
নিউজ ডেস্ক :: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার একটি হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন ৪ ভাই। তবে ঘটনার পর ভুক্তভোগীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ওঠে আসে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। একই সঙ্গে এলাকার একটি মসজিদ কমিটির বিরোধকে কেন্দ্র করে স্বাভাবিক মৃত্যুর পরও তড়িঘড়ি করে হত্যা মামলাটি রেকর্ড হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার মামলা রেকর্ডের পরপরই স্থানীয় কয়েকজনের যোগসাজশে তদন্ত কর্মকর্তা ও সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৮ জুন রাতে সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের দেওদিঘী এলাকার দিদারুল আলম (৪৫) মারা যান। এ ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করে ভুক্তভোগীর ভাই মো. শহিদুল ইসলাম। ঘটনার পরপরই ৪ জনকে ধরে নিয়ে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। তারা হলেন- সরওয়ার আজম (৫১), নাজিম উদ্দিন (৩৫), নুরুল আজিম ওরফে বাদশা (৩৪) ও সাইফুল আজম (৪২)। তারা সবাই ওই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে।
হত্যা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৮ জুন দেওদীঘি শাহী জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটিকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ভুক্তভোগীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করা হয়। পরবর্তীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে এদিন রাতে থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী-বিবাদীরা প্রতিবেশী। তাদের মধ্যে মসজিদ কমিটি নিয়ে ঘটনার আগে থেকে বিরোধ চলে আসছিল। ঘটনার দিন রাতে এ বিষয়ে দিদারুল আলমের সঙ্গে বিবাদীদের কথা-কাটাকাটি হয়। এর কিছুক্ষণ পর মারা যায়। এটিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা হিসেবে প্রচার করে কয়েকজন। বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত সুফিয়ান কামাল থানায় গিয়ে হত্যা মামলা রেকর্ডের জন্য তদবির করেন। একই সঙ্গে ঘটনার আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য এলাকায় মানববন্ধন করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুফিয়ান কামাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ওইদিন থানায় গিয়েছিলাম। তবে মামলার জন্য আমি তদবির করিনি।
এদিকে গত ১৬ জুন দিদারুল আলমের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রস্তুত করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. চিন্ময় বড়ুয়া। তিনি মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, Considering the findings of postmortem examination, information obtained from the inquest report, death of the deceased Md didarul Alom was due to irreversible cardio respiratory failure resulting from cardiac arrest which was antemortem & cardio pathlogical in nature, অর্থাৎ ভিকটিম মো. দিদারুল আলমের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার কারণে মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সুমন মুৎসুদ্দি বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করে পুলিশের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে।
চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে গত ২৪ জুন আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সুদীপ্ত রেজা জয়ন্ত। এ বিষয়ে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ময়নাতদন্তে যা পাওয়া গেছে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমি মন্তব্য করতে চাই না।
তড়িঘড়ি করে আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়েও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। পারিপার্শ্বিক সার্বিক বিষয় বিবেচনা নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।