ঢাকামঙ্গলবার , ১৭ জুন ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মেঘনার ভা*ঙ্গ*নে বি*লী*ন হ চ্ছে ভোলা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
জুন ১৭, ২০২৫ ৫:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে ভোলা। ভোলার নদীর ভাঙন একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোলা বাসীর জন্য। আপনারা কে বাঁচান। নদী ভাইঙ্গা আমাগোরে সব শেষ কইরা দিছে। মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে নিজের ভিটেমাটি রক্ষা করার জন্য নদীতীরে দাঁড়িয়ে এভাবেই আর্তনাদ করেছেন ভোলার থেকে বিচ্ছিন্ন কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চর সহ নদীর ভাঙ্গনের কবলিত অসহায় মানুষগুলো ।

সরজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সংলগ্ন মেঘনায় অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন এবং ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল স্রোতে শস্যভাণ্ডার খ্যাত মেঘনা নদী বেষ্টিত সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন মাঝের চর এলাকায় প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গত ১০ দিনের ভাঙনে গৃহহীন হয়ে পড়েছে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। ভেঙে গেছে একটি বাজার, মসজিদ, ২টি মক্তব, হেফজ মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের তীব্রতা এতোই বৃদ্ধি পেয়েছে যে অনেক পরিবার তাদের ঘর সরিয়ে অন্যত্র নেওয়ার সময়ও পাচ্ছেন না। যারা ভাঙন থেকে বসতঘর রক্ষা করতে পারেননি, তারা বসতবাড়ি হারিয়ে নদী পাড়ে বসে আর্তনাদ করছেন। চোখের পলকেই মেঘনা নদীতে বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা।

৫নং প্রজেক্টের অর্ধেক নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এই চরে বসবাসকারী দুই গ্রামের প্রায় ৮ হাজার মানুষের। তবে নদী ভাঙনরোধে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। চরের বাসিন্দা কৃষক লক্ষণ বলেন, নদী আগে অনেক দূরে ছিল। এখন অতিদ্রুত ভাঙছে।

নদী আমাদের বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে গেলো। এখন আমরা কোথায় থাকব? রফি উদ্দিন মিজি বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে আমাদের ঘরের কাছাকাছি আইসা পড়ছে। যেকোনো মুহূর্তে আমাগো ঘরবাড়ি ভাইঙ্গা লইয়া যাইতে পারে। স্থানীয়রা বলেন, নদী এই পর্যন্ত আমাগরে ৭/৮বার ভাঙছে। দেশে আমাগো জায়গা নাই জমি নাই। সরকার যদি আমাগরে নদী ভাঙা থেকে রক্ষা না করে তাহলে আমরা কোথায় যামু? সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আমাদেরকে রক্ষা করুন।

স্থানীয় সমাজ সেবক আবদুল হাই মিঝি, আঃ মান্নান মাস্টার, মামুন কাজীসহ অন্যান্যরা জানান, কাচিয়া ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ড মেঘনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ৯০ দশকে ফের জেগে উঠলে শুরু হয় বসতি। গড়ে ওঠে রামদেবপুর ও মধুপুর গ্রাম। তখন থেকেই সেখানে পুনরায় বসবাস শুরু করেন ভিটেমাটি হারানো মানুষরা। এই চরে রয়েছে ৬টি গুচ্ছগ্রাম, ২টি মুজিব কিল্লা, ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তিনটি মসজিদ, ২ হাজার বসতঘরসহ নানান স্থাপনা। প্রায় ৩ যুগ পর ফের এ চরে ভয়াবহ নদী ভাঙন শুরু হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে বসতিসহ স্থাপনাগুলো।

স্থানীয় জনগন বলেন, বর্ষা মৌসুমে অনেক বেশি পরিবারের মানুষ নদী ভাঙনের হুমকিতে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অসহায় অবস্থা নদীর কূলে বসবাস করে আসছে অনেকেই। তারা জানান, আমরা ভয়ের মধ্যে থাকি কখন নদী এসে সব ভেঙে নিয়ে যায়, রাতেও ঠিকমত ঘুমাতে পারিনা। আজ এখানে আছি তো কাল থাকতো পারবো কি না জানিনা। এদিকে, ইতোমধ্যে বহু পরিবার গৃহহারা হয়ে নিঃস্ব হয়েছে, কেউ আবার ভাঙনের শিকার হয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছেন।

আর তাই ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। মেঘনার ভয়াল ভাঙনের শিকার হয়ে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেক পরিবার বসতঘর হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বসবাস করছে। নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। ভাঙন শুরু হয়েছে অচিরেই এই চরটি মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

তাই অতিদ্রুত জিওব্যাগ বা সিসি ব্লক দিয়ে মাঝেরচরকে মেঘনার ভয়াল ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হবে। কাচিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, মেঘনার ভাঙনে চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে। এছাড়াও তেতুলিয়া, মেঘনার ভাঙ্গনে ভোলার শিবপুর, তজুমুদ্দিনের গুরিন্দা,চরফ্যাশনের বাংলাবাজার এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গনের কবলে পরে অসহায় অবস্থান করছে মানুষ । বাজারের অর্ধেক ভেঙে গেছে।

আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তার নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে এবং ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

পাউবো ডিভিশন ১ নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন আরিফ জানান শিবপুরের আমাদের প্যাকেজ চলমান বালু না পাওয়ার কারনে কাজ সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ করার। মাঝের চরে আমাদের কোন বেরিবাধ নেই যার কারনে কোন কার্যক্রম নেই।