
নিউজ ডেস্ক :: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ভাতশাইল গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা পলাশ হোসেনের (৩৫) মিশ্র ফলবাগানটি যেন সবুজে মোড়ানো। বাগানে গেলে যে কারো মন ভরে উঠবে। আমের মৌসুমে তার বাগানে গাছে গাছে ঝুলছে নানা জাতের দেশি-বিদেশি আম। পলাশের বাগানে আছে বিদেশি ১২ জাতের আম। এসব জাতের মধ্যে আছে আমেরিকার পালমার ও ব্ল্যাক স্টোন, তাইওয়ানের তাইওয়ান রেড, থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই, আম্বিকা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও কিং অব চাকাপাত, জাপানের মিয়াজাকি ও কিউজাই, অস্ট্রেলিয়ার রেড অস্টিন, চীনের নামডকমাই ও ব্রুনাই কিং।
এগুলোর অধিকাংশই আকর্ষণীয় রঙের। রঙিন প্রজাতির এসব আম সুস্বাদু ও রসালো। বাজারে ভালো দামে বিক্রি করা যায়। অনেক চেষ্টা করে বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা সংগ্রহ করে বিদেশি রঙিন জাতের আম চাষ করেছেন তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা। আমের পাশাপাশি বাগানে আছে মাল্টা ও কমলাও।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন পলাশ; কিন্তু চাকরির ধরাবাঁধা নিয়ম তার ভালো লাগত না। একবার কাঙ্ক্ষিত ছুটি না দেওয়ায় বসের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়।
সেদিন চাকরি ছেড়ে দেন। চলে যান গ্রামের বাড়ি। শুরু করেন আম, মাল্টা ও কমলার চাষ। এখন বছরে ফল বিক্রি করে তার আয় ২০ লাখ টাকার বেশি। এছাড়া নার্সারি থেকে চারা বিক্রি করে আরও প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় হয়।
পলাশের বাগানে আছে আমেরিকার পালমার ও ব্ল্যাক স্টোন, তাইওয়ানের তাইওয়ান রেড, থাইল্যান্ডের চিয়াংমাই, আম্বিকা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও কিং অব চাকাপাত, জাপানের মিয়াজাকি ও কিউজাই, অস্ট্রেলিয়ার রেড অস্টিন, চীনের নামডকমাই ও ব্রুনাই কিং।
পলাশের বাগানে চাষ করা বিদেশি জাতের আম সুমিষ্ট ও ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হওয়ায় আশপাশের চাষিরাও এসব জাতের আম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পলাশ তার নিজের ২০ বিঘা জমিজুড়ে গড়ে তোলা বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তার বাগানে সারা বছর দুজন শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়া আমের মৌসুমে দু-তিন মাস ধরে প্রতি দিন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন সেখানে। পলাশের বাগানে আছে জাপানের সুস্বাদু মিয়াজাকি আম।
চাকরি ছেড়ে কৃষিতে ঝুঁকে পড়ার গল্প জানতে চাইলে পলাশ হোসেন বলেন, চাকরি ছেড়ে বাড়ি আসতে আসতে ট্রেনে বসে চিন্তা করি, গ্রামে গিয়ে কী করব? কৃষির প্রতি ছোটবেলা থেকেই একটা ভালোলাগা ছিল। চিন্তা করি, বাড়ি গিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষ শুরু করব। বাড়ি এসে এ কথা পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে বললাম। সবাই আমাকে তিরস্কার করতে থাকলেন। তারা আবার কোনো একটা চাকরিতে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন; কিন্তু আমি আমার লক্ষ্যে স্থির ছিলাম।
পলাশ হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে কলম করা আমের চারা রোপণ করার পরের বছর থেকেই আমের উৎপাদন শুরু হয়। গাছ ছোট থাকায় প্রথম দুই বছর তেমন লাভ হয়নি। তবে ২০২৩ সাল থেকে আমে লাভ আসতে শুরু করে। সিজনে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এ বছর আম বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। বিদেশি আম রপ্তানির জন্য একজন রপ্তানিকারকের সঙ্গে কথা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার দুটি সুপারশপে আমার বাগানের রঙিন আম বিক্রির বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। আমার বাগানে মাল্টার ৮০টি ও কমলার ১৫০টি গাছ আছে। মৌসুমে মাল্টা ও কমলা বিক্রি করে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় হয়। এছাড়া আমার আমের নার্সারি থেকে চারা বিক্রি করে বছরে ৫-৬ লাখ টাকা আয় হয়। এখন আমার এলাকায় নিজের ও কিছু জমি ইজারা নিয়ে বাগানের পরিসর বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।
ফলের বাগান করার জন্য পলাশ ইউটিউবে নানা ভিডিও দেখতে শুরু করেন জানিয়ে পলাশ বলেন, ইউটিউবে ভিডিও দেখে যশোরের আবুল কাশেম নামের এক উদ্যোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তার কাছ থেকে প্রথমে কাটিমন, ব্যানানা ম্যাঙ্গোসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি আমের ২ হাজার চারা সংগ্রহ করেন। আমের পাশাপাশি চায়না-৩ কমলা ও মাল্টার চারা সেখান থেকে সংগ্রহ করে পারিবারিক ২০ বিঘা জমিতে রোপণ করেন। লাভের মুখ দেখায় এখন আর কেউ তাকে তিরস্কার করেন না। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও এলাকার অনেকেই এখন তার কাছ থেকে পরামর্শ নেন। তার নার্সারি থেকে চারা কিনে রঙিন জাতের আমের চাষ শুরু করেছেন।
বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান জানান, পলাশ হোসেন একজন শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তা। চাকরি ছেড়ে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা দেখিয়ে এলাকায় উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি জানেন- কোন জাতের ফল কী পন্থায় চাষ করলে তিনি লাভবান হতে পারবেন।