
নিউজ ডেস্ক :: আওয়ামী লীগ সরকারের উৎ.খা.তের কারণ উঠে এলো জাতিসংঘের প্রতি.বেদনে
জাতিসংঘের অধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর) বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের প্রথম দিকের ধারাবাহিক ঘটনাবলীর কারণে বিগত সরকার উৎখাত হয়েছে এবং গণঅভ্যুত্থানের শেষ দিনগুলোতে ‘সাময়িকভাবে ভাটা পড়া’ আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা রাস্তায় বিক্ষোভকে পুনরায় উস্কে দিয়েছিল।
ওএইচসিএইচআর রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোটা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত আসতে অনেক দেরি করেছিল এবং সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ বিক্ষোভকারীদের নেতাদের কাছে ‘কুটিল’ বলে মনে হয়েছিল।
এতে বলা হয়েছে, ‘বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিগত সরকার হাইকোর্টের কোটা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দাখিল করে, যা মূলত বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরের দিন সন্ধ্যায় পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এক জনসভায় শিক্ষার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যাশিত ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, ১৬ জুলাই প্রাণহানির জন্য সমবেদনা জানিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে, ‘আমাদের বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সহযোগিতা করেছিল।’
চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘(কিন্তু) প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বিক্ষোভকারী নেতাদের কাছে আন্তরিকতাহীন বলে মনে হয়েছিল।’
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়ে বলেছিল, ‘হাসপাতাল ও জরুরি পরিষেবা খোলা থাকবে, তবে অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে না এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো যানবাহন রাস্তায় চলতে দেওয়া হবে না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব একই সাথে তাদের অনুসারীদের হরতাল সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছিল, যার ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইন, শিক্ষা এবং তথ্য মন্ত্রীদের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের নেতাদের সাথে আলোচনার জন্য মনোনীত করেছিলেন, পাশাপাশি ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এর চলমান প্রচেষ্টাও অব্যাহত ছিল।
এতে বলা হয়েছে, ‘তবে, সেই পর্যায়ে, ছাত্ররা আর আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিল না, কারণ তারা তাদের ওপর এর আগে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার কারণে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান ছিল।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এসব ঘটনা ২০২৪ সালের আগস্টের শুরুতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা উস্কে দিতে অবদান রেখেছিল। নতুন করে জোরদার গণবিক্ষোভ শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।’
ওএইচসিএইচআর উল্লেখ করেছে যে, বিক্ষোভ পুনরায় শুরু হওয়ার পর গণআন্দোলন ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পদত্যাগ’ করার একটি নতুন, একক দাবির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সরকারের প্রতিক্রিয়ায় প্রাণঘাতী অস্ত্রসহ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগ সম্পর্কে আগস্টের শুরুতে একজন ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছিলেন।’
এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছিল। কিন্তু ‘বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের জন্য অফিসার ও সৈন্যদের মধ্যে সমর্থন হ্রাস পাচ্ছিল’। ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি বড় সেনা সভা আহ্বান করেন, যেখানে জুনিয়র অফিসাররা তাকে জানান যে, তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে চান না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন কর্মসূচিতে ৫ আগস্ট ঢাকায় একটি গণমিছিলের পরিকল্পনা করেছিল। ৪ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, যেখানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাসহ অন্যান্যরা অংশগ্রহণ করেন। তারা ঢাকায় গণমিছিল ঠেকাতে পুনরায় কারফিউ আরোপ এবং তা কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি প্রধানদের সাথে দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেনাপ্রধান ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে আশ্বস্ত করেন যে, ঢাকায় সমাবেশ করতে দেয়া যেতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি পরিকল্পনায় তারা সম্মত হয়েছিল যে, ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
এতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট, লাখ লাখ বিক্ষোভকারী ঢাকার কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অনেক স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়, যদিও সেনাবাহিনী ও বিজিবি বেশিরভাগ সময় পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের মিছিল করতে দেয়। তবে, সৈন্যরা অন্তত একবার যেমন যমুনা ফিউচার পার্কে (ঘটনা ৭) গুলি চালিয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সকালে, সেনাপ্রধান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদেরকে তার বাসভবনে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারবে না। দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে দেশ থেকে চলে যান।’
সূত্র : বাসস


