
রবিউল ইসলাম রবি :: কিশোরী প্রেমিকা ও যুবক প্রেমিক সম্পর্কে মামাতো ফুফাতো ভাই-বোন। মাস কয়েক পূর্বে প্রেমের টানে পালিয়েছে দুইজন। মেয়ের মা বাদী হয়ে বাবুগঞ্জ থানায় দায়ের করেন অপহরণ মামলা। পুলিশ পলাতক প্রেমিক-প্রেমিকাকে উদ্ধার করে বরিশাল নগরীর পলাশপুর এলাকা থেকে। পুলিশ মেয়েকে দেয় তার মায়ের জিম্মায় আর ছেলেকে অপহরণ মামলার অনুকূলে আদালতে প্রেরণ করলে বিচারক আসামিকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এদিকে সন্তানকে জেলহাজত থেকে বের করতে তার মা অর্থ জোগাড় করতে বরিশাল আদালত চত্বর সহ মসজিদ মাদ্রাসার সামনে ভিক্ষা শুরু করছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বরিশাল বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভুতেরদিয়া গ্রামের আকন বাড়ি ও তার পার্শ্ববর্তী হাওলাদার বাড়ির মামাতো ফুফাতো ভাই-বোনের প্রেম কাহিনীর মধ্যে দিয়ে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবুগঞ্জ থানার এসআই মফিজুর রহমান বলেন, মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার মা আছিয়া বেগম বাদি হয়ে চলতি বছরের ২৩ জুন একই গ্রামের মাজাহারুল ইসলাম (২১) কে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৫ এবং জিআর নং-৩৬/২৫। তদন্ত চালিয়ে দুই জনকে বরিশাল পলাশপুর এলাকা থেকে আটক ও গ্রেফতার করার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে প্রেমের টানে তারা পালিয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে- বাদির স্বামী ২ বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। তার ২ মেয়ে ১ ছেলে। পারিবারিকভাবে বাদির সাথে আসামির সুসম্পর্ক। আত্মীয়তার সুবাদে একে অপরের বসতঘরে আসা যাওয়া ছিল। গত ১৪/০৬/২৫ তারিখ বিকেলে বাদি তার বড় মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে এই সুযোগে আসামি ঘরে থাকা মেজো মেয়েকে মাহিন্দ্রা গাড়িতে উঠিয়ে জোরপূর্বক নিয়ে যায়। ঘটনার দিন মেয়ের সাথে আসামিও এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়।
এর ভিন্নমত পোষণ করে মাজাহারুল ইসলামের মা মোসা. মাহিনুর বেগম বলেন, আমার ছেলে সাথে ও আমার ফুফাতো ভাই মৃত আলতাফ হোসেনের ১২ বছর বয়সি মেজো মেয়ে একে অপরকে ভালোবাসতো। যা কমবেশি এলাকার সবাই জানে। তাদের প্রেম কাহিনি নিয়ে দুইজনকেই মারধর করা হয়েছে। আমার স্বামী এই ছেলেকে ১ বছর বয়সের সময় ফেলে রেখে চলে গেছে। সংসারে ২ সন্তানের মধ্যে মেয়ের বিবাহ হয়েছে। বিয়ের পর বাবার বাড়িতে পাওয়া ৫ শতাংশ জমির মধ্যে বসতঘরের উপরে পলিথিন ও পাশে কাগজ সহ পুরাতন টিনের বেড়া দিয়ে বসবাস করে আসছি। স্বামী জীবিত না মৃত আছেন তাও জানি না। আমার ছেলে ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করা একটি বাসে হেলপারি করে। আগে আমি অন্যের বাসায় কাজ করে সংসার চালাতাম। বয়স বেড়ে যাবার পাশাপাশি নানা রোগে অসুস্থ হওয়ায় এখন আর অন্যের বাসায় কাজ করতে পারি না। তাই ছেলের আয়ের অর্থে সংসার চলত। এখন ছেলে জেলহাজতে তাই ভিক্ষা করে টাকা যোগার করতেছি। কারণ, ওকিল গো কাছে গেলে আমার ভিক্ষা করা ৫শ ২শ ৩শ করে টাকা নিয়ে যায়। কিন্তু আমার ছেলে জেল থেকে বেড় হয় না। তবে নতুন করে একজন ওকিল পেয়েছি তিনি এখন পর্যন্ত কোন টাকা পয়সা চায়নি।
