
নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের অসহায় মানুষের ছায়াসঙ্গী: সমাজ সেবার সাজ্জাদ পারভেজ।
সমাজে যখন অনেকেই ব্যস্ত জীবনের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে, তখন এমন কিছু মানুষ আছেন যারা নিঃশব্দে মানবতার সেবায় অবিচল থাকেন। বরিশাল জেলা সমাজ সেবার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ তেমনই একজন মানবিক ব্যক্তিত্ব। বরিশালের অসংখ্য অসহায় মানুষের কাছে তিনি যেন এক জীবন্ত আশার প্রতীক, যিনি যেখানে কোনো মানুষের কষ্টের খবর পান, সেখানেই ছুটে যান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।
সাজ্জাদ পারভেজ নগদ আর্থিক সহায়তা থেকে শুরু করে খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা উপকরণ—যে যা প্রয়োজন, তা যথাসাধ্য চেষ্টা করে পৌঁছে দেন। শত শত অসহায় মানুষের পাশে তিনি দাঁড়িয়েছেন নিঃস্বার্থভাবে, যার ফলে নগরবাসী তাঁকে ‘অভিভাবক’ বলে সম্বোধন করেন। তিনি নিজেও বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য — এই বিশ্বাস থেকেই আমি কাজ করি। যতদিন পারি, অসহায়দের পাশে থাকতে চাই।”
অসহায় মা ও মেয়ের পাশে, সাজ্জাদ পারভেজ।
পবিত্র শবে-ই-বরাত রাতে কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে, সাজ্জাদ পারভেজ এক মা ও মেয়ের অসহায়ত্বের খবর পান। মা লাইলী বেগম ও তার মেয়ে লামিয়া, যাঁরা জন্মের একমাস পর বাবাকে হারিয়েছেন এবং এখন ভাড়া বাসায় থাকে, জীবনের তাগিদে গুঠিয়া মসজিদের কাছে একটি চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। দোকান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের অভাবে তারা সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। সাজ্জাদ পারভেজ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাজার থেকে মালামাল কিনে তাদের সহায়তা করেন।
জেলা সমাজ সেবা অফিসের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, “আমাদের আশপাশে অনেক লাইলীর মতো অসহায় মানুষ আছে, তাদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।”
–
অসহায় কালু শেখের পাশে, সাজ্জাদ পারভেজ।
রিফোজি কলোনীর মাছ বিক্রেতা কালু শেখ, যার বয়স হয়েছে, কিন্তু দায়িত্ব থেকে কখনো ছুটি নেননি। দুই সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সংসারে জটিলতা বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদের পর। তার কষ্টের খবর জানতে পেরে সাজ্জাদ পারভেজ ইভেন্ট-৮৪ গ্রুপের মাধ্যমে তাকে ইলিশ ও পাবদা মাছসহ খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন। কালু শেখ স্বস্তি পেয়েছেন এই মানবিক সহায়তায়।
শিশু ফুল বিক্রেতা দুই বোনের পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন, সাজ্জাদ পারভেজ।
বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীতীরবর্তী রসূলপুর বস্তিতে থাকা দুই বোন আমেনা ও মাইমুনা শীতে ফুল বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। তাদের পিতার নিরুদ্দেশ থাকায় আর্থিক সংকট, যার কারণে পড়াশোনাও বন্ধের পথে। সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বিষয়টি জানতে পেরে শিশু দুটিকে কম্বল ও স্কুলে ভর্তি করান। পাশাপাশি পড়াশোনার জন্য স্কুল ড্রেস এবং ফুল বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেন। তিনি বলেন, “ছোট ছোট মেয়ে দুটি শিক্ষার আলো পাবে এটাই আমার প্রত্যাশা।”
নিরুদ্দেশ বাবার সন্তানের পাশে দাঁড়ালেন, সাজ্জাদ পারভেজ।
বরিশাল নগরীর বেলসপার্কে শীতের রাতে পাতলা পোশাকে কাঁপছিলেন চার বছর বয়সী ইব্রাহিম। তাঁর বাবা চার-পাঁচ বছর আগে নিরুদ্দেশ, মা হারিয়ে যাওয়ায় শিশুটি সমাজসেবা কার্যালয়ে ভর্তি করা হয়। সাজ্জাদ পারভেজ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে শিশুটির লেখাপড়াসহ সব খরচ বহন করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
গুলিবিদ্ধ ভ্যানচালক ও মাদ্রাসা ছাত্রের পাশে বরিশাল সমাজ সেবার সহকারী পরিচালক, সাজ্জাদ পারভেজ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হওয়া ভ্যানচালক ইব্রাহীম ও মাদ্রাসার ছাত্র লিমনের আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করেন সাজ্জাদ পারভেজ। পাশাপাশি তাদের চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতায় দ্রুত এগিয়ে আসেন।
সাজ্জাদ পারভেজ :- ১৯৯৭ সালে বরিশাল সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনি ৮৪ ইভেন্ট নামের গ্রুপের মাধ্যমে অসহায় মানুষদের সহায়তা করে যাচ্ছেন। তিনি তিনবার জাতীয় শ্রেষ্ঠ প্রবেশন অফিসার পদক ও ২০২০ সালে শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেছেন। তাঁর সততা, দায়িত্ববোধ এবং মানবিক কাজ বরিশাল সমাজসেবা কার্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করছে প্রতিদিন।
বরিশালের অসহায় মানুষের জন্য সাজ্জাদ পারভেজ এক আলো, যিনি শুধু সরকারি দায়িত্বই পালন করছেন না, বরং অন্তরের গভীর মানবিকতা নিয়ে কাজ করছেন। তার উদ্যোগ ও অক্লান্ত পরিশ্রম সমাজে মানবতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত তাঁর মত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং মানবতা জাগ্রত রাখা।