেশে ছাত্র-জনতার ওপর দমন নিপীড়ন করে ভয়ের সংস্কৃতি চালু করে। তার হুকুমে অপর আসামিরা দর্বদা দলীয় ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত হয়। সাধারন মানুষ শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদ করলেই অন্যান্য আসামিরা অস্ত্র-শস্ত্র নিয়া তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে।
অতপর ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে বিএনপি ঘোষিত শান্তি সমাবেশ (শোক র্যালি) পালনে বাদী জিয়াউদ্দিন সিকদারসহ শত শত ছাত্র-জনতা বরিশাল নগরীর সিএন্ডবি রোড তাওয়া রেস্টুরেন্টের উত্তর পার্শ্বে অবস্থান করছিলেন।
এসময় ২ থেকে ২৫ নম্বর আসামিরা ১ নম্বর আসামির (শেখ হাসিনা) হুকুমে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি নস্যাৎ করতে সশস্ত্র অবস্থায় ও বিস্ফোরকদ্রব্য এবং ককটেল বোমাসহ হিংস্র হায়েনার মতো আমাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। এসময় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছাত্র-জনতা ভয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে।
তখন উপস্থিত আসামিরা বাদী জিয়াউদ্দিন সিকদার, সাক্ষী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পাশাপাশি রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
আসামিরা মামলার বাদী জিয়াউদ্দিন সিকদারের সাথে থাকা এক লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ছিনিয়ে নেয়। এছাড়াও অন্যান্য সাক্ষীদের কুপিয়ে এবং পিটিয়ে তাদের সাথে থাকা কয়েক লাখ টাকা, মোবাইল সেট এবং স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা হামলায় বাদীসহ সাক্ষীদের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে তাদের ফেলে রেখে শ্লোগান দিয়ে চলে যায়। পরে অন্যান্য সাক্ষীরা তাদেরকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে নিরাপত্তার কারণে বাদী ও ২ নম্বর সাক্ষী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুককে বরিশাল মেট্রোপলিটন হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়।
অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় বাদী জিয়াউদ্দিন সিকদারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। তিন নম্বর সাক্ষী শানু আকনকে ঢাকায় প্রেরণ করে। তার মাথায় ৫৪টি সেলাই দেওয়া হয়। তাছাড়া বাদি ঢাকায় হেলথ্ ডায়াগনষ্টিক এন্ড হাসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় পুলিশ বাদী জিয়াউদ্দিন সিকদারকে গ্রেফতার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
তিনি জামিনে মুক্তি হয়ে পুনরায় চিকিৎসা করান। এরপর সুস্থ হয়ে আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে অন্যান্য আহতদের সাথে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করেন।
মামলায় অন্যান্যদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর, আবুল হাসানাত আবদুল্লার ছেলে মঈন আবদুল্লাহ ও জেলা আ’লীগের সদস্য আশিক আবদুল্লাহ, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ওবায়েদুল হক সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত, মহানগর শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক রইজ আহমেদ মান্না, মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল, ২০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব, ওয়ার্ড কাউন্সিলর সামছুদ্দোহা আবিদন, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খান, সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম, ফরচুন সুজ কোম্পানির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু, আওয়ালীগ নেতা তারিক বিন ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর সামজেদুল কবির বাবু, নুরুল আম্বিয়া বাবু, অসীম দেওয়ান, মঈন তুষারসহ আরও অনেকে।
এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি নেতা জিয়াউদ্দিন সিকদার একটি মামলার আবেদন থানায় দিয়ে গেছেন। তবে কার কার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে সেটা দেখিনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।