ঢাকাবুধবার , ১৬ অক্টোবর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ধ্বং*সের পথে বরিশালের ঐতিহাসিক স্থাপনা রায়েরকাঠি জমিদারবাড়ি

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
অক্টোবর ১৬, ২০২৪ ৩:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: ধ্বং*সের পথে বরিশালের ঐতিহাসিক স্থাপনা রায়েরকাঠি জমিদারবাড়ি

 

পিরোজপুরের রায়েরকাঠির জমিদার বাড়ি। জেলা শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই রায়েরকাঠি জমিদার বাড়িটি। সাড়ে তিনশো বছরেরও বেশি সময় আগে পিরোজপুরের রায়েরকাঠিতে অপূর্ব নির্মাণশৈলীর এ প্রাসাদ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভাটিয়াল রাজা রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী। বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের অন্যতম পুহটআশছলি্রা্কীও্র্তি্ ও ঐতিহাসিক এই স্থাপনা এখন রায়েরকাঠি রাজবাড়ি কিংবা জমিদার বাড়ি নামেও পরিচিত। সেই আমলে ২০০ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত এই বাড়িতে নির্মাণ করা হয় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০০টি ভবন। তবে চরম অবহেলা ও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ঐতিহাসিক এই রাজবাড়ির মূল্যবান পুরাকীর্তিগুলো এখন ধ্বংস হতে চলেছে।

এই রাজবাড়িটির অবস্থান পিরোজপুর জেলা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার উত্তরে পৌর এলাকার রায়েরকাঠিতে। শহর থেকে রায়েরকাঠির পুলিশ লাইন পেরিয়ে একটু দূরেই ১৬৬৮ সালে নির্মিত হয় কালীমন্দির ও ১১টি মঠ। এর প্রায় ১০০ গজ সামনে রাজবাড়িটি।

এখন ধ্বংসপ্রায় হলেও এখানে থাকা সুউচ্চ মঠ ও মূল বাড়িটির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা। এই বাড়ির অতীত শৌর্যবীর্যের ছবিটি ভেসে ওঠে অনেকের মনে।

স্থানীয়রা জানান, প্রচারের অভাব ও পর্যটন সুবিধা না থাকায় ওই রাজবাড়িটি দেখতে খুব বেশি মানুষ আসেন না। তবে প্রতিদিনই কিছু মানুষ এখানে আসেন। ঘুরে ঘুরে দেখেন সপ্তদশ শতাব্দীর মনোরম নির্মাণশৈলী।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজবাড়ির প্রধান ফটক, রাজাদের বসবাসের বহুতল ভবন, বিচারালয়, কাচারিঘর, জলসাঘর, অন্ধকূপ ভেঙে গেছে। মোগল মন্দিরের নকশায় নির্মিত মঠগুলো ক্ষয়িষ্ণু। মঠের দেয়ালে মাটির অলঙ্করণ ক্ষয়ে গেছে। মঠের গায়ে শেওলা ও লতাপাতা জন্মেছে। নবরত্ন মঠসহ তিনটি মঠের কিছু অংশ ভেঙে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মূল রাজবাড়িটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও কালের সাক্ষী হয়ে আছে কালীমন্দির এবং ৭৫ ফুট উচ্চতার ১১টি মঠ। মনোমুগ্ধকর এসব শৈল্পিক স্থাপনার গায়ে এখন শুধুই অযত্ন-অবহেলার ছাপ।

ইট-সুরকি দিয়ে নিখুঁতভাবে তৈরি করা রাজবাড়ির প্রাসাদ ও কালী মন্দির কালের বিবর্তনে এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে দাড়িয়ে। তবে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ ১১টি মঠ। এর মধ্যে একটি মঠে স্থাপন করা হয়েছে ২৫ মণ ওজনের বিশালাকার একটি শিবলিঙ্গ। কষ্টি পাথরে তৈরি মহামূল্যবান এই শিবলিঙ্গটি উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।

মন্দিরে পুরহিত জানান, সম্রাট জাহাঙ্গীর আমলে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে দুইটি বিশেষ মন্দির রয়েছে। একটি মহাদেবের মন্দির আর একটি কালি মন্দির। মূলত এটি কালিবাড়ি নামে পরিচিত। এখানে যে শিবলিঙ্গ রয়েছে সেটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সব চেয়ে বড় শিবমন্দির। ২০১০ সালে এই কালিমন্দিরটি ইসকনকে দেওয়া হয়। তারপর থেকে এটি ইসকন দেখাশুনো করে।

ইতিহাসে থেকে জানা যায়, একসময় রাজপ্রথা বিলুপ্ত হলে চালু হয় জমিদারি প্রথা। এতে রাজা রুদ্র নারায়ণ রায়ের উত্তরসূরিরা পরিণত হন জমিদারে। ফলে রায়েরকাঠির এই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে কেউ জমিদার বাড়ি কেউ রাজবাড়ি নামেই ডাকেন।

জমিদার পরিবারের উত্তরসূরি অপূর্ব রায় চৌধুরীর কাছ থেকে জানা যায়, অমরেন্দ্র রায় চৌধুরী ছিলেন এই বংশের শেষ জমিদার। বাড়িটির প্রধান ফটক, রাজাদের বসবাসের প্রাসাদ, কাচারি, অতিথিশালা, নাট্যশালা, জলসাঘর, অন্ধকূপ সবকিছুই ধ্বংস হতে চলেছে।

তবে এই জমিদার বাড়িটিকে সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানানো হয়েছে। আশা করি, তারা দ্রুতই জমিদার বাড়িটি সংস্কারের উদ্যোগ নেবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক এইচ এম লাহেল মাহমুদ জানান, পিরোজপুর জেলার ইতিহাস থেকে আমরা জেনেছি, সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে যুবরাজ সেলিম বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাংলায় আসেন। পরে তিনি ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলার কিছু অংশ নিয়ে একটি পরগনা সৃষ্টি করেন। নিজের নামে পরগনার নাম রাখেন সেলিমাবাদ।

১৬১৮ সালে সেলিমাবাদ পরগনার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পান মদন মোহন। ১৬২৮ সালে মদন মোহন তার ছেলে শ্রীনাথের নামে সেলিমাবাদ পরগনার কিছু জমি নেন। শ্রীনাথ ঝালকাঠির লুৎফাবাদ গ্রামে কাচারি স্থাপন করে সেখানেই বসবাস করতেন। পরে মোগল সম্রাট শ্রীনাথকে রাজা উপাধি দেন।১৬৫৮ সালে রাজা শ্রীনাথ রায়ের ছেলে রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী পিরোজপুরের অদূরে বসবাস শুরু করেন। পরে সেখানে তিনি জঙ্গল পরিষ্কার করে রাজবাড়ি ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বন-জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হয় বলেই সেখানকার নামকরণ করা হয় রায়েরকাঠি।