ঢাকামঙ্গলবার , ১২ আগস্ট ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মৃ*ত্যু*র ৫৫ মিনিট পর অবন্তিকার ফেসবুক থেকে পোস্ট দিল কে

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ১২, ২০২৫ ৪:২০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিউজ ডেস্ক :: গত বছরের ১৫ মার্চ কুমিল্লার নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা। ওই সময় অবন্তিকার ফেসবুক আইডি থেকে তার মৃত্যুর জন্য সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মান ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। ঘটনাটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। এ ঘটনার মামলায় কুমিল্লা কোতোয়ালি থানা পুলিশ তদন্ত শেষে রোববার আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সুরতহাল অনুসারে মৃত্যুর সময় রাত ৯টা; কিন্তু ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা যায়, রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর ৫৫ মিনিট পর কে এই পোস্ট দিয়েছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। মামলায় আম্মানকে অভিযুক্ত ও দ্বীন ইসলামকে অব্যাহতি দিয়ে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মিজানুর রহমান বলেন, আলোচিত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ১০ আগস্ট আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুর সময় ও পোস্ট দেওয়ার সময়ের মধ্যে ব্যবধান থাকলেও পোস্টদাতাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

চার্জশিটে বলা হয়, ১৫ মার্চ ইফতার শেষে অবন্তিকা নিজ কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করেন। তার মা তাহমিনা বেগম ও ভাই জারিফ জাওয়াদ অপূর্ব বারবার ডাকলেও সাড়া মেলেনি। রাত ৯টার দিকে তাকে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দরজা ভেঙে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সুরতহালে উল্লেখ থাকে, তিনি ব্যক্তিগত কারণে উদ্বিগ্ন ছিলেন।

অবন্তিকার মোবাইল ফোন জব্দ করে সিআইডি ফরেনসিকে পাঠানো হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, তার ফেসবুক আইডি থেকে রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে, যেখানে আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে দায়ী করা হয়। মোবাইলটি মৃত্যুর পর তার কক্ষে ছিল, তখন উপস্থিত ছিলেন মা ও ভাই—তাদের বাইরে আর কেউ ছিলেন না। পোস্টদাতাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ফরেনসিকে অবন্তিকা ও আম্মানের মধ্যে মেসেজ পাওয়া গেলেও দ্বীন ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ মেলেনি।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ময়নাতদন্তে উল্লেখ করা হয়, মৃত্যু শ্বাসরোধজনিত এবং আত্মহত্যার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শরীরে যৌন সহিংসতার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

অবন্তিকা ২০১৭-১৮ সেশনে ভর্তি হলেও বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স একাডেমিতে যান এবং এক বছর পরে ২০১৮-১৯ সেশনে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। জুনিয়রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল না বলে কিছুটা বিষণ্নতায় ভুগতেন। ২০২২ সালের আগস্টে ফেক আইডি খুলে কয়েকজন সহপাঠীর বিরুদ্ধে পোস্ট দেন। আম্মান এ নিয়ে জিডি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ করলে অবন্তিকা দোষ স্বীকার করেন। তৎকালীন প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন এবং দ্বীন ইসলাম ও গৌতম কুমার সাহাকে তদন্তে রাখেন। অবন্তিকা ও তার পরিবার লিখিতভাবে দুঃখ প্রকাশ করলে ১০ শিক্ষার্থীর সম্মতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়।

২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর অবন্তিকা লিখিত অভিযোগে জানান, আম্মান তাকে হয়রানি, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও হুমকি দিচ্ছে। তবে প্রক্টর অফিস কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে তাদের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। আম্মান তার নামে কুৎসা ছড়াতেন, যা অবন্তিকাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। পরে তিনি আত্মহত্যা করেন।

চার্জশিটে বলা হয়, আত্মহত্যায় প্ররোচনায় আম্মানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ মেলেনি। দ্বীন ইসলামকে শুধু পরিবারের অসন্তোষ ও সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে আসামি করা হয়েছিল। তাই তাকে অব্যাহতি দিয়ে আম্মানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

বাদী তাহমিনা বেগম বলেন, মৃত্যুর আগে দেওয়া পোস্টে দ্বীন ইসলামকে দায়ী করা হয়েছে—এটাই বড় প্রমাণ। বারবার অভিযোগ করেও মেয়েকে রক্ষা করতে পারিনি। সঠিক তদন্ত হলে দ্বীন ইসলাম রেহাই পেতেন না। আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

দ্বীন ইসলাম বলেন, আমি নির্দোষ। ২০২২ সালের বিরোধের সময় তদন্ত কমিটিতে ছিলাম, পরে আর অবন্তিকার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। পোস্ট কে দিয়েছে, তা রহস্যজনক। আমি পরিবার নিয়ে বিপর্যস্ত। দ্রুত চাকরিতে ফিরতে চাই এবং অবন্তিকার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আম্মানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।