ধর্ম ডেস্ক :: যে কারনে ৩ অমুসলিমের প্রশংসা করেছিলেন নবীজি
আপনি কি জানেন, দয়ার নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার সময়ে এমন তিনজন অমুসলিম ব্যক্তির প্রশংসা করেছিলেন যারা তাকে বিভিন্ন সময়ে সাহায্য করেছিলেন? এখানে আমরা সেই তিনজনের পরিচয় ও নবীজির (সা.) প্রশংসার কারণ নিয়ে আলোচনা করবো।এ ঘটনা আমাদের শেখায়, অসহায় মুহূর্তে কাউকে সাহায্য করা বড় গুণের কাজ, তা সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম।
মুতইম ইবনে আদি
মুতইম ইবনে আদি ছিলেন মক্কার একজন প্রভাবশালী কুরাইশি নেতা। যিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। নবীজির (সা.) জন্য একটি সংকটময় সময়ে তিনি পাশে দাঁড়ান। নবীজির চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর পর নবী (সা.) মক্কায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বিপদের সম্মুখীন হন।
তখন তিনি মক্কার বিভিন্ন নেতার কাছে নিরাপত্তা চাইলে একমাত্র মুতইম ইবনে আদি তাতে সাড়া দেন। তিনি তার ছেলেদের অস্ত্রসহ নবীজির (সা.) পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন, এভাবেই নবীজিকে সুরক্ষা দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করান। বদরের যুদ্ধের পর যখন নবীজি (সা.) কুরাইশ বন্দীদের বিষয়ে কথা বলছিলেন, তখন তিনি মুতইমের প্রশংসা করেন এবং তার অবদানের কথা স্মরণ করেন। সূত্র: আ মেরসি টু দ্য ইউনিভার্স
ইহুদি আলেম মুখাইরিক
মুখাইরিক ছিলেন মদিনার একজন ইহুদি আলেম, যিনি নবীজির (সা.) সাথে করা প্রতিশ্রুতি পালন করে মুসলিমদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিলেন। উহুদের যুদ্ধে কুরাইশদের বড় বাহিনী মদিনার দিকে অগ্রসর হলে মুখাইরিক তার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে মুসলিমদের সাহায্য করতে আহ্বান জানান। বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) এর বিজয় আমাদের জন্যই রয়েছে।’
তবে তারা শব্বত দিবসের কারণে যুদ্ধে যেতে রাজি না হওয়ায় মুখাইরিক নিজেই অস্ত্র হাতে যুদ্ধে অংশ নেন এবং শাহাদাত বরণ করেন। নবীজী (সা.) তাকে ‘ইহুদিদের মধ্যে সর্বোত্তম’ হিসেবে আখ্যা দেন। সূত্র: আস-সিরাত আন-নবাওয়িয়া
বাদশাহ নাজাশি
নাজাশি ছিলেন আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) খ্রিস্টান রাজা, যার প্রকৃত নাম ছিল আশামাহ। মক্কায় মুসলিমরা অত্যাচারিত হলে নবীজি (সা.) তাদেরকে নিরাপত্তার জন্য আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে বলেন। নাজাশির নিরাপত্তার আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেন।
নাজাশি তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং যখন কুরাইশরা মুসলিমদের ফেরত আনতে দূত পাঠায়, তখন তিনি তাদের ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান। বরং তিনি ইসলাম সম্পর্কে শুনে এতে অনুপ্রাণিত হন। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নাজাশির মৃত্যুর পর নবীজি (সা.) তার জন্য গায়েবানা জানাজা পড়েন।
এ তিনজনের জীবন থেকে বোঝা যায়, মানবতার কল্যাণে সহযোগিতার জন্য ধর্মের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন তারা। নবীজির (সা.) জীবন থেকে এই উদাহরণ আমাদের শেখায় যে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা এবং একে অপরকে সাহায্য করা অত্যন্ত মহৎ কাজ। সূত্র: সিয়ারু আলাম আন-নুবালা