স্টাফ রিপোর্টার :: বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণ, অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা ও জ্বালানি নীতি পুনর্বিন্যাসে সরকার কর্তৃক পায়রায় এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার বেলা ১২ টায় ফোরাম অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট বরিশাল, প্রান্তজ, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ বিষয়ক কর্মজোট এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট আয়োজনে বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির হল রুমে সংবাদ সম্মেলনটি অনুুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা জানান, পায়রায় সম্প্রতি বাতিলকৃত এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্পটি পেট্রোবাংলার মালিকানাধীন এবং এক্সেলারেট এনার্জি নির্মাণের দায়িত্বে ছিলো। এটি বাস্তবায়িত হলে টার্মিনালটিকে ভাসমান স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট স্থাপন করে পাইপলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে এই কোম্পানিটি শুধুমাত্র ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদই প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চার লাখ ডলার দিতে হতো। বর্তমানে দুটি সক্রিয় এলএনজি টার্মিনাল প্রতিদিন প্রায় ৪.৫ লাখ ডলার ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার উপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করছে। এছাড়া, এলএনজি নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন সরাসরি গ্যাসের আমদানি খরচের সাথে যুক্ত হওয়ায় এই খরচ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের উপর বাড়তি বোঝা তৈরি করছে। গ্যাসের আমদানি খরচ বাড়লে প্রতি ইউনিট গ্যাসের জন্য সরকারকে যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে, তা ক্রমশ বাড়তে থাকায় বিদ্যুতের খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতাকে হ্রাস করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিঘ্নিত করবে। এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় খরচ হয় প্রায় ৫৭ টাকা। এ অবস্থায় এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা দেশের জন্য অর্থনৈতিক দুর্যোগ বয়ে আনবে। যদিও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় এলএনজির বৈশ্বিকভাবে দাম নাগালের মধ্যেই থাকবে। তবে বাংলাদেশের জন্য সেই দাম দিয়ে কেনাও কঠিন হবে। এতে এলএনজির সক্ষমতা অলস হয়ে পড়ে থাকতে পারে। সুতরাং, আমদানি নির্ভর জ্বালানি নীতি দেশের জন্য ভালো হবে না। “প্রকল্পটি চালু হলে তা পরিবেশের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারত। বিশেষ করে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বাস্তুসংস্থান, মৎস্য সম্পদ এবং উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ত। তাই এ প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত কেবল পরিবেশ রক্ষার জন্য নয়, বরং স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নের দিকেও একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।” ভবিষ্যতে এ ধরনের জনবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ অব্যাহত থাকে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ও জ্বালানি নীতি আরো শক্তিশালী হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফোরাম অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট বরিশাল এর সদস্য সচিব অ্যাড. শুভাস দাস, সদস্য প্রফেসর শাহ্ সাজেদা, শুভংকর চক্রবর্তী, পুস্প চক্রবর্তী, এস এম রাশেদ, বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট এর পক্ষ থেকে প্রান্তজনের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম শাহজাদা, বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি আনিসুর রহমান খান স্বপন, সাবেক সভাপতি সুশান্ত ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহসহ প্রমুখ।