
আসাদুজ্জামান মুরাদ :: শিক্ষা, নীতি-নৈতিকতা আর দ্বীনি আলোর এক ঐতিহ্যবাহী বাতিঘর— বরিশাল সাগরদী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা। কিন্তু সেই সম্মানের মিনারেই এবার আছড়ে পড়েছে চাঞ্চল্যকর দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম এবং কথিত উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ-এর বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে বিস্ফোরক সব অভিযোগ উঠে এসেছে— যা ইতোমধ্যেই শিক্ষা অঙ্গনজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন, মাদ্রাসার তহবিলকে ব্যক্তিগত আয়ের উৎসে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে জবাবদিহিতা নেই, স্বচ্ছতার খাতা শূন্য, আর অর্থের হিসাব অদৃশ্য।
🔍 অভিযোগের সারসংক্ষেপ:
🔹 এক বছর আগে বিভাগীয় কমিশনারের নিয়োগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন মোঃ নজরুল ইসলাম
🔹 দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ও উপাধ্যক্ষ নিজস্ব “অডিট কমিটি” গঠন করে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ
🔹 মাদ্রাসার সরকারি ব্যাংক হিসাব ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত হিসাবের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন
🔹 বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কমিশন/চাঁদা আকারে অর্থ নেওয়া
➡️ লেকচার পাবলিকেশন থেকে ২,৫০,০০০ টাকা
➡️ আল–ফাতাহ প্রকাশনী থেকে ১,৬০,০০০ টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
🔹 শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক পদ-পদবি গোপন ও প্রভাব খাটানোর অভিযোগ
🔹 উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অর্থ উত্তোলন— যার কোনো বাস্তব কাজ দৃশ্যমান নয়
🔹 ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ভীতি সৃষ্টি, অতিরিক্ত টিউশন ফি আরোপ, শিক্ষার পরিবেশ বিপর্যস্ত
🔹 শিক্ষক-কর্মচারীর উপস্থিতি নীতিমালা লঙ্ঘন, পরে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের অভিযোগ
অপরদিকে কথিত উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ-এর বিরুদ্ধেও উঠেছে গুরুতর অভিযোগ—
🔸 মাদ্রাসায় তার নিয়মিত অনুপস্থিতি
🔸 রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ
🔸 উন্নয়ন বরাদ্দে ভাগ-বাটোয়ারা ও ভুয়া বিল প্রস্তুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা
📢 অভিযোগকারীদের ভাষ্য
অভিযোগকারীরা জানান—
> “এখানে শিক্ষা নয়, চলছে টাকা ছাপানোর মেশিন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে, আর প্রতিষ্ঠানের সম্মান মাটিতে নেমে আসছে। আমরা চাই তদন্ত হোক। দোষীদের বিচার হোক।”
তাদের দাবি, দ্রুত উভয় কর্মকর্তাকে অব্যাহতি, আয়ের স্বচ্ছ অডিট এবং দুর্নীতির উচ্চপর্যায়ের তদন্ত করা হোক।
🗣️ অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বক্তব্য
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন—> “অভিযোগকারী মানসিকভাবে অসুস্থ, তাকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে একটি মহল । এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি কোনো অনিয়ম করিনি, অধ্যক্ষের বেতনও নিই না। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। মাদ্রাসার লুটপাট থামাতে চেয়েছি বলেই একটি মহল আমার বিরুদ্ধে লাগলো।” আসলে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোন ভিত্তি নাই ও মিথ্যা অভিযোগ বলে তিনি জানান।
এদিকে অভিযুক্ত কথিত উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি কোন মাদ্রাসার রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটান নেই। তার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়।
✊ জনমনে প্রশ্ন
✅ মাদ্রাসার নামে উঠানো টাকার সঠিক হিসাব কোথায়?
✅ উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ দৃশ্যমান না কেন?
✅ রাজনৈতিক প্রভাব কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনিয়মের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে?
✅ স্বচ্ছ তদন্ত কি আদৌ হবে?
🔚 প্রতিবেদকের মন্তব্য;
ঐতিহ্য, শিক্ষা আর বিশ্বাসের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। তবে এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে ন্যায্য তদন্ত, যথার্থ বিচার আর দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা-ই পারে প্রতিষ্ঠানটির হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে।


