
ফাহিম ফিরোজ :: বরিশাল নগরীর ব্যস্ততম এলাকা কাউনিয়ার বাঁশেরহাটখোলা। এখানেই রয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ মহাশ্মশান, যেখানে সারা বছর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-অর্চনা ও পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় প্রতিদিনই মহাশ্মশান এলাকায় মানুষের ভিড় থাকে। এর সঙ্গে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মিলিত হওয়ায় সারাক্ষণ যানজট লেগে থাকে।
তবে যানজটের মূল ভোগান্তি বাড়িয়েছে বাঁশেরহাট। সড়ক দখল করে বসানো এ হাটের কারণে প্রতিদিনই তীব্র জনদুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে। বাঁশ বোঝাই ট্রলি, ভ্যান ও ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক দখল করে রাখায় অ্যাম্বুলেন্স, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষ আটকে পড়ছেন। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়। এতে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটছে নিয়মিত।
এলাকাবাসী ব্যবসায়ী রানা ও শিক্ষার্থী অন্তি জানান, প্রতিদিন এই পথে চলাচল করা আতঙ্কের বিষয়। হঠাৎ সামনে বাঁশ বোঝাই ভ্যান বা ট্রলি এসে পড়লে দুর্ঘটনা এড়ানো যায় না। কয়েকদিন আগে এক রিকশার যাত্রী বাঁশের গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে গুরুতর আহত হন। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরাও প্রায়ই আহত হচ্ছে।
পথচারীরা অভিযোগ করেন, হাটের কোন কর্মযজ্ঞ নেই, সব কাজই সড়কের উপর করা হয়। বাঁশ কাটা, গাড়িতে তোলা থেকে শুরু করে স্তূপ করে রাখা পর্যন্ত সবকিছু সড়কে হচ্ছে। ফলে যানজট লেগেই থাকে এবং দুর্ঘটনা ঘটে অহরহ। তারা দ্রুত বাঁশেরহাট স্থানান্তরের দাবি জানান।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ১৪৩২ অর্থবছরে বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান ওরফে মনা চার লক্ষাধিক টাকায় বাঁশেরহাটের ইজারা নেন। তবে কর্পোরেশনের হিসাবে হাটের জন্য আনুমানিক মাত্র পাঁচ শতাংশ জমি রয়েছে। সচেতন মহলের মতে, এত ছোট জায়গায় বাঁশেরহাট বসানো সম্ভব নয়। ফলে ইজারাদার সড়ক দখল করে হাট পরিচালনা করছেন, যা সরাসরি জননিরাপত্তার জন্য হুমকি।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাশ্মশান সংলগ্ন বাঁশেরহাটখোলাকে কেন্দ্র করে লাকুটিয়া সড়ক, কাউনিয়া প্রধান সড়ক, বিসিক রোড ও খালপাড় সড়কে তীব্র যানজট ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। বাঁশের হাট সংলগ্ন সড়কেই রয়েছে অটো ও রিকশা স্ট্যান্ড। একই স্থানে যাত্রী উঠছে অটোতে আবার বাঁশ উঠছে ভ্যানে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। সম্প্রতি একটি রিকশা মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হলে যাত্রীরাও গুরুতর আহত হন।
এ বিষয়ে ইজারাদার আব্দুল মান্নান ওরফে মনা বলেন, “বাঁশের হাটের নির্দিষ্ট কোন এরিয়া নেই, পূর্বে যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলছে।” তবে সড়ক দখল ও দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের হাটবাজার শাখা সুপার নুরুল ইসলাম বলেন, “অবশ্যই নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যে বাঁশের হাট পরিচালনা করতে হবে। বাঁশের হাটের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে অভিযোগের ভিত্তিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”