ঢাকাসোমবার , ১৮ আগস্ট ২০২৫

শেবাচিমে নেই চিকিৎসক, সেবা না পেয়ে রোগী-স্বজনদের বি*ক্ষো*ভ

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
আগস্ট ১৮, ২০২৫ ২:৪৩ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: শেবাচিমে নেই চিকিৎসক, সেবা না পেয়ে রোগী-স্বজনদের বি*ক্ষো*ভ

চিকিৎসকদের উপর হামলার পর এবার  নিরাপত্তা জোরদারের দাবিতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলের (শেবাচিম) বহির্বিভাগ চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। এতে করে বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বিপাকে পড়েছেন। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেছেন রোগী ও স্বজনরা।

সোমবার (১৮ আগস্ট) ভোর থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শেবাচিমের বহির্বিভাগে এই চিত্র দেখা গেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোগী ও স্বজনরা মেডিকেলের সামনের সড়কে অবস্থান নেওয়ার পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে হাসপাতালে ভেতরে নিয়ে আসেন।

বিক্ষুব্ধ রোগী ও স্বজনদের দাবি, ভোর থেকে তারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। টিকিটও কেটেছেন। কিন্তু পরে জানানো হয় চিকিৎসক নেই। এভাবে প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অনেকেই। সাড়ে ১০টার পর থেকে দুই একজন চিকিৎসক বহির্বিভাগে চিকিৎসা দিতে শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে সকাল ১০টার দিকে মেডিকেলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর।

এর আগে চিকিৎসকের উপর হামলা ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা না থাকায় রোববার বিকেল ৩টার পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

এদিকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জানান, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে আমরা গত ১৪ আগস্ট কর্মবিরতিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালক স্যারের অনুরোধ ও রোগীর দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি। এ সময় পরিচালক মহোদয়কে ৪৮ ঘণ্টার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু ১৭ আগস্ট আবার আন্দোলনের নামে দুর্বৃত্তরা মেডিসিন বিভাগের ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলীপ রায় স্যারের উপর অতর্কিত হামলা করে।

এছাড়া হাসপাতালের স্টাফদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে দাবি করে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, হাসপাতাল ভবনকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুরো হাসপাতালে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এই ঘটনায় জড়িতদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় ১৭ আগস্ট বিকেল ৩টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছি।

মূলত এ ঘোষণার দুপুর ২টা থেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন সকল চিকিৎসকরা। এর প্রেক্ষিতে টানা তিন ঘণ্টা চিকিৎসা বঞ্চিত হন রোগীরা। পরে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীরের অনুরোধ ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে বিকেল ৫টা থেকে জরুরি সেবা চালু করা হয়। তবে বিকেল ৩টার পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকাল থেকে বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক আসেনি। এ সময় ভোগান্তিতে পড়েন দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা।

মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, রোববার মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে হাসপাতালের প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের হুমকি দেয়। বেলা ২টার দিকে আমাদের মেডিসিন ইউনিট-২ এর মেডিকেল অফিসার ডা. দিলিপ রায়কে বেদম মারধর করে। চিকিৎসকের উপর এমন নির্যাতন ও হাসপাতালের সামনে তারা অবস্থান নেওয়ায় রোগীরা যেমনি ভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তেমনি আমাদের চিকিৎসকরা কর্মস্থলে নিরাপত্তা না থাকায় ঘটনার পর থেকেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এর কারণে হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। তবে হাসপাতাল পরিচালক স্যারের বিশেষ অনুরোধে ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় এবং মুমূর্ষু রোগীদের স্বার্থে আমরা মিড লেভেল চিকিৎসকরা বিকেল ৫ টার পর থেকে শুধু মাত্র জরুরি সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, ঘটনার পর পরই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা আমার কাছে বিচার চেয়েছেন। তাদের শান্ত হয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসককে মারধর করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় তাদের কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যে কয়েকজন চিকিৎসক এসেছেন তাদের দিয়ে আপাতত জরুরি সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

আন্দোলনের সংগঠক মহিউদ্দিন রনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে দালালদের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন। চিকিৎসক ও স্টাফদের প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। হামলার যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার ও স্বাস্থ্যখাত সংস্কার দাবির যৌক্তিক দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। সোমবারও সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি আছে।