বাদি আছিয়া বেগম-এর সাথে কথার মিল রেখে তার মেয়ে (ভিকটিম) বলেন, মীরগঞ্জ ঘুরতে নেয়ার কথা বলে অপহরণ করা হয়েছে। উদ্ধারের পর ভিকটিমকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মাজাহারুল ইসলামকে ভালোবাসেন না ভিকটিম কিশোরি। তার ৯ দিন একত্রে ছিলেন। এই কয়দিনে তাকে মাজাহারুল কোনো নির্যাতন করেননি বলে জানান ভিকটিম।
পালিয়ে থাকা ওই প্রেমিক-প্রেমিকা উঠেছিলেন বরিশাল পলাশপুরে বসবাস করা ময়নার (০১৩৩….৮৭) বসতঘরে। ময়না বলেন, মাজাহারুল ইসলামের সাথে আসা মেয়েটি অপহরণ করে আনা হয়েছে এমন ভাব ছিল না। কারণ কিশোরী মেয়েটি ছিল একদম মুক্ত। কিশোরীকে অপহরণ করা হলে সে এখান থেকে পালিয়ে যেতে পারতো। কারণ- ওই মেয়েকে বাসায় রেখে কর্মে চলে যেত মাজাহারুল। আর রাতে মেয়েটি থাকতো আমার সাথে। তবে দিনে ও সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত মাজাহারুল আসা যাওয়া করত। ময়না আরো বলেন, মেয়েটির বয়স কম দেখে আমি প্রশ্ন করেছি তুমি মাজহারুলকে ভালোবাসলেও তোমার তো বিয়ের বয়স হয়নি। তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও। উত্তরে ভিকটিমের জবাব ছিল- আমার বড় বোনকে মা বিক্রি করে ফেলেছে। তার কাছে থাকলে আমার অবস্থাও বড় বোনের মত হবে। আমি মাজহারুলের কাছেই থাকবো। একই সাথে এমন কার্যকলাপের জন্য মাজাহারুলকেও বকা দিতেন ময়না। কারণ, মাজাহারুল বড় বোনের মত সম্মান করতেন ময়নাকে। আর তাদের পরিচয় হয়েছিল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা অবস্থায়।
দক্ষিণ ভুতেরদিয়া গ্রামের বেল্লাল আকনের স্ত্রী কুলছুম বেগম বলেন, মূলত মাজহারুলের সাথে প্রথমে সম্পর্ক ছিল ভিকটিমের বড় বোনের। যে কারণে মেয়েকে ঢাকা সরিয়ে রেখেছিল আছিয়া বেগম। তারপর মেজো মেয়ের সাথে সম্পর্ক হয় মাজহারুলের। এই মেয়ে নিজ ইচ্ছায় পালিয়ে গিয়েছিল। আর মাজাহারুল তার ইনকামের বেশি ভাগ আয় আছিয়া বেগমকে দিত। এই প্রেমের ঘটনা এলাকার সবাই কম বেশি জানে। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে দেয়া হয়েছে অপহরণ মামলা।
মাজাহারুল ইসলামের মা মোসা. মাহিনুর বেগম বলেন, আমার ছেলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে ওই মেয়ের প্রেম ভালোবাসার সব তথ্য ছিল। পুলিশ সেই ফোন থেকে সব তথ্য মুছে ফেলেছে। কারাগারে দেখা করতে গিয়ে ছেলের মুখে এ কথা শুনেছি। আর আমাকে এক পুলিশ একবার বলেছিল, আমাগো কিছু টাকা পয়সা দেবেন না। অন্যদিকে আমার শেষ মাথা গোঁজার ঠাঁই ওই ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে ছেলেকে মুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে অনেকে। পুলিশ এলাকার বা বাড়ির আশেপাশে লোকজনের কথা শুনে তথ্য সংগ্রহ না করে, উল্টো ছেলেকে কীভাবে ফাঁসানো যায় বাদিকে সেই পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কারণ বাদীর টাকা আছে। আর আমার সন্তান জেলহাজতে থাকায় আমি ভিক্ষা করে জীবন যাপন করছি এবং ছেলেকে মুক্ত করার জন্য অর্থ যোগার করছি।