
নিউজ ডেস্ক :: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৫৪০তম সিন্ডিকেট সভার আগে উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা দেন নিয়োগপ্রত্যাশী ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা।
সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রক্টর ও নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় সাড়ে ৭টার দিকে তালা খুলে দেওয়া হয়।
নিয়োগ প্রত্যাশী ওই ছাত্রদল নেতার নাম বুলবুল রহমান। তিনি রাবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। কলা অনুষদের শিক্ষক নিয়োগে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ অমান্য করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখার অভিযোগ তুলে এই তালা দেন তিনি।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ প্রত্যাশী বুলবুল রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী উর্দু বিভাগের ২০২৩ সালের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করেন। যেখানে আবেদনের যোগ্যতা ছিল অনার্স ও মাস্টার্সে পরীক্ষায় সর্বনিম্ন ৩.৫০ সিজিপিএ। কিন্তু, বুলবুল রহমানের মাস্টার্সের ফলাফল সিজিপিএ ৩.৫০ এর উপরে থাকলেও অনার্স পরীক্ষার ফলাফল ছিল সিজিপিএ ৩.৩৫। ফলে, তিনি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন।
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৫ সালে উর্দু বিভাগে ৩ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করলে বুলবুল রহমান সেটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিট পিটিশন নং-৮৮৩৭। হাইকোর্ট গত ১৩ জুলাই হতে ৪ মাসের মধ্যে উক্ত রুল নিষ্পত্তির আদেশ প্রদান করেন।
বুলবুল রহমানের অভিযোগ করে বলেন, কলা অনুষদ হতে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা সিজিপিএ ৩.৫০ রাখা হলে বাণিজ্য অনুষদের ক্ষেত্রে সেটা ৩.৭৫ বা ৩.৮০ সিজিপিএ রাখা উচিত। কারণ বাণিজ্য অনুষদে রেজাল্ট ভালো করা তুলনামূলক সহজ এবং কলা অনুষদের ক্ষেত্রে আবেদনের যোগ্যতা ৩.৫০ সিজিপিএ রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন।
বুলবুল রহমান আরও বলেন, আমি উর্দু বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কে হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলাম। রিটে আমার পক্ষে রায় আসে এবং ৬ মাস শিক্ষক নিয়োগ স্থগিতের আদেশ জারি করে। পরবর্তীতে আমার রিটের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হাইকোর্টে আপিল করে। সেটাতে তাদের পক্ষেও রায় আসে আমার পক্ষেও রায় আসে। সেখানে উল্লেখ আছে, ৪ মাসের মধ্যে পূর্ণ শুনানি করতে হবে। যেহেতু পূর্ণ শুনানি হয়নি, তাহলে শিক্ষক নিয়োগ তো স্থগিত রাখা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটা অমান্য করে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত ভাইভাতে ১৮ জনকে লিখিত পরিক্ষায় টিকানো হয়েছে। এবং ৬ জনকে সিলেকশন করা হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ছিল ৩ জন নেওয়ার কথা। এ বিষয়ে আমি উপউপাচার্য ফরিদ উদ্দিন খান স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করে কথা বলি। তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে ৩ জনের সার্কুলার ছিল এবং ২০২৫ সালে ৩ জনের সার্কুলার হয়।’, এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে আমি ভিসি স্যারের বাস ভবনে তালা দিয়েছি। তার কারণ হলো তারা আইন অবমাননা করে কলা অনুষদের শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে।
রাবি প্রশাসন হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে উর্দু বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে কিনা জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল সেলের প্রশাসক অধ্যাপক আব্দুর রহিম মিয়ার মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
রাবি প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, একজন শিক্ষার্থী নিজেকে ভুক্তভোগী মনে করেছে। গত কিছুদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ডিপার্টমেন্টে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আজকে সেগুলো চূড়ান্ত করার জন্য সিন্ডিকেটের সভা ছিল। আমার ধারণা সে উপাচার্যের বাসভবনে তালা দিয়ে সিন্ডিকেট সভা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছিল যাতে সিন্ডিকেট সভার সদস্যরা আসতে না পারেন। তাঁর কথা হচ্ছে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা তার যোগ্যতা না থাকায় তার বিভাগ হয়তবা তার আবেদনপত্র গ্রহণ করেনি। তিনি মামলাও করেছেন, মামলার শুনানিও হয়েছে। মামলার নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিভাগের নিয়োগের সম্পন্ন করেছে। তিনি চাইলে আবারও আপিল করতে পারেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থীর উপাচার্যের বাসভবনে তালা দেওয়া সমীচীন নয়। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।