
নিজস্ব প্রতিবেদক :: অনিয়ম-ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসকে কলঙ্কময় ও দুনীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন নাজির তৌহিদুর রশিদ। অনিয়ম-ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির পাহাড়সম অভিযোগ এই নাজির কাম পেস্কার তৌহিদুর রশিদ এর বিরুদ্ধে। শুধু বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসই নয় তার দুর্নীতির আতুরঘর ভোলা সদর সেটেলমেন্ট অফিসও। কেননা ভোলা সদর সেটেলমেন্ট অফিসেও নাজির ও পেসকার এর পদো কর্মরত আছেন। তিনি ভোলা সদর সেটেলমেন্ট অফিসে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকাবস্থায় ভূমি মালিকদের থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আর গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এমনকি ভোলা সেটেলমেন্ট অফিসে কর্মরত থাকাকালীন দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালীন তিনি ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের অভিযোগে যৌথ বাহিনীর হাতে আটকও হয়েছিলেন যা একাধিক টেলিভিশনে প্রচার হয়েছিলো বলে জানাগেছে।
সর্বশেষ বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে ডেপুটেশনে যোগদান করার পরেই শুরু করেন ব্যাপক অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য। এমনকি তার অধিনস্ত কর্মচারীদের থেকেও ঘুষ গ্রহণে পিছ পা হননি তিনি। আর এভাবে অবৈধ ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। সর্বশেষ নাজির তৌহিদুর রশিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, অভিযুক্ত তৌহিদুর রশিদ ভোলা সদর সেটেলমেন্ট অফিসে কর্মরত থাকাবস্থায় ভূমি মালিকদের থেকে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালীন তিনি যৌথবাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ডেপুটেশনে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের নাজির পদে যোগদান করেন। এখানে যোগদান করেও থেমে নেই তার ঘুষবাণিজ্য। নাজির তৌহিদুর রশিদের আওতাধীন উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে অস্থায়ীভাবে কর্মরত নাইটগার্ড ও ঝাড়ুদারদের মাসিক বেতনের সময় ২/৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। আর তাকে এই ঘুষ না দিলে তিনি কর্মচারীদের বেতনের বিল করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও এসব অস্থায়ী কর্মচারীদের দীর্ঘ ৫/৬ মাসের বেতন বকেয়া থাকায় তৌহিদুর রশিদ তাদের বেতন পাইয়ে দেয়ার শর্তে প্রত্যেক কর্মচারীর থেকে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি অফিস সরঞ্জাম ক্রয়ে সরকারি ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে বরিশাল জোনাল অফিসে কর্মরত থাকার পাশাপাশি তিনি ভোলা সদর সেটেলমেন্ট অফিসেরও নাজির-পেসকারের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ ভোলাতে তিনি অফিস না করায় জনসাধারণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আর বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে বসেই মাত্র ১শ টাকার পর্চাতে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আদায় করছেন তিনি। এভাবেই সরকারি চাকরিকে হাতিয়ার বানিয়ে অবৈধ ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে গড়েছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এর মধ্যে রয়েছে নোয়াখালীর লক্ষ্মীপুরে একাধিক বহুতল ভবন, নোয়াখালীর জেলা সদরে অর্ধকোটি টাকার স্টল, চট্টগ্রামে ভবন, ঢাকাতে ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে তার দুর্নীতির থলের বিড়াল।
এদিকে বেতন থেকে টাকা নেয়ার ঘটনায় তৌহিদুর রশিদের বিরুদ্ধে একাধিক ভুক্তভোগী ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার শাস্তির দাবি জানান। এদের মধ্যে নলছিটি উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসের সুমিত কুমার পাইক ও সমিরন, ভান্ডারিয়ার জাহাঙ্গীর হোসেন, নেছারাবাদের ফজলুর রহমান, পিরোজপুরের সুশেন কুমার, আলেকজান বিবি, কাউখালীর শাহাদাৎ হোসেন, মঠবাড়িয়ার মোঃ আলতাফ ও আগৈলঝাড়ার প্রবাত চন্দ্র দে এই ঘুষবাণিজ্যের হোতা নাজির তৌহিদের বিচার দাবি করেন।
তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত তৌহিদুর রশিদ বলেন, আমি ভোলাতে দীর্ঘ বছর কর্মরত ছিলাম এবং বর্তমানেও ভোলা সদর সেটেলমেন্ট অফিসের রেকর্ড কিপারের দায়িত্বে আছি। পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্বে বরিশালে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের নাজির পদে কর্মরত আছি। তবে আমার বিরুদ্ধে করা এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি কারো বেতন থেকে টাকা নেইনা এবং বাড়িও নেই।
এ বিষয়ে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, এ অভিযোগের বিষয় জানা নেই। তিনি লিখিত আকারে অভিযোগ দিতে বলেন এবং এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলেও জানান।