
নিজস্ব প্রতিবেদক :: যাত্রি সংকটের মধ্যেই এবার ঈদে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে সার্ভিসে আসছে অত্যাধুনিক বিলাসবহুল লঞ্চ এম খান-৭। কর্তৃপক্ষ এমন কথাই জানিয়েছেন। বলা হচ্ছে পদ্মা সেতু চালু হবার পর লঞ্চ ব্যবসার এমন আকালের সময়টায় এটিই হতে পারে সর্বশেষ বিলাসবহুল লঞ্চ। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ বলছে সেবার মান বাড়িয়ে তারা ব্যবসায় টিকবেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ এমন আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছে।
বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটে সর্বশেষ বিলাসবহুল লঞ্চ সুন্দরবন-১৬ পানিতে ভাসানো হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। এই লঞ্চটি দৈনিকের বদলে এখন প্রতি ৫ দিনে একদিন চলে। এই কোম্পানির ৮টি বিলাসবহুল লঞ্চের মধ্যে ৪টি বুড়িগঙ্গায় অলস পড়ে আছে। বাকি ৪টি সাপ্তাহিক ভিত্তিতে চলাচল করে। যাত্রি সংকটের কারনে এখন প্রতি ট্রিপে তাদের জ্বালানি তেল বাবদ খরচের টাকাও ওঠে না বলে জানান এমভি সুন্দরবন নেভিগেশনের ম্যানেজার জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ২৫ বছর থেকে লঞ্চ ব্যবসা করে এখন যাত্রি সংকটের কারনে মুখ থুবড়ে পড়েছি। দৈনিকের লঞ্চ চলছে এখন সাপ্তাহিক ভিত্তিতে। পদ্মা সেতু চালু হবার পর বরিশালের দূর পাল্লার যাত্রিরা সড়কপথ বেছে নিয়েছে। নৌ পথে তাদের এখন অনেক অনীহা। আমাদের ৮টি লঞ্চের মধ্যে ৪টিই বসে আছে। অন্য কোম্পানিগুলোর অবস্থাও তাই। ঈদ, পুজা বা বড় ছুটি হলে কিছু যাত্রি মেলে। আমরা অনেক টাকা ধার দেনায় পড়েছি। আমাদের সামনে পথ খোলা নেই, নতুন যারা আসছে তাদের ভবিষ্যতও অন্ধকার।
বরিশাল-ঢাকা নৌপথে এর আগে গত ২৭ বছরে প্রায় ১২শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বিলাসবহুল ২৬টি লঞ্চ পানিতে ভাসানো হয়। বলা হচ্ছে এরমধ্যে এম খান-৭ লঞ্চটি হবে সর্বকালের সর্বাধুনিক। এই লঞ্চে এই প্রথম যোগ করা হয়েছে প্রেসিডেন্টশিয়াল সুইট। সম্পূর্ণ চীনা প্রযুক্তিতে নির্মিত এই লঞ্চে থাকছে লঞ্চডুবি ও অগ্নিকান্ড প্রতিরোধক আধুনিক প্রযুক্তি। যাত্রি জীবন ও যাত্রি সেবাকে দেয়া হচ্ছে গুরুত্ব।
লঞ্চের কর্মকর্তা ও কর্মিরা বলছেন, এই লঞ্চটি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বশেষ বৃহৎ আধুনিক লঞ্চ। যাত্রি সংকটের এই সময়টায়ও আমরা ঝুঁকি নিয়েছি সেবা নিশ্চিত করতে। অন্য কোন লঞ্চে প্রেসিডেন্টশিয়াল সুইট নেই, আমাদের আছে। প্রকৃতি দর্শনে টেম্পার গ্লাস দিয়ে নির্মিত এই সুইট উপভোগ্য হবেই। মোগল সাম্রাজ্যের অনুকরণে আমাদের ভিআইপি লাউঞ্জগুলো ডেকরেশন করা হয়েছে। যাত্রিরা আমাদের লঞ্চের জন্য অপেক্ষায় থাকবে।
মেন্যুয়াল নয় বরং ইলেকট্রিক হাইড্রোলিকে চলবে এই লঞ্চ। এতে করে অল্প জায়গা থেকে লঞ্চটিকে টার্নিং করে যে কোন দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে।
এই লঞ্চের ডাবল বটমের লেয়ার লঞ্চডুবির আশঙ্খা অনেকটাই কমবে। স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক যে কোন ধরনের অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রন করবে। রয়েছে স্বয়ংক্রিয় অতিরিক্ত ফায়ার পাম্প।
ব্যবসা সফলে লঞ্চে আধুনিকতার ছোঁয়া নিশ্চিতে কৌশল হিসেবে নিয়েছেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের মতে ব্যবসায় কৌশল পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই।
লঞ্চের মালিক মাহফুজ খান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হবার অনেক আগেই এই লঞ্চ নির্মানের কাজ শুরু হয়। সেতু চালুর পর যাত্রি সংকটের ভয়াবহ চিত্র সামনে আসার পর আমাদের আর পেছনে ফেরার পথ ছিলো না। এ অবস্থায় আমরা আধুনিকতাকে কৌশল করে লঞ্চ নামানোর কাজে নামি। কারণ কোন কাজ না থাকলেও মানুষ বরিশালে নৌ ভ্রমণে আসে। এজন্য প্রথমে আমরা যাত্রি নিরাপত্তা, যাত্রি সুবিধা ও অত্যাধুনিক ডেকরেশনের উপর জোর দিয়ে মাঠে নেমেছি। আমরা ব্যবসা কমিয়ে আধুনিকতাকে কাজে লাগিয়েছি। রোজার ঈদের আগেই এই লঞ্চ সার্ভিসে আসবে।
বরিশালের নৌবন্দর কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, নৌপথে যাত্রির আকাল যখন আমাদের পীড়া দিচ্ছে তখন এই পথেই অত্যাধুনিক লঞ্চের আগমনকে স্বাগত জানাই। এটা অবশ্যই ইতিবাচক। সেবার মান উন্নয়ন করে যাত্রি সেবা নিশ্চিত করতে পারলে তারা ভালো রেজাল্ট পাবে। আবার মানুষ নৌপথে ফিরে আসবে। নৌপথের স্বর্ণালী দিন আবার দেখতে পাবে বরিশাল বিভাগের লঞ্চ প্রেমিক যাত্রীরা।