নিজস্ব প্রতিবেদক :: দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পরেই ঝিমিয়ে পড়ে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের লঞ্চ সার্ভিস। ক্রমশ লঞ্চগুলো ভুগতে থাকে যাত্রী সংকটে। আর এতে করে লঞ্চমালিকরাও পড়ে চরম লোকসানে। একপর্যায়ে লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঢাকা-বরিশাল লঞ্চমালিক সমিতির সিদ্ধান্তনুযায়ী ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে শুরু হয় রোটেশন প্রথা। আর এই রোটেশনপ্রথাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার অবৈধভাবে কৃত্রিম ভোগান্তি সৃষ্টি করে একটি চক্র মেতে উঠেছে কেবিন বানিজ্যে।
সূত্রে জানাগেছে, ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে চলমান লঞ্চগুলোতে কর্মরত কিছু অসৎ সুপারভাইজার, করনিক, মাষ্টার, ড্রাইভার, কেবিনবয় ও টার্মিনালের কিছু দালালদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। আর এই সিন্ডিকেটের সদস্য অসৎ সুপারভাইজার, করণিক নামে-বেনামে কেবিন বুকিং দেখিয়ে দালালদের মাধ্যমে ১ হাজার থেকে ২০০০ টাকা বেশিতে কেবিনগুলো বিক্রি করে চলেছে। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে লঞ্চে যাতায়াতকারী সাধারণ যাত্রীবৃন্দ। অনেকে কেবিন না পেয়ে হতাশ হয়ে বেছে নিচ্ছে গাড়ির পথ। ফলে লঞ্চে যাতায়াতের জনপ্রিয়তা দিন দিন হ্রাস পেয়েই যাচ্ছে।
সরেজমিনে গত ১২ অক্টোবর নগরীর একাধিক লঞ্চের কাউন্টারে ১৩ অক্টোবর বরিশাল থেকে ঢাকা যাওয়ার কেবিনের জন্য গেলে কোন কেবিনই পাওয়া যায়নি। অথচ ১৩ অক্টোবর বিকেলেও দালালদের কেবিন প্রতি ১২শ থেকে ২ হাজার বেশি দিয়ে কেবিন পাওয়া গেছে। শান্ত নামে নগরীর এক বাসিন্দা জানান, এক আত্মীয়ের জন্য কেবিন পেতে ২ দিন ঘুরছেন পাননি। তবে ১৩ তারিখ ১২শ টাকা বেশি দিয়ে দালাল থেকে ডাবল একটি কেবিন নেন তিনি। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন ২ দিন ঘুরেও কেবিন পাওয়া যায়নি। অথচ টাকা বেশি দিলে ২ ঘন্টা পূর্বেই কেবিন পাওয়া যায়। এতে করে লঞ্চে যাতায়াতের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে অনেকেই বলেও জানান তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে লঞ্চে কর্মরত এক সুপারভাইজার জানান, আমি একটি কেবিনের জন্য গেলে আমি কেবিনটি পাইনি, অথচ সেই একই লঞ্চে যার জন্য কেবিন আনতে আমি গিয়েছি সেই ব্যক্তিই দালাল থেকে কেবিন নিয়ে ঢাকা যায়। এখন আপনিই বলুন আমার সন্মানটা থাকলো কোথায়?
শুধু লঞ্চে কর্মরতরাই নয় কেবিন বাণিজ্যে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বরিশাল বিআইডব্লিটিএতে কর্মরতরাও। বিআইডব্লিউটিএ ইমপ্লয়িজ ইউনিয়ন বরিশালের এক নেতা বলেন, ১৩ তারিখে একটি কেবিনের জন্য অনেক চেস্টা করেছি কিন্তু পাইনি। পরবর্তীতে আমাদের বিআইডব্লিউটিএর কোঠায় বরাদ্দকৃত একটি কেবিন আনতে যাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই কোঠার কেবিনও নাই। তবে এ ঘটনায় একাধিক লঞ্চের সুপারভাইজারের কাছে জানতে চাইলে তারা কালোবাজারীর অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু যাত্রী সাধারণের প্রশ্ন কেবিনগুলো দালালদের কাছে দিচ্ছেন কারা?
এ বিষয়ে লঞ্চমালিক কর্তৃপক্ষ বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই যাত্রী সংকটে লঞ্চগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। প্রতি ট্রিপে লক্ষাধিক টাকা লোকসান হতে থাকে। এজন্যই রোটেশন প্রথা চালু করা হয়েছে। আর কেবিন কালোবাজারীর ঘটনার সুনির্দিষ্ট কোন প্রমান পেলে এবং ঘটনায় লঞ্চে কর্মরত কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।