ঢাকারবিবার , ১০ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কাজ শেষের আগেই নদীতে বিলীন ৫শ কোটি টাকার প্রকল্প

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ১০, ২০২৫ ৬:২১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প। প্রতিশ্রুতি ছিল, নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তা ও সরকারি স্থাপনা। কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই মধুমতীর ভাঙনে বিলীন হলো সেই বাঁধ।

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরআজমপুর ও ছাতিয়ারগাতী এলাকায় মধুমতী নদীর ডান তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তদারকিতে নির্মাণাধীন তীর সংরক্ষণ বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে। এতে চরম আতঙ্কে আছেন শতাধিক নদীতীরবর্তী পরিবার।

এ ছাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের দিগনগর ঘাটের পাশে ছাতিয়ারগাতী আকরাম সাহেবের বাড়ির পাশে জিও ডাম্পিং করা ছিল, সিসি ব্লক বসানোর আগেই নদীতে বিলীন হচ্ছে পাকা রাস্তা, বসতবাড়ি। ঝুঁকিতে রয়েছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প।

২০২৩ সালের ৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে মধুমতীর অব্যাহত ভাঙন ঠেকাতে। উদ্দেশ্য ছিল, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার সাড়ে ৭ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ।
এর আওতায় চরআজমপুর এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স লিটন মল্লিক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ব্যয় ধরা হয় ১২ কোটি টাকা। কাজ শুরু হয় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, শেষ হওয়ার কথা ছিল জুনেই; কিন্তু হস্তান্তরের আগেই বাঁধ ধসে পড়ে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প নকশা অনুযায়ী পানির ‘লেয়ার টু লেয়ার লেভেল’ করে অন্তত ৩৫ মিটার গভীর পর্যন্ত কাটিং করে জিও ব্যাগ বসিয়ে তাতে পর্যাপ্ত বালু ভরে ওপরে সিসি ব্লক বসানোর কথা ছিল; কিন্তু বাস্তবে এমনটা হয়নি। লেভেলিং করা হয়নি; বরং লোক দেখানোভাবে মাটি কেটে সামান্য ডাম্পিং করে কাজ চালানো হয়েছে।

জিও ব্যাগে নির্ধারিত জিএসএম মান মানা হয়নি, বালুর পরিমাণ ছিল অপর্যাপ্ত। ফলে নদীর তীব্র স্রোতে ব্যাগ ছিঁড়ে ধসে পড়ে পুরো বাঁধ। স্থানীয়দের দাবি, এ অবহেলাই পুরো প্রকল্পকে নদীতে বিলীন করেছে।

জানা গেছে, অধিকাংশ প্রকল্পের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল প্রয়াত নৌবাহিনী কর্মকর্তা নকীব হোসেনের নকীব গ্রুপ ও ওয়েস্টার্ন গ্রুপ। অথচ মাঠ পর্যায়ে এই গ্রুপ দুটির কোনো কার্যকর উপস্থিতি নেই। প্যাকেজভিত্তিক কাজ ভাগ করে দিয়েছেন অন্তত ২৩ জন সাব-ঠিকাদারের হাতে, যাদের অনেকেই নতুন, অভিজ্ঞতাহীন ও অপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করেছেন। ফলে প্রকল্প শুরু থেকে কাজ হয়েছে ধীরগতিতে, গুণগত মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

চরআজমপুর এলাকার হান্নান শরীফ (৬২) বলেন, বাঁধ হলে নদীভাঙন থেকে বাঁচব ভেবেছিলাম; কিন্তু কাজ শেষ না হতেই ভেঙে পড়ল। এর মানে, কাজটাই ছিল নিম্নমানের।

বাসিন্দা শেফালী বেগম (৫৫) বলেন, দুই মাস আগে ধারদেনা করে ঘর তুলেছি বাঁধের পাশে। এখন বাঁধই নেই। ঘর যাবে, আমরা কোথায় যাব? টগরবন্দ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শাহীন শেখ বলেন, কাজ শেষ হলেও এখনো পাউবোর কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। দ্রুত মেরামত না হলে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে পড়বে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লিটন মল্লিকের ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, অতিরিক্ত স্রোতের কারণে বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, পানি কমলে ব্লক বসিয়ে মেরামত করব।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঠিকাদারকে ধসে যাওয়া অংশ পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ওই প্যাকেজের কাজ অন্যান্য প্যাকেজের তুলনায় ভালো হয়েছে। ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয়।

তবে প্রকৌশলী স্বীকার করেছেন, স্রোতধারার পরিবর্তনের কারণেই বাঁধ ধসের ঘটনা ঘটেছে।